Image description

নাগরিক সমস্যা সমাধানে ও নগরবাসীর কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ‘সবার ঢাকা’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অ্যাপটি বাস্তবায়নে তখন খরচ হয় ৪ কোটি টাকা। এই অ্যাপ দিয়ে সিটি করপোরেশন এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বলেছিল ডিএনসিসি। এ ছাড়া উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে নাগরিকরা দ্রুত তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন এবং সমাধান পাবেন। অ্যাপটি মেইন্টেন্যান্সের জন্য দেয়া হয়েছিল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানিকে (আইআইএফসি)। প্রতিষ্ঠানটি অ্যাপ উদ্বোধনের পর থেকেই দায়িত্ব পালন করে আসছিল। সরকার বদলের পর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম লাপাত্তা হয়ে গেলে নতুন করে অ্যাপের নিয়ন্ত্রণ পায়নি ডিএনসিসি। অ্যাপের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব হস্তান্তর করেনি মেইন্টেন্যান্সের দায়িত্ব পালন করা প্রতিষ্ঠানটি।  ফলে প্রায় দেড় বছর ধরেই এটি সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে, বরাবরের মতোই আইআইএফসি জানায়, তারা এই অ্যাপের সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছে ডিএনসিসিকে।          

ডিনএনসিসি’র অভিযোগ, চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটি ডিএনসিসিকে অ্যাপটির মেইন্টেন্যান্সের স্বত্ব বুঝিয়ে দেয়নি। এ বিষয়ে বারবার চিঠি দিয়েও ইতিবাচক সাড়া পায়নি ডিএনসিসি। ডিনএনসিসি’র কর্মকর্তারা বলছেন, আইআইএফসি’র কাছ থেকে অ্যাপ নিতে চাইলে তারা অনেকটা গড়িমসি করেছে এবং বারবার কথা বলেও ফেরত পাওয়া যায়নি ওই অ্যাপের নিয়ন্ত্রণ। এর আরও ৬ মাস আগে মানবজমিনের পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করা হলে অ্যাপটি ফিরিয়ে দিতে আইআইএফসি’র গড়িমসির কথাই জানায় সিটি করপোরেশন। ডিএনসিসি’র অভিযোগ অস্বীকার করে আইআইএফসি। প্রতিষ্ঠানটি তখন জানায়, ওই অ্যাপ তারা বুঝিয়ে দিয়েছে। ডিএনসিসি’র কর্মকর্তারা বলছেন, আইআইএফসি হয়তো মনে করছে তারা এটা কষ্ট করে ডেভেলপ করেছে, এখন অন্য একপক্ষ এটাকে নতুন করে চালাবে তারা এটা মানতে পারছে না। এ জন্য তারা দিতে চায়নি। কাজ শেষে এটা বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল সিটি করপোরেশনকে। মেইন্টেন্যান্স বা ভবিষ্যতের ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হবে এমন কিছু বলা হয়নি বলেও জানিয়েছে ডিএনসিসি’র কর্মকর্তারা।      

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ মানবজমিনকে বলেন, ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপটি ফিরিয়ে আনতে অনেক চেষ্টা করেছে সিটি করপোরেশন। অ্যাপটি চালানোর জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা সবকিছু অনেকবার চেয়েছি। কিন্তু মেইন্টেন্যান্সের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত আমাদের কিছুই বুঝিয়ে দেয়নি। তাই এটা সিটি করপোরেশন চালাতে পারছে না এখন। তিনি বলেন, ডিএনসিসি’র আইন শাখাকে বলা হয়েছে এটা নিয়ে আইনি লড়াইয়ের জন্য। তারা পরামর্শ দিলে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবো আমরা। এখানে চুক্তি করার ক্ষেত্রে ফাঁকফোকর থাকতে পারে। যেমন- চুক্তির মেয়াদ কতো দিন, চুক্তি শেষে কী করা হবে, কাগজপত্র কখন কয়দিনের মধ্যে বুঝিয়ে দিতে হবে ইত্যাদির ক্ষেত্রে। মোহাম্মদ এজাজ আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের সবকিছু আবার নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নতুন করে অ্যাপও বানানোর হবে। তবে এবার আর বাইরের কাউকে দেয়া হবে না নিয়ন্ত্রণ। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাহায্য নিয়ে এটা চালানো হবে।    

ওদিকে, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই অ্যাপের কাগজপত্রসহ সকল কিছু অনেক আগেই ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই অ্যাপটি ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আইআইএফসি’র  অতিরিক্ত পরিচালক মুন্সী শহিদ আনিস মানবজমিনকে বলেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আমাদের কাছে যত ডকুমেন্টস এবং যা কিছু আছে সব ডিএনসিসিকে শতভাগ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, এবং তাদের সার্ভারেই সব ইনস্টল করা আছে, সবকিছুর পাসওয়ার্ডও ডিএনসিসিকে দেয়া আছে। আমাদের চুক্তির মেয়াদ আরও তিন বছরে আগেই শেষ হয়েছিল। এরপরও তারা কিছু টেকনিক্যাল সাপোর্ট চেয়েছিল। আমাদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট  টিম আন-অফিসিয়ালি তাদের কিছু সাপোর্ট দিয়ে গেছে। তিন বছর আগেই সবকিছু হস্তান্তর করে দেয়া হয়েছে, এরপরও নতুন করে তারা কিছু ডকুমেন্টস চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। পরে আমাদের কাছে যা ছিল সেটিও আমরা দিয়ে দিয়েছি।  তাদের হয়তো পর্যাপ্ত টেকনিক্যাল টিম নেই, তাই তারা হয়তো বা এখন এটা অপারেট করতে পারছেন না।