Image description
 

২১ কারণে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর অধীনে বেআইনি মিটিং-মিছিল করার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জামিন হচ্ছে। এই আইনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশ বিভিন্ন থানায় ৯৭টি মামলা রুজু করে। এসব মামলায় মোট ১ হাজার ১২৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে ৪৭৭ জন জামিন পান বিভিন্ন আদালত থেকে। কী কী কারণে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা জামিন পাচ্ছেন, তার কারণ জানতে ৯৭টি মামলা গবেষণা করে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশের ওই গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে, ৯৭টি মামলায় উচ্চ আদালত থেকেই সবচেয়ে বেশি জামিন পেয়েছেন আসামিরা।

পুলিশের ওই রিপোর্ট বলছে, জামিনপ্রাপ্ত ৪৭৭ আসামির মধ্যে হাইকোর্ট থেকে ৩৩৬ জন (৭০.৪৪%), মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে ১৩৪ জন এবং সিএমম কোর্ট থেকে ৭ জন জামিন পান। প্রতিবেদনে ৬৪৬ জনকে কারাগারে থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।

যে ২১ কারণে ৪৭৭ জন আসামিকে জামিন দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে ১৭৪ জনের জামিনের নথিতে জামিনের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। ৬২ জনের জামিন হয়েছে হাইকোর্টের ক্রিমিনাল মিস কেস অনুযায়ী। এর বাইরে এজহারে নাম নেই এবং হাজতবাস বিবেচনায় ৯৯ জন, অন্তবর্তীকালীন জামিন ৪৩ জনের, ৩৬ জনের জামিন হয়েছে মূল নথি সিআর মিস থাকার কারণে। এ ছাড়া সন্দিগ্ধ আসামি ও দলীয় পদপদবি না থাকার কারণে ১৫ জনের, এজাহারে নাম নেই জেলহাজতে আছে এ কারণে ১১ জনের, নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য নয় এবং পুলিশ রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলে ৬ জনের, বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ ফৌজদারি মিস কেস ৪ জনের, সন্ধিগ্ধ আসামি ৪ জনের, এজাহারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় ৪ জন, আসামি মহিলা হওয়ার কারণে ৩ জন, আসামি অসুস্থ হওয়ায় ৩ জন, আসামির পরীক্ষা থাকায় ২ জন, ঘটনাস্থলে গ্রেপ্তার না হওয়ার কারণে ২ জন, বিজ্ঞ মহানগর আদালত হতে জামিনের আদেশ পাওয়া যায়নি এই কারণে ২ জন, আসামিপক্ষের দাখিলকৃত কাগজপত্রসহ সামগ্রিক দিক বিবেচনায় ২ জন, রাজনৈতিক শত্রুতার বিষয় বিবেচনা করে ২ জন, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হওয়ার কারণে ১ জন, নথি পর্যালোচনায় সন্তোষজনক হওয়ায় ১ জন এবং আসামি শিশু হিসেবে গণ্য হওয়ায় ১ জনের জামিন দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত ৯৭টি মামলা গবেষণার কাজটি করে ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগ। পরে ডিএমপির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত গবেষণা রিপোর্টটি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো হয়। ৯৭ মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, নেতানেত্রী। এ ছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরাও গ্রেপ্তার হন সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায়। গোপন মিটিং এবং ঝটিকা মিছিল করার অপরাধে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেন আমাদের সময়কে জানান, যে কোনো মামলায় আসামিকে জামিন দেওয়া আদালতের এখতিয়ার। পুলিশের কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে কোনো অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছে কিনা, কিংবা কোনো নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে কিনা এ বিষয়টি জানতেই গবেষণাটি করা হয়। যাতে ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সংশোধনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে পুলিশ আইনানুগ দায়িত্ব পালনে আরও সচেতন হতে পারে।

ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলা চার্জশিট হওয়ার পর

সন্ত্রাসবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসে। যে ৪৭৭ জনের জামিন হয়েছে সেটা ট্রাইব্যুনাল থেকে হয়নি। তিনি বলেন, জামিনের আদেশে কেন জামিন দেওয়া হলো তার সুনির্দিষ্ট কারণ থাকার কথা। কারণ উল্লেখ থাকা উচিত।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৩০২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় ও জেলা, উপজেলা, থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। উল্লিখিত একই সময়ে ৩১ হাজার ২৭২ জন জামিনে মুক্ত হন।

গত ১২ মে সরকার সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ধারা ১৮ (১)এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচার, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা গোপন মিটিং এবং ঝটিকা মিছিল অব্যাহত রেখেছে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।