বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গে হঠাৎ করে ট্রাভেল পাসের বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, তারেক রহমান চাইলে এক ঘণ্টার মধ্যে ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হবে। মঙ্গলবার দুপুরেও তিনি বলেছেন, উনি (তারেক রহমান) এখনও ট্রাভেল পাস চাননি। সাধারণ মানুষ মনে করছে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক দেশে আসতে চাইলে তাকে পাসপোর্ট নিতে হয়।
তারেক রহমান বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি পাসপোর্ট পাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পাসপোর্টের পরিবর্তে তাকে ট্রাভেল পাস দিতে চাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে করে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে একটা ‘অনিশ্চয়তা’ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও হাইকমিশনের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি। তবে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত লন্ডনের একাধিক নেতা মনে করছেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তারেক রহমানকে পাসপোর্ট দিতে পারে, এখানে ওয়ানওয়ে ট্রাভেল পাসের বিষয়টি কেন সামনে আনা হচ্ছে তা তাদের বোধগম্য নয়। ‘একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি’ উল্লেখ করে এক নেতা বলেন, এখানে জটিলতা কিসের তার ব্যাখ্যা সরকারকেই দিতে হবে।
তারেক রহমান দেশে ফিরে আসতে চাইলে একদিনেই তাকে ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব হবে বলে গত রোববার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন যে মন্তব্য করেছেন সেটিও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ ট্রাভেল পাসের বিষয়ে উপদেষ্টার মন্তব্য এই ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে, তারেক রহমান এখনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাননি কিংবা নেননি। কারণ সাধারণত পাসপোর্ট না থাকলেই নাগরিকদের দেশে ফেরার জন্য এ ধরনের ট্রাভেল পাস প্রয়োজন হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ১৫ মাস পরে এসে তারেক রহমানের দেশে ফেরার জন্য পাসপোর্টের পরিবর্তে ট্রাভেল পাসের প্রসঙ্গ আসছে কেন- সেটিও অনেকের মধ্যে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে আবারো সেই ট্রাভেল পাসের প্রসঙ্গে বলেছেন, উনি (তারেক রহমান) এখনও ট্রাভেল পাস চাননি। এমনকি তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে সরকার এখানো কিছু জানে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ট্রাভেল পাস চাওয়া মাত্র ইস্যু করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, তারেক রহমানের ঢাকা আসার ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি সরকারকে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তার সদিচ্ছা প্রকাশ করতে গিয়ে এভাবে বলে থাকতে পারেন। তবে আমরা মনে করি ট্রাভেল পাস বা পাসপোর্ট- কোনো কিছু নিয়েই সমস্যা হবে না। কারণ এক্ষেত্রে সরকারেরও সদিচ্ছা আছে। তারেক রহমান বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেয়েছেন কি-না কিংবা চেয়েছেন কি-না অথবা পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ শুধু বলেছেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
গত শনিবার তারেক রহমান তার দেশে ফেরার বিষয়ে ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়’ বলে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার পর তার দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তার আলোচনা শুরু হয়। তখন থেকেই এই প্রশ্ন উঠে যে- কেন দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না তিনি এবং এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে। এর পরপরই গত রোববার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন তারেক রহমানের জন্য ট্রাভেল পাসের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন।
লন্ডন বিএনপি সূত্র জানায়, তারেক রহমান ট্রাভেল পাস নিয়ে বাংলাদেশে ফিরতে চান না। ট্রাভেল পাস সাধারণত ওয়ানওয়ে হয়ে থাকে। তার মানে ট্রাভেল পাস নিয়ে দেশে গেলে তিনি আর ফিরে আসতে পারবেন না। তার মানে তারেক রহমানের দেশে আসা না আসা পুরোটাই নির্ভর করছে সরকারের উপর। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার বিকালে দাবি করেছেন, তারেক রহমানকে যে কোন উপায়ে দেশে ফেরাতে সরকার আন্তরিক এবং বদ্ধপরিকর। তবে জটিলতা কোথায় সে বিষয়ে তিনি কিছু ‘জানেন না’ বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে লন্ডনে বসবাসরত ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, তারেক রহমান কেন দেশে যাচ্ছেন না তা তার ফেসবুক স্টাটাস থেকেই পরিস্কার হয়েছে। ওনার পাসপোর্ট নিয়ে যা বলা হচ্ছে তা সবই রিউমার। আসল ঘটনা হচ্ছে ওনার নিরাপত্তা নিয়ে। তিনি বলেন, উনি ব্রিটিশ সরকারের নাগরিক হোন বা না হোন তা নিয়েও কোন জটিলতা নেই। বরং এ নিয়ে মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। একটা ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে নিজের দেশ ছাড়া পৃথিবীর সব দেশেই ভ্রমণ করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে সরকার ওনাকে পাসপোর্ট দেয়া থেকে সরে এসে কেন ট্রাভেল পাসের বিষয়টিকে সামনে আনছে তা বোধগম্য নয়। সরকার চাইলে ওনাকে যে কোন মুহূর্তে পাসপোর্ট দিতে পারে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা বলেছেন, তারেক রহমানের দেশে আসতে কোন বাধা নেই। বাস্তবতা হলো- কোথাও একটা নীরব ‘বাধা’র সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। যেটা সরকার প্রকাশ করছে না। লন্ডনের আরেকটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, হাসিনা সরকারের আমলেই তারেক রহমান তার পাসপোর্ট রিনিউ করার আবেদন করেছিলেন। সুতরাং এখন তাকে সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে পাসপোর্ট দিতে সময় লাগার কথা নয়। সরকার চাইলেই তার পাসপোর্ট ইস্যু করতে পারে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ঘুরেফিরে ট্রাভেল পাসের বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে- যা রহস্যজনক।