Image description
প্রতি মাসে ৩৩০০ থেকে ৩৫০০ টাকা ধার করতে হয়

ঢাকা কলেজের অনাবাসিক শিক্ষার্থী জামাল রুহানি। আবাসন সংকটে সিট না পাওয়ায় দুই বছর ধরে আজিমপুরের একটি ম্যাচে থাকছেন। সম্প্রতি পরিবার থেকে পাঠানো অর্থের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে শুরু করেন গৃহশিক্ষকতা। এতে যা আয় হয়, তা দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে বন্ধু ও স্বজনদের থেকে ধার করে চলতে হয় তাকে।

জামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দুটি টিউশন করিয়ে প্রতি মাসে ১৩ হাজার টাকা আয় হতো। তাতে কোনোমতে বাসা ভাড়া, খাবার বিল ও পড়াশোনাসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে কষ্ট হয়। মাসের ২০ দিন নিজের টাকায় খরচ চালানো গেলেও শেষ দিকে ধার করে চলতে হয়।

রাজধানীর বাংলা কলেজের অনাবাসিক শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুটি টিউশন করিয়ে মাসে ১৩ হাজার টাকা আয় হয়। এর মধ্য থেকে সিট, বুয়া, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য বিল পরিশোধ করতে হয় ৪৪০০ টাকা। বাকি টাকায় খাবার ও পড়াশোনার খরচ চালাতে প্রতি মাসে বন্ধু বা স্বজনদের থেকে তাকে ধার করতে হয়। এতে প্রতি মাসে অন্তত ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ঋণে থাকেন।

এই গল্প কেবল জামাল ও হাসিবুলের নয়। এটি রাজধানীর অধিকাংশ গৃহশিক্ষকের চিত্র। একদিকে পরিবার থেকে খরচ কমিয়ে দেওয়া অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় গৃহশিক্ষকরা ধার করতে বাধ্য হচ্ছেন।

জানা গেছে, গৃহশিক্ষক রাখার ক্ষেত্রে অভিভাবকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বুয়েটের শিক্ষার্থীদের বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন এবং এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের তুলনামূলক কিছুটা বাড়তি টাকা দিতেও রাজি হন। তবে অন্য সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বড় একটা অংশ রাজধানীর সাত কলেজে পড়াশোনা করছেন। এসব কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালান।  বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার্থীদের একমাত্র লক্ষ্য, যোগ্য ও দক্ষতাসম্পন্ন হওয়া। এর জন্য তাদের যে খরচ হয়, পরিবারের ব্যর্থতায় অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা সেটি নিজেরাই উপার্জন করে থাকেন। তবে বর্তমানে তাদের আয় কমে যাওয়ায় তারা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে। এতে আমাদের আগামী প্রজন্ম সংকটের মুখে পড়ছে।

জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হলে ও হলের বাইরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় ধরনের একটা খরচের পার্থক্য রয়েছে। আবাসিক শিক্ষার্থীদের থাকা, খাওয়া ও ট্রান্সপোর্ট খরচ তুলনামূলক অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের থেকে কম হয়ে থাকে। কিন্তু বাইরে যেসব শিক্ষার্থী থাকেন তাদের থাকার খরচ বাধ্যতামূলক লাগেই। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আয় কমে যাওয়া বড় ধরনের উদ্বেগ। এর থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলোর বিনিয়োগের ক্ষমতা কমে আসায় শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুতর প্রভাব পড়বে। এর জন্য দ্রুতই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।