Image description

জাতীয় ঈদগাহের পাশে ফুটপাতের সড়কে নীল রঙের দুটি প্লাস্টিকের ড্রামে খণ্ড-বিখণ্ড অবস্থায় আশরাফুল হকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মূল আসামি তার বন্ধু জরেজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের কথা শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাতে জানিয়েছে পুলিশ।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমে খুদে বার্তা পাঠিয়ে  বলেন, ‘পরকীয়ার জেরে হত্যার পর লাশ কেটে ২৬ টুকরো করা হয়েছে। এ ঘটনার মূলহোতা জরেজুল ইসলামকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’।

এ বিষয়ে শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় ঈদগাহ সংলগ্ন পানির পাম্পের পাশে ফুটপাতের সড়কে নীল রঙের দুটি প্লাস্টিকের ড্রামে খণ্ড-বিখণ্ড লাশটি পাওয়া যায়। পরে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত হয়।

জানা যায়, খুন হওয়া ব্যক্তিটি হলেন রংপুরের বদরগঞ্জের শ্যামপুর গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের পুত্র আশরাফুল হক। তিনি পেশায় কাঁচামালের আমদানিকারক। 

এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আশরাফুলের বোন আনজিনা বেগম। মামলায় আশরাফুলের বন্ধু জরেজুলকে প্রধান আসামি করা হয়। 

আশরাফুলের বাবা আব্দুর রশিদ জানান, ১১ নভেম্বর রাত ৯টায় বন্ধু পাশের গ্রামের জরেজুলকে নিয়ে ঢাকায় যান আশরাফুল হক। জরেজুল মালয়েশিয়ায় থাকতেন। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে আসেন। এরপর জাপানে যাওয়ার জন্য আশরাফুলের কাছে ২০ লাখ টাকা ধার চান তিনি। 

‘ব্যবসার কারণে ঢাকায় অনেকের সঙ্গে আমার ছেলের লেনদেন আছে। সেখান থেকে টাকা নিয়ে জরেজুলকে দিতে তাকেই সঙ্গে নিয়ে যায় আশরাফুল। কিন্তু যাওয়ার পর থেকে আর কোনো কথা হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লাশের খবর আসে। 

আশরাফুলের সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া কন্যা তাসনিম জাহান আসফি বলে, “মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমার বাবা যখন ভাত খান, তখন জরেজুল আংকেল ফোন করেন। ভাত খাওয়া শেষ হলে বাবা আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার কি মন খারাপ’। তখন আমি বলি—‘না’। এরপর বাবা বলেন, ‘আমি জরেজুল আংকেলসহ ঢাকায় যাচ্ছি। দ্রুত আসবো।’ এরপর আর কোনো কথা হয়নি।”

আশরাফুলের স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, স্বামীর সঙ্গে কথা না হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেলে জরেজুলের সঙ্গে কথা বলি আমি। এ সময় আমার স্বামীর মোবাইল ফোন তার কাছে আছে বলে জানান জরেজুল। কিন্তু স্বামী কোথায় সেটি জানাননি। এতে আমার সন্দেহ হয়। এরপর সন্ধ্যায় আমার স্বামীর খণ্ড-বিখণ্ড লাশের খবর পাই। 

এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ‘এ ঘটনায় বাকরুদ্ধ পুরো এলাকাবাসী। সজ্জন মানুষ হিসেবে খ্যাতি ছিল আশরাফুলের। নিজের গ্রাম তো বটেই, পাশের গ্রামেও দান-অনুদান দিতেন। কিন্তু তাকে এভাবে হত্যা করা হবে, সেটা ভাবতেই পারছেন না কেউ। জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানাই।’

শাহানা নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘ঢাকা যাওয়ার আগে ৪০ শতক জমি একটি কওমি মাদরাসার জন্য দান করেন আশরাফুল। মসজিদ কমপ্লেক্সসহ মাদরাসা নির্মাণের জন্য ৫০ হাজার ইট ভাটায় দিয়েও রেখেছিলেন। কথা ছিল তিন তলা মসজিদসহ মাদরাসা হবে। সাইনবোর্ড তোলা হয়েছিল।’