টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে সংজ্ঞায়িত দুর্নীতি ও দুর্নীতির সহায়তা করার অপরাধে জড়িত ছিলেন। সুতরাং তিনি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন বা আনা অভিযোগে তিনি নির্দোষ এ ধরনের দাবি করার কোনো ভিত্তি নেই।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় এতথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন সাম্প্রতিক সংবাদমাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিক—শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে ও শেখ রেহানার কন্যা—সংক্রান্ত বিচার ও রায়ের বিষয়ে যে প্রশ্ন ও উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে, তা তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)—একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান—দ্বারা দাখিলকৃত সব অভিযোগপত্র ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা করেছি।
মামলার নথিপত্র থেকে দেখা যায়, প্রতিটি মামলাই মূলত অভিযোগ করে যে শেখ হাসিনা (বরখাস্তপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী), তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের সন্তান ও আত্মীয়দের নামে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে টিউলিপ সিদ্দিক জড়িত ছিলেন। একাধিক মামলার মধ্যে একটিতে আরও উল্লেখ আছে যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার খালার দায়িত্বকালেই টিউলিপ সিদ্দিক নিজেও একটি অতিরিক্ত প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং পরিবারের সদস্যরা, যার মধ্যে টিউলিপ সিদ্দিকও আছেন, বিচার এড়াতে দেশত্যাগ করেছেন।
তিনটি মামলার মধ্যে প্রথমটির বিচার শেষ হয়েছে এবং সেখানে টিউলিপ সিদ্দিককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে—তার খালাকে প্রভাবিত করে তার মায়ের এবং ভাই-বোনদের জন্য প্লট সংগ্রহের অপরাধে। স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল নম্বর-৫–এ ২০২৫ সালের স্পেশাল কেস নম্বর ১৮–এর বিচারে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ করে যে, টিউলিপ সিদ্দিক তার খালাকে প্রভাবিত করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ আদায় করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৩২ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে। এদের মধ্যে কয়েকজন শপথ নিয়ে আদালতে সাক্ষ্য দেন যে টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি তার খালার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, নিজের প্রভাব খাটিয়ে সংশ্লিষ্ট প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। তাদের জবানবন্দি এবং মামলার বিভিন্ন পরিস্থিতিগত প্রমাণ—যার মধ্যে টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা এবং তার ভাই-বোনদের নামে বরাদ্দ হওয়া বিভিন্ন প্লট অন্তর্ভুক্ত—প্রমাণ করে যে তিনি শুধু ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হওয়া মামলাই নয়, আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেআইনিভাবে প্লট বরাদ্দে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন। এসব কার্যকলাপ দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫(কা), ২০১, ২১৭, ২১৮, ৪০৯ ও ৪২০ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭–এর ৫(২) ধারায় বর্ণিত অপরাধে সহযোগিতা বা প্ররোচনার শামিল।
এই পরিস্থিতিগত প্রমাণ আরও শক্তিশালী হয় এই তথ্য দিয়ে যে টিউলিপ সিদ্দিক নিজেও একটি প্লট, যা পরবর্তীতে পরিবর্তিত হয়ে খালার ওপর তার প্রভাব অপব্যবহার করে আদায় করেছিলেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এসব প্লট কোনো দূরবর্তী কৃষিজমি নয়; বরং ঢাকা শহরের সবচেয়ে উচ্চমূল্যের অভিজাত এলাকায় অবস্থিত। এগুলোর আয়তনও বড়, যেখানে বহুতল ভবন বা বিলাসবহুল বাসভবন নির্মাণ করা সম্ভব। সরকারি এই জমিগুলো মূলত ঢাকা শহরের জনসংখ্যার চাপ কমাতে গৃহায়ণ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ছিল, কিন্তু সেগুলো বরাদ্দ পেয়েছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনরা—যার ফলে পরিবারভিত্তিক সম্পদ বৃদ্ধির ধারা আরও জোরদার হয়।
এ ছাড়া টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে লন্ডনে একাধিক বাড়ি কেনার বিষয়ও যুক্ত হয়েছে—যা নাকি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা। প্রশ্ন স্বাভাবিক: রাষ্ট্রীয় পদে থাকা ব্যক্তিদের কীভাবে দুই ভিন্ন রাজধানীতে একাধিক সম্পত্তি কেনার মতো অর্থ আসে? আমরা তার কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা শুনতে আগ্রহী ছিলাম, কিন্তু তিনি অনুপস্থিত থাকায় তাকে অনুপস্থিতিতেই বিচার করতে হয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিকের দাবি যে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি—তা সত্য নয়। তাকে আদালতে হাজির হয়ে নিজের বক্তব্য পেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি উপস্থিত হননি এবং আইনজীবী নিয়েও নিজেকে প্রতিনিধিত্ব করাননি।
সামগ্রিকভাবে বিচার করলে দেখা যায়—উপাত্তগুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে সংজ্ঞায়িত দুর্নীতি ও দুর্নীতির সহায়তা করার অপরাধে জড়িত ছিলেন। সুতরাং তিনি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন বা আনা অভিযোগে তিনি নির্দোষ—এ ধরনের দাবি করার কোনো ভিত্তি নেই।