আগামী নির্বাচনে কোনো দলই এককভাবে নির্বাচন করছে না। সবাই কোনো না কোনো জোটে ঢুকে যাচ্ছে। যেসব দল এখনো জোটভুক্ত হতে পারেনি সেসব দল এদিক-ওদিক করছে। তবে জোটভুক্ত হলেও দলগুলোকে যার যার মার্কায় ভোট করতে হবে। সব মিলিয়ে এককভাবে ভোট করার প্রস্তুতি নেই কোনো দলের। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি বৃহৎ জোট গড়তে চায়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে যেসব দল তাদের সঙ্গে রাজপথে ছিল তারাই হবে জোটসঙ্গী।
একসময় বিএনপির সঙ্গে রাজপথে আওয়ামী বিরোধী জামায়াতে ইসলামী আগামী নির্বাচন ঘিরে বৃহৎ ঐক্য গড়ছে। বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে আলোচিত রাজনৈতিক দল এখন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। আমার বাংলাদেশ পার্টিসহ কয়েকটি দল নিয়ে নির্বাচনি ঐক্য গঠনের পথে।
বৃহৎ জোট গঠন করবে বিএনপি : আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিএনপির সঙ্গে রাজপথে থাকা দলগুলো নিয়ে বৃহৎ জোট গঠন করতে যাচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে বিএনপি ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করলেও সমমনা দলগুলোর জন্য বেশ কিছু আসন রেখে দেওয়া হয়েছে। সমমনাদের কাকে কোন আসনে প্রার্থী করা যায়, এ নিয়ে বিএনপি এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় দলটির কার্যক্রম এখন দোয়াকেন্দ্রিক সভা-সমাবেশ করছে। বিএনপির সঙ্গে থাকা দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ১২-দলীয় জোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও গণফোরাম। এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি বৃহৎ জোট গঠনের চিন্তা করছে। যাদের সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করেছি এবং একটা বৃহৎ জোটের জন্য আমরা চিন্তা করছি।
আন্দোলনরতদের নিয়ে একক প্রার্থী দেবে জামায়াত : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছু দলের পক্ষে একক প্রার্থী দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে আটটি রাজনৈতিক দল নিয়ে বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে সরব রয়েছে। দলগুলোর এ প্রক্রিয়াকে জামায়াত জোট না বলে নির্বাচনি সমঝোতা বলছে। এই প্রক্রিয়ায় জামায়াতের সঙ্গে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, নেজামে ইসলাম পার্টি। নির্বাচন ঘিরে এই প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতে আরও বেশ কিছু দল তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এই সমঝোতায় সব দলের পক্ষে একজন প্রার্থী থাকবেন।
যুগপৎভাবে ভোট করবে এনসিপি : এদিকে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি কোন জোটে যাচ্ছে, তা নিয়েই চলছে নানা সমীকরণ। এনসিপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে না তারা। বিএনপি ও জামায়াত দুটি দলকেই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা বলছেন, বৃহত্তর স্বার্থে সংস্কারের পক্ষে এবং উদার গণতান্ত্রিক ধারায় যেসব দল বিশ্বাসী তাদেরকেই বেছে নেবে এনসিপি। গত সপ্তাহে এই জোট গঠনের কথা থাকলেও তা ঝুলে যায়। দলটির একাধিক সূত্র জানায় জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে। এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও মিডিয়া সদস্যসচিব খান মুহাম্মদ মোরসালিন বলেন, আমরা কোনো জোট করছি না। আদর্শগতভাবে মিল থাকলে যুগপৎ যাত্রা হতে পারে।
৯ বামপন্থি দলের গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট : ৯টি গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও বামপন্থি রাজনৈতিক দল একযোগে ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ নামে নতুন বৃহত্তর জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এই জোট আগামীতে যুগপৎ আন্দোলনের পাশাপাশি পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সম্মিলিতভাবে অংশ নেবে বলে জানিয়েছে।
২৯ নভেম্বর এই ঘোষণা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদ। জোটে রয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ছয় শরিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও বাসদ (মার্কসবাদী)। শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ এবং প্রয়াত বামপন্থি নেতা পংকজ ভট্টাচার্য প্রতিষ্ঠিত ঐক্য ন্যাপ। এ ছাড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার শরিক চারটি দলের মধ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মাহবুব) নতুন জোটে যুক্ত হতে সম্মতি দিয়েছে।
১৬ দলীয় জোট গড়ছে মঞ্জু-আনিস : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও জাতীয় পার্টি-জাপার একাংশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে নতুন জোট গঠন হচ্ছে। সম্ভাব্য নাম জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট। ১৬টি দল নিয়ে গঠিত এই জোটে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত পাঁচটি। মুখপাত্র করা হচ্ছে জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে। অন্তর্ভুক্ত সব দলের নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করা হচ্ছে লিয়াজোঁ কমিটি। জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটবে ৬ অথবা ডিসেম্বর।
১৫ দলীয় প্রগতিশীল ইসলামী জোটের পুনর্গঠন : নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়ালের নেতৃত্বে ১৫টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে পূর্বগঠিত প্রগতিশীল ইসলামী জোট পুনর্গঠন করা হচ্ছে।
এম এ আউয়াল বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটভুক্তভাবে অংশ নেবে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে জোটকে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। এই জোট ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলেও জানান তিনি।