নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত (ব্যাংক মার্জার) করে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ইসলামী ব্যাংক গঠনের পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
তবে প্রশ্ন উঠেছে ব্যাংক মার্জারের গ্রাহকরা কি পুরনো চেকে লেনদেন ও বর্তমান শাখা থেকে টাকা তুলতে পারবেন? তাদের পুরোনো চেকবই দিয়ে কি টাকা তোলা যাবে? পুরো প্রক্রিয়াটি কীভাবে সম্পন্ন হবে?
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত রাখা এবং ধাপে ধাপে ফেরত নিশ্চিত করা। নতুন ব্যাংকটি শরিয়াহভিত্তিকভাবে পরিচালিত হবে। প্রাথমিকভাবে পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করতে ৩৫ হাজার ২০০ কোটি খরচ হবে। যার মধ্যে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকাই দেবে সরকার।
গত ৫ নভেম্বর বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান। এর আগে ৯ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এ পাঁচটি সংকটাপন্ন ব্যাংক একীভূত করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল।
একীভূত হতে যাওয়া কয়েকটি ব্যাংকে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকরা জানান, নতুন ব্যাংকটি চালু হওয়ার পর মূলধন হিসেবে ২০ হাজার কোটি টাকা যোগ হবে।
তারা আরও বলেন, ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট নতুন ব্যাংকে স্থানান্তরিত হবে, সেখান থেকেই তারা টাকা তুলতে পারবেন।
উদাহরণস্বরূপ, ইউনিয়ন ব্যাংকে কোনো গ্রাহকের ২০ লাখ টাকা থাকলে, নতুন ব্যাংক চালু হওয়ার পর পুরো টাকাই তার অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হবে। এর মধ্যে ২ লাখ টাকা সঙ্গে সঙ্গে তোলা যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একীভূত হতে যাওয়া একটি ব্যাংকের প্রশাসক বলেন, অর্থ এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে পরিশোধ করা হবে এবং এ সময়ের জন্য গ্রাহককে বাজারভিত্তিক মুনাফা প্রদান করা হবে।
বিসমান চেক ব্যবহার করে টাকা তোলার বিষয়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকের আমানতের টাকা নতুন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হবে। তবে আপাতত গ্রাহকরা তাদের নিজ নিজ ব্যাংকের চেকের মাধ্যমেই টাকা তুলতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে এত বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের জন্য নতুন করে চেক ইস্যু করা সম্ভব নয়। তাই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কোনো শাখায় চেক প্রদান করলে সেই ব্যাংকই নতুন ব্যাংকের অধীনে চেকটি অনার করবে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার নতুন ব্যাংকে স্থানান্তরিত করে দেওয়া হবে।
২ লাখ টাকার নিচের আমানতকারীরা আগে টাকা পাবেন
যেসব আমানতকারীর জমা ২ লাখ টাকা বা তার কম, তারা প্রথম ধাপে সম্পূর্ণ অর্থ একবারেই তুলে নিতে পারবেন। এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘আমানত সুরক্ষা তহবিল’ থেকে প্রদান করা হবে। ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগের পরপরই এই ফেরত প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বড় আমানত ধাপে ধাপে ফেরত
যাদের আমানতের পরিমাণ ২ লাখ টাকার বেশি, তাদের বাকি অর্থ ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়া হবে। এ ফেরতের সময়সীমা ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। চূড়ান্ত সময়সীমা বাংলাদেশ ব্যাংক ও নতুন প্রশাসন যৌথভাবে নির্ধারণ করবে।
আমানত ফেরতের সময়সীমা
গভর্নর জানিয়েছেন, চলতি নভেম্বর মাস থেকেই আমানতকারীরা অর্থ তোলা শুরু করতে পারবেন। তারা নিজ নিজ ব্যাংক শাখার মাধ্যমে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন করতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আমানতকারীদের অর্থ পুরোপুরি সুরক্ষিত, তাই কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই। ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক নিবিড়ভাবে তদারকি করবে, যাতে গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যাংকিং সেবা পেতে থাকেন।