Image description

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তদের নিক্ষিপ্ত দুই দফা ককটেল বিস্ফোরণের পর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে টিএসসি মোড়ে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

এতে জাহাঙ্গীর আলম চাকলাদার (৪৮) নামে এক পথচারী আহত হন। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি আজিমপুর সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করছেন।

আহত জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি জানান, “টি.এস.সি এলাকা দিয়ে আজিমপুরের বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে পিঠে স্প্লিন্টার লেগে আহত হই।”

ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, “আহতের অবস্থা গুরুতর নয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত ৯টা ২১ মিনিটের দিকে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেটের বিপরীতে একটি চায়ের দোকানের সামনে ককটেল দুটি বিস্ফোরিত হয়। এতে পাশের একটি মোটরসাইকেলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

Demonstration 2

ক্ষতিগ্রস্ত মোটরসাইকেলের মালিক নাজমুস সাকিব বলেন, “আমি পাশে বসে চা খাচ্ছিলাম, হঠাৎ ককটেল ছুটে এসে পড়ে। পরে দেখি বাইকের তেলের ট্যাংক ফেটে গেছে।”

তবে বিস্ফোরণের উৎস নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ ধারণা করছেন উদ্যানের ভেতর থেকে, আবার কেউ বলছেন চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে বিস্ফোরক নিক্ষেপ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দিক থেকে কেউ ককটেল ছুড়েছে। আমরা প্রক্টোরিয়াল টিম পাঠিয়েছি, পুলিশ ইতোমধ্যে উদ্যানে অভিযান চালাচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই চলছে।”

বিস্ফোরণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাতেই টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য ও আশপাশের এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

‘একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জেলে ভর’, ‘খুনি লীগের বিচার চাই’, ‘ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হুঁশিয়ার সাবধান’- এসব স্লোগানে গর্জে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।

বিক্ষোভে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি আবু সাদিক কায়েম বলেন, যারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। প্রশাসনকে বলেছি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নিতে। আজ রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রতিটি পয়েন্টে অবস্থান নেবে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-যুবলীগের উপস্থিতি পেলেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

তিনি আরো বলেন, এটি প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা। পুলিশের কাছে আগাম তথ্য থাকা সত্ত্বেও তারা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে। প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

জাতীয় ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তাহমিদ আল মুদ্দাসিস চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট ও দেশবিরোধী চক্র আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এই হামলা চালিয়েছে। ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চক্রান্তের অংশ এটি।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার শৈথিল্যই এমন ঘটনার মূল কারণ। এক শিক্ষার্থী বলেন, আজ রাসেল টাওয়ারের গেটে কিছু অপরিচিত তরুণ কার্ড চেক করছিল। সাধারণত বিএনসিসি বা স্কাউট সদস্যরা এই দায়িত্বে থাকে। অচেনা ছেলেরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল- যা খুবই সন্দেহজনক।

একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা।

ঘটনার কিছুক্ষণ আগে টিএসসি প্রাঙ্গণে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও ডাকসুর যৌথ উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় আয়োজিত প্রদর্শনীতে ১২টি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।

উপস্থাপক ও শিক্ষার্থী রিয়াদুল ইসলাম যুবাহ বলেন, অনুষ্ঠান চলাকালে লীগের সন্ত্রাসীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। তবুও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পন্ন করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, এবং শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান আফফান। বক্তারা পতিত ফ্যাসিস্ট শাসনের বিচার, শেখ হাসিনার ফাঁসি, এবং ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।