Image description

খুলনা যেন খুনোখুনির এক ভীতিকর অঞ্চল হয়ে উঠেছে, নদীতে মিলছে একের পর এক লাশ; সন্ধ্যা নামলেই শহর-গ্রাম নির্বিশেষে বাসিন্দাদের মধ্যে ভর করে আতঙ্ক। একদিনে চার খুনের ঘটনাও ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে।

সপ্তাহ খানেক আগে দুপুর হতে না হতেই প্রকাশ্যে আদালতের সামনে দুজনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা আবার বেপরোয়া খুনোখুনির আলোচনাকে সামনে এনেছে। গত ৩০ নভেম্বর দুপুরের ওই দুই খুনের পর রাতেও একজনকে গুলি করে আহত করা হয়েছে।

নগরী ও জেলায় খুন যেমন বেড়েছে, তেমনি নদী থেকে লাশ উদ্ধারের সংখ্যাও চমকে দেওয়ার মত। নগরীর থানাধানী এলাকায় আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে প্রায় ৫০টির মত খুন হয়েছে। জেলায় এ সংখ্যা ৪৫টির বেশি। আর বিভিন্ন নদ-নদী থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে অর্ধশত।

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ৫ অগাস্টের পর সেপ্টেম্বরে নগরীর খানজাহান আলী থানায় প্রথম হত্যার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৪ মাসে নগরীর আটটি থানায় ৪৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে নভেম্বর পর্যন্ত চলতি বছরেই ২৯টি খুন হয়েছে।

মধ্য নভেম্বরের এ পরিসংখ্যানের পর ১৭ নভেম্বর নগরীর লবণচরা থানায় একটি বাসা থেকে এক নারী ও দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

ওই দিনই সন্ধ্যায় নগরীর করিমনগরে একটি বাসায় স্ত্রীর সামনে এক যুবককে গুলি করে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়, যিনি দীর্ঘদিন মাদক মামলায় কারাবন্দি থেকে সম্প্রতি জামিনে বের হয়েছিলেন।

পারিবারিক সহিংসতা, মাদক কারবার, কিশোর গ্যাংয়ের বাড়বাড়ন্ত, লুটের অস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার, নিষিদ্ধঘোষিত ‘চরমপন্থি’ দল এবং পলাতক সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া তৎপরতার পাশাপাশি জামিনে বেরিয়ে আসা দাগি অপরাধীদের কারণে এসব খুনের ঘটনা ঘটছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকারি নিয়ন্ত্রণ রাখতে অনেক পাড়া-মহল্লায় সন্ধ্যার পর অস্ত্রধারীরা নিয়মিত মহড়া দিচ্ছেন। এলাকাভিত্তিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও নিজেদের স্বার্থে এসব গ্রুপের সদস্যদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ফলে সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠছে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণেও হত্যার ঘটনা ঘটছে।

এমন প্রেক্ষাপটে খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলছেন, সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করে গ্রেপ্তার এবং নিয়ন্ত্রণে নানামুখী তৎপরতা চলছে।

 

 

“বিশেষ করে নির্বাচনের সময়ে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।”

অপরাধ বেড়েছে নগরীর বাইরেও পুরো জেলাজুড়েই। পুলিশ সুপার অফিসের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জেলাতেও ৪৫টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৩০ জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। শ্বাসরোধে দুজন এবং পরকীয়া ও পারিবারিক কারণে খুন হয়েছেন চারজন।

পুলিশ বলছে, সবচেয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা রূপসা উপজেলায়। সেখানে গত দুই মাসে পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে চারজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা খুনোখুনি বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্টের পর নগরীর অনেক কুখ্যাত সন্ত্রাসীর জামিনে বেরিয়ে আসার কথা বলছেন। এসব অপরাধী এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া। এতে চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে।

হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্র পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

পুলিশের বর্তমান ও সাবেক দুই কর্মকর্তা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সোর্সকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের ‘সোর্স মানি’ যথাসময়ে দিতে হবে। পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনা ও তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সন্ত্রাসীদের পেছনে কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তানভীর আহমেদ সোহেল মনে করেন, পারিবারিক নৈতিকতা এবং সামাজিক অনুশাসনের অভাব সমাজে সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নজরদারির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা।

 

 

‘পুলিশ আসে লাশ উদ্ধার করতে’

সবশেষ ৩০ নভেম্বর দুপুরে খুলনা জজ আদালতের সামনে গুলি করে ও কুপিয়ে দুজনকে হত্যা করা হয়। সেদিন মধ্যরাতেই নগরীর জিন্নাহপাড়ায় এক যুবককে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়।

