Image description

পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। তাকে রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগ দেওয়া অথবা তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল—এ দুই সিদ্ধান্তের যেকোনো একটি নিতে পারে সরকার। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে একাধিক সূত্রে ঢাকাটাইমস নিশ্চিত হয়েছে।

সরকারের একটি স্পর্শকাতর প্রতিবেদনে আইজিপির নাম আসার পরই প্রশাসনের ভেতরে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)-তে দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখা এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে—এমন বিতর্কিত অতীত থাকা একজন কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা কতটা যৌক্তিক।

সততা ও দক্ষতার জন্য পরিচিত হলেও পিলখানা হত্যাকাণ্ড তদন্তে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে গুরুতর মন্তব্য এসেছে। ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সময় বাহারুল আলম ছিলেন এসবি প্রধান। গতবছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০ নভেম্বর তাকে চুক্তিভিত্তিক আইজিপি করা হয়। কিন্তু পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা’র অভিযোগ তুলে তার নাম এসেছে তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে।

স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, তদন্তে পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম এসেছে। তাদের মধ্যে আছেন বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমও। কেন তাদের নাম এসেছে— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণেই তাদের নাম প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।” তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, “তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ জাতির সামনে প্রকাশ করা এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করা এখন সরকারের দায়িত্ব।”

গত রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয়। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির পিলখানা হত্যাযজ্ঞে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৮ জন সেনা সদস্য নৃশংসভাবে হত্যা হন। এ ঘটনায় সাত সদস্যের স্বাধীন জাতীয় কমিশন গঠন করা হয়েছিল গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর।

এই প্রতিবেদকের হাতে আসা তদন্ত প্রতিবেদনের কপি অনুযায়ী, ১৪৬ নম্বর পয়েন্টের 'গ' অংশে পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম রয়েছে। তারা হলো— তৎকালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদ, তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার নাইম আহমেদ, তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি (এসবি প্রধান) বাহারুল আলম, অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দ এবং তার অধীনস্থ তদন্ত দল। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্ত চলাকালে তৎকালীন এসবি প্রধান বাহারুল আলম কমিশনকে অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী দলের কর্মীদের ফাঁসিয়েছেন।

সচিবালয়ে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'মন্ত্রণালয় বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। প্রতিবেদনটি বড়, সব পড়া হয়নি। পড়া হলে রিকমেন্ডেশনগুলো অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে। অনেক ভালো সুপারিশ আছে, তবে পুরোটা না পড়া পর্যন্ত বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, তদন্ত কমিশন তাদের দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ করেছে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কী সিদ্ধান্ত হবে, তা সরকারের এখতিয়ার। “এ নিয়ে আমার ব্যক্তিগতভাবে বলার বা দেখার কিছু নেই”—বলেন তিনি।

এদিকে নিহত সেনা সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আব্দুল হান্নান রাতেই ঢাকাটাইমসকে বলেন, “তদন্তে অনেকের নাম এসেছে। তাদের যেন দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার কার্যকর করা। একইসঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়—এটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।”