Image description

দশ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ব্যয় করে একটি অত্যাধুনিক শহর গড়ে তুলতে বাংলাদেশ থেকে নির্মাণ উপকরণ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভুটান। প্রস্তাবিত নতুন শহরটির নাম গেলেফু। এটি হবে ভুটানের একমাত্র ‘বায়োডাইভারসিটি টাউন’ যেখানে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে উন্নত ও টেকসই অবকাঠামো তৈরি করা হবে। এই নতুন শহরটির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি আঞ্চলিক বাণিজ্য করিডর গড়ে তোলার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা চলছে। সম্ভাবনা যাচাই করতে দেশটি প্রতিনিধিদল পাঠাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগে ঢাকা সফরে এসে প্রস্তাবিত গেলেফু শহর গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশের সহায়তা চান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফরকালীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে এই নতুন শহর গড়ে তোলার বিষয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গেলেফু নগর নির্মাণে প্রচুর নির্মাণ উপকরণ প্রয়োজন হবে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি উল্লেখ করে নির্মাণ উপকরণগুলো বাংলাদেশ থেকে আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ থেকে ওষুধ, সিরামিক পণ্য, তৈরি পোশাক ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী আমদানিতে ভুটান সরকারের আগ্রহের কথা জানান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা থেকে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো ভুটানের জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি আধুনিক শহর তৈরি করা, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি পর্যটনকে উৎসাহিত করা হবে। বিনিয়োগ ও পর্যটক টানতে কার্যকর করা হবে আন্তর্জাতিক আইন; নিয়োগ দেওয়া হবে ইউরোপীয় মানের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এটিকে আবুধাবির মতো আন্তর্জাতিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে ভুটান।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ভুটানের প্রস্তাবিত টেন বিলিয়ন ডলার সিটি গেলেফুর সঙ্গে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম জেলাকে যুক্ত করে একটি উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য করিডর গড়ে তোলা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। ভুটানের অনুরোধে কুড়িগ্রামে প্রায় ২২০ একর জমিতে যৌথ উদ্যোগে ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার কাজ চলমান আছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে ভুটানের প্রস্তাবিত শহর গেলেফুর করিডর গড়ে উঠলে বিশ্ব বাণিজ্যে নিজেদের আরও সম্পৃক্ত করতে পারবে বলে মনে করছে দেশটি। নির্মাণাধীন ইকোনমিক জোনে প্রয়োজনীয় শ্রমশক্তি সরবরাহের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া গেলেফুর সঙ্গে কুড়িগ্রামের আঞ্চলিক করিডর গড়ে তোলার বিষয়ে সমীক্ষা করতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথাও জানিয়েছেন তিনি। কর্মকর্তারা জানান, ভুটান একমাত্র দেশ যার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (পিটিএ) বা অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। এটিকে ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এফটিএ) বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে রূপান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে ভুটান। পরবর্তী বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ভুটানের প্রস্তাবটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।