রাজধানীর কদমতলীর জুরাইন এলাকায় পাপ্পু শেখ নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্যমতে, পূর্ব শত্রুতার জেরে শীর্ষ মাদক কারবারিরা তাকে হত্যা করেছে। তবে নিহতের পরিবারের দাবি, ওই মাদক কারবারিদের সঙ্গে পাপ্পু শেখের কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইতোমধ্যে র্যাব-১০ অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। একই সঙ্গে হত্যার পেছনের আসল কারণ ও পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আজ (মঙ্গলবার) দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিহত পাপ্পু শেখের বাবা মন্টু শেখের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলে পেশায় একজন সিএনজিচালক। গতকাল সকালে বাসার পাশেই শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় পাপ্পু। সন্ধ্যায় খবর পাই, কে বা কারা তাকে গুলি করে ফেলে গেছে। পরে আদ-দ্বীন হাসপাতালে 
মন্টু শেখ আরও জানান, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো পূর্ব শত্রুতা ছিল না। আমি কদমতলী থানায় শীর্ষ মাদক কারবারি বাপ্পারাজ, কাঞ্চি উজ্জ্বল ওরফে ফরমা কানচি, শিকদার ইউসুফ ও সেকেন্দারসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছি। আমার ছেলেকে তারা শুধু শুধু গুলি করে হত্যা করেছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে পাপ্পুর বাবা মন্টু শেখ বলেন, আমার দুটোই ছেলে ছিল, এর মধ্যে একটাকে তারা গুলি করে হত্যা করে ফেলল। কোথাও কোনো মারামারি বা গ্যাঞ্জাম লাগলে আমি সিএনজি থেকে নেমে দেখতাম আমার দুই ছেলের কোনো ছেলে আছে কি না। আমার একটা হাত পঙ্গু হয়ে গেল।
ভাই তো চলে গেল, ছেলেটার কী হবে : পাপ্পুর ছোট ভাই হৃদয়
নিহত পাপ্পুর ছোট ভাই হৃদয় বলেন, আমার ভাই সিএনজি চালাত এবং আমি ইন্টারনেট অফিসে কাজ করি। আমরা দুই ভাই ছিলাম, একটা ভাইকে তারা এভাবে গুলি করে মারল।
তিনি আরও জানান, শীর্ষ মাদক কারবারি বাপ্পারাজ হলো আরেক শীর্ষ মাদক কারবারি কানা জব্বারের ছেলে। তারা এলাকায় শীর্ষ মাদক কারবারি নামে পরিচিত। কানা জব্বার গলি বললেই এক নামে সবাই চেনে। আমাদের জানামতে, ওই বাপ্পারাজসহ অন্য কারো সঙ্গে আমার ভাইয়ের কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না।

পাপ্পুর পারিবারিক জীবন প্রসঙ্গে হৃদয় বলেন, চার বছর আগে আমার ভাই জান্নাতুল নামে একজনকে বিয়ে করে। তাদের সাফওয়ান নামে তিন বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। আমার ভাই তো চলে গেল, এখন আমার ভাইয়ের ছেলেটার কী হবে?
সুরতহাল প্রতিবেদনে যা লেখা রয়েছে
কদমতলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, নিহত পাপ্পু শেখের যৌনাঙ্গের ওপরে একটি গুলি লাগে এবং তা পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। এতে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। শরীরের অন্য কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কদমতলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেব কুমার দাস জানান, সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছি— শীর্ষ মাদক কারবারি বাপ্পারাজসহ সাত-আট জনের সঙ্গে পাপ্পুর ধস্তাধস্তি হয়। হয়তো একপর্যায়ে বাপ্পারাজ বা অন্যরা তাকে গুলি করে। পরে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও জানান, মাদক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
মাদক নিয়ে পূর্বের দ্বন্দ্ব থাকতে পারে : পুলিশ
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আইয়ুব। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা পেয়েছি, মাদক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে নিহতের পূর্বে কোনো দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাপ্পারাজসহ মাদক কারবারিরা পাপ্পুকে গুলি করে হত্যা করে। নিহত পাপ্পুর বাবা মন্টুসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
ওসি আরও বলেন, শীর্ষ মাদক কারবারি বাপ্পারাজের বিরুদ্ধে একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে। হত্যায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এদিকে, আজ দুপুরে র্যাব-১০ এক ক্ষুদে বার্তায় পাপ্পু হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়। তবে, এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের থানায় হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ওসি মো. আইয়ুব।
প্রসঙ্গত, গতকাল (সোমবার) কদমতলী থানার জুরাইন এলাকায় শীর্ষ মাদক কারবারি বাপ্পারাজসহ অন্যরা খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে পাপ্পুকে। সিএনজিচালক পাপ্পুর বাড়ি মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার বাসাবাড়ি গ্রামে। বর্তমানে তিনি ও তার পরিবার পূর্ব জুরাইন মিষ্টির দোকানের এক নম্বর গলির রাজ্জাকের বাড়ির ভাড়াটিয়া।