পরীক্ষায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের চার নেতাকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নুরুল হাসান তাদেরকে এই নোটিশ দেন। নোটিশে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শোকজ নোটিশ পাওয়া শিক্ষক নেতারা হলেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নোয়াখালী সদরের কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শামছুদ্দীন মাসুদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল কাশেম এবং প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক ও জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মাহবুবার রহমান।
খায়রুন নাহার লিপি এ নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে এ বিষয়ে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। আরেক শিক্ষক নেতা মো. শামছুদ্দীন মাসুদ জানান, প্রাথমিক শিক্ষক নেতাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে ও তিন দফা দাবির সমর্থনে আগামীকাল বুধবার থেকে নতুন কর্মসূচি পালন করবেন তারা। একই সঙ্গে শিক্ষকরা উপজেলা বা থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) অফিসের সামনে অবস্থান নেবেন।
ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নুরুল হাসান স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকটি সংগঠন ৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত ৭ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিগোচর হয় এবং প্রস্তাবিত দাবিসমূহের আলোকে গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানোর জন্য গত ১০ নভেম্বর অর্থ সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ আপনিসহ সহকারী শিক্ষকদের সংগঠন সমূহের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন। এবং দাবি পূরণের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টার আশ্বাস দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ফলশ্রুতিতে গৃহীত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, পরবর্তীতে আপনিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উত্থাপিত দাবি পূরণ করে সরকারকে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য ও উস্কানিমূলক ভিডিও প্রকাশ করতে থাকেন। আপনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকবৃন্দকে ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষা গ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও বক্তব্যসমূহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নজরে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আপনিসহ শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কয়েকদফা আলোচনায় বসেন এবং জানান যে, সরকার তাদের দাবি পূরণের জন্য আন্তরিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে এ ধরণের কর্মসূচি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত করবে এবং অভিভাবক ও সচেতন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, মহাপরিচালকের আশ্বাসের পরও আপনার সংগঠনের পক্ষে আপনিসহ অন্যান্য শিক্ষকমন্ডলী তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষাসহ বিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করতে থাকেন এবং তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু সংখ্যক শিক্ষক কর্মবিরতি পালন করেন; যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সরকারি কর্মচারী হিসেবে এহেন আচরণ সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, ২০১৮ এর সুস্পষ্ট লংখন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বর্ণিত অবস্থায় আপনার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে বিষয়ে আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারীর নিকট ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে বলা হল।
এর আগে গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে খায়রুন নাহার লিপি শাহবাগে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেডে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।