নগরীর এক বাসিন্দা ক্ষোভ নিয়ে বলছিলেন, “এত খুনের ঘটনা ঘটলেও গোলাগুলির সময় পুলিশের দেখা পাওয়া যায় না। তারা কাছে থাকলে বরং সরে যায়। পরে লাশ উদ্ধার করতে আসে।”

নগরীতে খুনের মামলার সঠিক তদন্তও হয় না বলে অভিযোগ অনেকের। ফলে সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ে না, গ্রেপ্তার হলেও সহজেই জামিনে বেরিয়ে চলে আসে।

 

 

ভয়-আতঙ্কে পরিবার

পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ১৯৯৯-২০০৬ সাল পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলে চরমপন্থি সংগঠনগুলো বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে একে অপরের ওপর খুনোখুনিতে লিপ্ত হয়। পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) ভেঙে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-জনযুদ্ধ); বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিসহ একাধিক চরমপন্থি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। তারা এখনো সক্রিয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক সংগঠনের আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে এবং তাদের ‘ব্যবহার’ করছে।

দৌলতপুরের স্থানীয়রা বলেন, এলাকায় একসময় ‘চরমপন্থিদের’ দৌরাত্ম ছিল। মাঝখানে কিছুটা কম থাকলেও ৫ অগাস্টের পর তারা নিজেদের আধিপত্য ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে মাদকের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও খুনের প্রধান কারণ।

খুন হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা বলছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মামলার মূল আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় তারা উদ্বেগের মধ্যে আছেন। আসামিরা তাদের ভয় দেখাচ্ছেন; এ নিয়ে তারা আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

আদালতের সামনে ৩০ নভেম্বর খুন হন হাসিব হাওলাদার। কিন্তু তার পরিবার এখনও কোনো মামলা করেনি। সেদিন সেখানে গুলি করে হত্যা করা হয় ফজলে রাব্বি রাজনকে।

হাসিবের ভাই সুমন হাওলাদার বলছিলেন, “কারা হত্যা করেছে, আমরা জানি না। এর ওপর আমরা আতঙ্কে আছি। মারা যাওয়া বড় ভাই ও আমার সন্তানসহ পরিবারের সবার নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।”

“পরিবারে এখন একমাত্র ছেলে আমি। আমাদের ওপর যদি আক্রমণ আসে? তাই আমরা কোনো মামলায় যেতে চাই না। ভাইয়ের হত্যার বিচার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।”

 

 

দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মো. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা খুন হন ১১ জুলাই। মহেশ্বরপাশা এলাকায় বাড়ির ভেতরে প্রথমে গুলি এবং পরে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে তাকে হত্যা করা হয়। মাহাবুবুরের বাবা আবদুল করিম মোল্লা অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন।

করিম মোল্লা বলেন, “এখনো হত্যাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা উৎকণ্ঠায় আছি। আমাদেরকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। ভয়, আতঙ্কে রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারি না।”

দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া খানাবাড়ি এলাকায় আল-আমিন নামে এক ঘের ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করা হয় ৩ অগাস্ট রাতে। নিহতের বড় ভাই আওলাদ হোসেন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।

আওলাদ বলছিলেন, “আমার ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যার অপরাধীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমরা ভয় ও আতঙ্কের ভেতর দিন কাটাচ্ছি।”

দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়া বাজার মসজিদসংলগ্ন বাড়িতে ঘুমের মধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর খুন হন তানভীর হাসান ওরফে শুভ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আবুল বাশার অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।

বাশার বলেন, “এখনো হত্যাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা হতাশ। আমাদেরকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা ভয় ও আতঙ্কে আছি।”

২ নভেম্বর আড়ংঘাটার যোগীপোল বিএনপির কার্যালয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন শেখকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করা হয়। সেটি ‘লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে’ প্রবীণ শিক্ষক ইমদাদুল হক নিহত হন।

নিহতের ছেলে অনিক বলেন, “মাহফিলের টাকা সংগ্রহে গিয়ে আমার বাবা নিহত হন। আব্বুর স্বপ্ন ছিল আমি ডাক্তার হব। এখন আমার লেখাপড়াই চলছে না। আমাদের পরিবারের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। ঘটনার পর থেকে আমরা ভয় ও আতঙ্কে আছি।”

হোতারা আড়ালে?

একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটলেও অপরাধীদের শনাক্ত এবং মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ সক্ষম হয় না। ফলে অপরাধের মূল হোতারা অনেক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, যারা ধরা পড়েন, তাদের অধিকাংশই ‘ভাড়া খাটা’ সন্ত্রাসী। তাদেরকে জামিনে বেরিয়ে আসতেও আড়াল থেকে কাজ করেন মূল অপরাধীরা।

 

অনেক হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ।

খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, “পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডে প্রশিক্ষিত ও পেশাদার লোক জড়িত। ঘটনা ঘটিয়ে তারা পালিয়ে যায়। তারপরও বিভিন্ন এলাকা থেকে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।“

তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। সবার সহযোগিতা ছাড়া পুলিশের পক্ষে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন।”

উপজেলার পরিস্থিতিও খারাপ

জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে খুলনা জেলায় ৪৫টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় চারজন, কুপিয়ে ও গুলি করে ২৬ জন, অজ্ঞাত কারণে ১১ জন, শ্বাসরোধ করে দুজন এবং পরকীয়ার কারণে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।

এছাড়া নৌ-পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের অগাস্ট থেকে ২০২৫ সালের অগাস্ট পর্যন্ত এক বছরে খুলনা অঞ্চলের নদ-নদী থেকে মোট ৫০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ পুরুষ, সাতজন নারী ও ১১টি শিশু। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ২০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

‘প্রশাসনের ব্যর্থতা’ দেখছেন নেতারা

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা মনে করেন, নগরীতে ‘টার্গেট কিলিং’ হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে প্রশাসন ‘চরম ব্যর্থতার’ পরিচয় দিচ্ছে।

“শহরে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের কারণে পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেই। খুন, ছিনতাই, সন্ত্রাস, অবৈধ অস্ত্রের দৌরাত্ম্য- এসব ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পুরো শহর জুড়ে খুন, হামলা, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র প্রদর্শন উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। মানুষ কোথাও নিরাপদ নয়।

দিনের আলোতেও মানুষ আতঙ্কে থাকেন মন্তব্য করে এই রাজনৈতিক নেতা বলেন, “ঘরে-বাইরে, রাস্তায়, এমনকি ঘুমের মাঝেও মানুষ খুন হচ্ছে। অথচ পুলিশ প্রশাসনের কোনও কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙা) আসনের প্রার্থী মুফতি আমানুল্লাহ বলেন, “খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা একাধিকবার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, যা ঘটছে তা উদ্বেগজনক।”

নাগরিক সমাজের উদ্বেগ

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই চিত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান।

তিনি বলেন, “পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। এসব অপরাধের পেছনে আধিপত্য বিস্তার, পূর্ববিরোধ, মাদকসংশ্লিষ্টতা ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ার বিষয়গুলো বড় ভূমিকা রাখছে। সন্ত্রাসীদের মধ্যে এখন আগের মতো ভয় নেই। এতে অস্ত্রের মহড়া ও হত্যাকাণ্ড বেড়েছে।”

একই ধরনের উদ্বেগের কথা জানিয়ে খুলনার সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি কুদরত-ই-খুদা বলেন, “কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ বা সামাজিক সচেতনতা তেমন চোখে পড়ছে না।”

 

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব আইনজীবী বাবুল হাওলাদার বলেন, “অনিরাপদ হয়ে উঠছে খুলনা শহর। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে নৃশংস ঘটনা ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারলে জনমনে আতঙ্ক বাড়ে।”

তিনি বলেন, “নগরের বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং তৈরি হয়েছে। তারা রাতের বেলায় পাড়া-মহল্লায় জড়ো হয়ে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ না নিলে এই পরিস্থিতি সমাজকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে এবং নিরাপত্তাহীনতা বাড়াবে।”

যা বলছে পুলিশ

খুলনা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (সিটিএসবি) ত ম রোকনুজ্জামান বলেন, “৫ অগাস্টের পর অনেকের বাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে। সেগুলো সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। এছাড়া খুলনা অঞ্চলে আগে থেকেই পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আধিপত্য ছিল। তাদের কাছেও কাটা রাইফেলসহ বেশ কিছু অস্ত্র রয়েছে। অন্যদিকে মায়ানমার ও ভারতের সীমান্ত থেকে পাচার হয়ে বিদেশি পিস্তল, রিভলভার আসছে।”

এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সক্রিয় থাকার কথা তুলে ধরেন তিনি।

খুলনার পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করে তাদের গ্রেপ্তার এবং নিয়ন্ত্রণে পুলিশের নানামুখী তৎপরতা চলছে।

“বিশেষ করে নির্বাচনের সময়ে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।”