Image description

জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিনই গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে গণভোটের প্রচলিত কাঠামো পরিবর্তন করে একটির পরিবর্তে চারটি প্রশ্ন রাখা হতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি পূরণের পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মধ্যেই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। এতে সব পক্ষকে ছাড় দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত মানার বার্তা দেওয়া হয়েছে। তবে দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকারকে ফিরতি কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি।

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের যৌক্তিক সময় না থাকায় সে নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন গণভোট অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে ভারসাম্য রেখে সমাধানের পথ বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রচলিত গণভোটের কাঠামো পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে কয়েকটি সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছে। সাধারণত গণভোটে একটি প্রশ্নের ওপর হ্যাঁ বা না ভোটের ব্যবস্থা থাকে। তবে আগামী গণভোটে চারটি প্রশ্নে হ্যাঁ বা না ভোটের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

প্রথম প্রশ্নে থাকবে- যেসব বিষয়ে সবদল একমত হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হবে কি হবে না। দ্বিতীয় প্রশ্ন থাকবে পিআর পদ্ধতি নিয়ে। তৃতীয় প্রশ্নে থাকতে পারে নোট অব ডিসেন্টসহ সনদ বাস্তবায়ন হবে কি না। শেষ প্রশ্নে রাখা হতে পারে- নোট অব ডিসেন্ট ছাড়া সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে না বিপক্ষে।

গতকাল জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে বড় দলগুলো তাদের অনড় অবস্থানের কথা আবারও স্পষ্ট করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে গণভোট আগে হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা এখন নেই, সময় নেই। তা ছাড়া প্রয়োজনও নেই। কারণ একই দিনে অর্থাৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে যদি আমরা একটা ছোট ব্যালটে এই গণসম্মতিটা নিতে পারি, সেটাই হবে সবচাইতে যৌক্তিক, প্রাসঙ্গিক, গ্রহণযোগ্য এবং অতিরিক্ত ব্যয় হবে না।

ঠিক বিপরীতমুখী অবস্থান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলাম। দলটি আলটিমেটাম দিয়ে বলেছে- জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তিসহ পাঁচ দফা দাবি আগামী ১৬ নভেম্বরের মধ্যে মেনে না নিলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে আন্দোলনরত আট দল। জুলাই সনদের অপর স্টেকহোল্ডার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনের আগে গণভোট ও বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট বাদ দেওয়ার পক্ষে শক্ত অবস্থানে আছে। ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ থাকায় নেতৃত্ব দেওয়া দলগুলোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিচ্ছে। তাদের পক্ষ থেকে আলাদা কোন বক্তব্য বা অবস্থান জানানো হচ্ছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে সবদিকে ভারসাম্য রক্ষা করে সিদ্ধান্ত দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এ অবস্থায় সরকার শিগগিরই তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছে কয়েকজন উপদেষ্টা। দলগুলোর পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে। সরকারের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিন নানা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গেও সরকার যোগাযোগ করেছে। তাদের ব্যক্তিগত অভিমত জানতে চেয়েছে। তার মতে-জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে বলে মনে করছে সরকার। তবে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেবে না, যাতে কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ আসে। বরং দলগুলোর অবস্থানকে সমন্বয় করা হবে। সরকার সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আদেশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

আদেশে স্বাক্ষর করতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, উপদেষ্টা পরিষদে বিভিন্ন পর্যায়ে এটা আলোচনা করছি এবং আমরা চেষ্টা করছি সব দলের প্রত্যাশার মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সে ধরনের পদক্ষেপই নিতে যাচ্ছি।

সরকার জুলাই সনদ নিয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে সে বিষয়ে এখনো অবগত নন বলে দাবি করেছেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তারা জানান, সরকার কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দলীয় অবস্থান কী হতে পারে তা নিয়ে গত কয়েক দিনে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। এখন অপেক্ষা করছি সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি বা অবস্থান নেওয়া হবে। দলগুলোর মতে-সরকার দলগুলোর রাজনৈতিক অবস্থান নিশ্চয় অনুধাবন করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে। কারণ জুলাই আন্দোলনে গঠিত এ সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলো সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। 

বিএনপির মিত্র দল হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না যাতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়। সরকার পর্দার অন্তরালে আলাপ-আলোচনা করেই একটি সুষ্ঠু সমাধান দেবে বলে আশা করি। একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ বিষয়ে সরকারকে খুবই দুরদর্শিতা ও সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গণভোট নিয়ে চারটি প্রশ্ন রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এটা দলগুলো কীভাবে নেবে তা কয়েক দিনের মধ্যে স্পষ্ট হবে বলে প্রত্যাশা করি।   

সংস্কারের মাধ্যমে সুশাসন, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ করার উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমনের ব্যবস্থায় সংস্কারের সুপারিশ দেওয়ার জন্য ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এসব সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। ৩০টি দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে সংবিধানসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কারের সুপারিশ নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি করা হয়। ৮৪টি প্রস্তাব নিয়ে তৈরি জুলাই জাতীয় সনদে ইতোমধ্যে ২৬টি দল ও জোট সই করেছে। তারা সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে।