সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ডাস্টার দিয়ে ছাত্রীর মাথা ফাটানো সেই প্রধান শিক্ষক ফরুক আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) প্রতিষ্ঠানটির অ্যাডহক কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে, গত সোমবার (৯ নভেম্বর) বিকালে আহত ওই শিক্ষার্থীকে জগন্নাথপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর সহপাঠীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভে নামলে অভিযুক্ত শিক্ষক ফরুক আহমেদকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরকত উল্লাহ সই করা এক চিঠিতে চূড়ান্তভাবে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ৯ নভেম্বর শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীকে ডাস্টার দিয়ে আঘাত করার মাধ্যমে আপনি পেশাগত অসদাচরণ ও প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। আপনার নিয়োগপত্রের ১, ৭ ও ৯ নম্বর শর্ত অনুযায়ী আপনাকে চাকরি থেকে সামরিক বরখাস্ত করা হলো।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির অ্যাডহক কমিটির সভায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, সিলেটের (নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা, ২০২৪ এর ৫৩(৭) অনুচ্ছেদের আলোকে তাকে স্বীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে ফারুক আহমেদ বিধি মোতাবেক খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
গত বুধবার (১২ নভেম্বর) কালবেলা অনলাইনে ‘ডাস্টার দিয়ে পিটিয়ে ছাত্রীকে রক্তাক্ত করলেন প্রধান শিক্ষক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এ ছাড়া এ ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। এতে বিষয়টি নজরে আসে কর্তৃপক্ষের। পরে তদন্তে নামে স্থানীয় প্রশাসন।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, গত রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে শ্রেণিকক্ষ ও বাইরে ছোটাছুটি করছিল শিক্ষার্থীরা। এ সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের শাসন করতে শুরু করে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন। দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সামনের টেবিলে বসে থাকা এক ছাত্রীকে ডাস্টার দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। এতে মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। পরে তিনি টিস্যু দিয়ে রক্ত মুছে দেন। তখনো শিক্ষার্থীকে কান ছাড়তে দেননি ওই শিক্ষক। পরে অন্য একজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে ক্লাসের মেঝেতে পড়ে থাকা রক্ত মুছে ফেলেন।
আহত ছাত্রীর বাবা মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমার মেয়েকে অমানবিকভাবে মারধর করে রক্তাক্ত করেছে প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমেদ। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে জানিয়েছি।’