মাত্র ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ হানিফ ফ্লাইওভার পাড়ি দিতে যাত্রীদের ঘণ্টারও বেশি সময় যানজটে বসে থাকতে হচ্ছে। তীব্র যানজটে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী মারা যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। চালক, পুলিশ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুলিস্তানের সড়ক ও ফুটপাতে অবৈধ দখলদারিত্বই এই ভোগান্তির মূল কারণ। তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, আর কতটা ভোগান্তির শিকার হলে টনক নড়বে সরকারের? কবে এই শহর মুক্তি পাবে দুর্বিষহ যানজট থেকে?
রাজধানীতে প্রবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রুটে অবস্থান মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের। ২০১৩ সালে যানজট কমাতে এই ফ্লাইওভার চালু হলেও এখনও তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ দেশের প্রায় ১৪টি লেনের গাড়ি চলাচল করছে এই ফ্লাইওভারের মাত্র দুটি লেন ব্যবহার করে। সেই দুই লেনের অবস্থাও একেবারেরই নাজুক।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল হোক কিংবা বিকেল, যানবাহনের লম্বা সিরিয়াল হানিফ ফ্লাইওভারের প্রায় প্রতিদিনের চিত্র। হানিফ ফ্লাইওভারে সহজে ওঠা গেলেও নামার সময় পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বিশেষ করে গুলিস্তান এলাকায় নামার সময় আর যেন ঘুরতেই চায় গাড়ির চাকা।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন এই ফ্লাইওভারে ৬০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে। ফ্লাইওভারটিতে যখন প্রতি মিনিটে ফ্লাইওভারের ঢাকামুখী লেনে প্রবেশ করে ১০০টির মতো গাড়ি, তখন বের হতে পারছে ৪০ থেকে ৫০টি। এতেই লেগে যাচ্ছে যানজট। চালক ও যাত্রীরা বলছেন, জ্যামের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় ফ্লাইওভারের ওপর। এতে যেমন গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে, তেমনি পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
দীর্ঘ যানজটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মুমূর্ষু রোগীদের প্রাণ যাচ্ছে ফ্লাইওভারেই। অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা বলছেন, যানজটের কারণে রোগী নিয়ে হাসপাতালে সময়মতো পৌঁছানো যায় না; অনেক সময় রোগী রাস্তাতেই মারা যায়।
মূলত গুলিস্তানে সড়ক-ফুটপাতে অবৈধ দখলদারিত্ব, দোকানপাটের কারণে সংকীর্ণ হয়ে গেছে ফ্লাইওভার থেকে নামার পথ। গাড়ি চালকরা অভিযোগ করে বলছেন, ফুটপাত ও অর্ধেক রাস্তা দখল করে বসানো হয়েছে দোকান। এতে রাস্তার জায়গা ছোট হয়ে বাড়াচ্ছে যানজট। ফ্লাইওভারের ঢাল থেকে নেমে গুলিস্তান জিপিও যেতে মিনিট তিনেক সময় লাগলেও জ্যামের কারণে কখনও কখনও ১ ঘণ্টাও লেগে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুলিস্তানের রাস্তা-ফুটপাতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ না হলে ফ্লাইওভারের সুফল মিলবে না। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেন, হানিফ ফ্লাইওভারের কারণে গুলিস্তানের কোনো রাস্তা এখন আর যানজটমুক্ত নয়।
তার মতে, একটি শহরকে ধ্বংস করতে দুটি উপাদান লাগবে-একটি অ্যাটম বোম, আর দুটি ফ্লাইওভার। কারণ ফ্লাইওভার রাস্তার স্থায়ী ক্ষতি করে দেয়; একবার নষ্ট হলে সেটি ভাঙা ছাড়া আর কোনো গতি থাকে না।
এদিকে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ রাস্তা থেকে হকার উচ্ছেদে কঠোর হওয়ার কথা বললেও পরিস্থিতি পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণ ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মো. এনামুল হক জানান, অনেকবার সড়ক থেকে হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে, কিন্তু কিছুদিন পর তারা আবারও এসে দোকান বসাচ্ছে। সড়ক পুনরায় যানমুক্ত করতে নতুন করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।