Image description
বাস্তবে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ
► ‘এক জেলা এক পণ্য’ উদ্যোগ পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়ার পর গত বছরের শুরুতে রপ্তানি বহুমুখীকরণে ‘এক গ্রাম এক পণ্য’-এর গল্প নিয়ে আসে ইপিবি 
► অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতি সংস্কারে ঢাকঢোল পেটালেও রপ্তানি খাতের উন্নয়নে গত ১৫ মাসে একটি উদ্যোগও গ্রহণ করতে পারেনি

বিভিন্ন সময়ের সরকার রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণে লম্বা লম্বা গল্প শোনালেও বাস্তবে এর জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকারই। এজন্য প্রায় ১৭ বছর আগে ‘এক জেলা এক পণ্য’ ধারণাকে সামনে রেখে একটি উদ্যাগ নেওয়া হয়েছিল। সে উদ্যোগ বাস্তবায়নে পাইলটিংভাবে কয়েকটি জেলায় বিশেষ পণ্যের খোঁজও করা হয়েছিল কিন্তু বাস্তবে এর কোনো সফলতা পাওয়া যায়নি। সবশেষ গত বছরের এপ্রিলে ‘এক গ্রাম এক পণ্য’ ধারণা নিয়ে রপ্তানি বহুমুখীকরণের নতুন গল্প সামনে এনেছিল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তার মাত্র তিন মাসের মাথায় পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। এতে বন্ধ হয়ে যায় সেই আলোচনা। যা আজও আর আলোর মুখ দেখেনি।

অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতির সংস্কারে ঢাকাঢোল পেটালেও রপ্তানি খাতের উন্নয়নে গত ১৫ মাসে নতুন একটি উদ্যোগও গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে যুগের পর যুগের সরকারেরা নানা গালগল্প শোনালেও রপ্তানি বহুমুখীকরণ হয়নি স্বাধীনতার ৫৫ বছর পরও। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় ১২৫টি পণ্য থাকলেও তৈরি পোশাক এবং এ খাতসংশ্লিষ্ট পণ্য থেকে আসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশের মতো। অবশিষ্ট শীর্ষ ১০টি পণ্য থেকে আসে প্রায় ৮ শতাংশের মতো রপ্তানি আয়। এর বাইরে শতাধিক পণ্য রপ্তানি হয় খুবই সামান্য পরিমাণে। বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ইপিবি পণ্যের বহুমুখীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।

জানা গেছে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য ১৭ বছর আগে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর নেওয়া এক জেলা এক পণ্য উদ্যোগটি মোটামুটি ব্যর্থ হওয়ার পর সেই ব্যর্থতার কারণ না খুঁজে এবার হাতে নেওয়া হয়েছে ‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ নামে নতুন উদ্যোগ। এক বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এ উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই পরীক্ষামূলক উদ্যোগের অংশ হিসেবে গ্রামওয়ারি পণ্য নির্বাচনের জন্য দেশের সব জেলা প্রশাসককে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে যায় সরকার পরিবর্তনের পরপরই।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মাহাবুবুর রহমান বলেন, সরকার রপ্তানি বহুমুখীকরণে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজটা তো এত সহজ নয়। এর জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে রপ্তানি করা হয় ২১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এটি মোট রপ্তানি আয়ের ৪৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করা হয়। অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ খুব সামান্য পরিমাণ পণ্যই আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশে পণ্য রপ্তানি করে থাকে। এর মধ্যে শীর্ষ ১০টি দেশ থেকে আসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের কাছাকাছি।

জানা গেছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এক জেলা এক পণ্য ধারণাটি খুবই কার্যকর। এ ছাড়া এমন ধারণাকে কাজে লাগিয়েছে মিয়ানমারও। ফলে তাদের রপ্তানি পণ্যে বহুমুখিতা রয়েছে। যা আমাদের নেই।

এদিকে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে ৬৩.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি হবে আশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত অর্থ বছর ২০২৪-২৫ অর্থবছর বাংলাদেশ পণ্য খাতে ৫০.০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৮.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৭ শতাংশ এবং পূর্ববর্তী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৮.৫৮ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বিনিয়োগকারীদের যৌক্তিক চাহিদার ভিত্তিতে আংশিক রপ্তানিকারকদের জন্য বন্ড সুবিধাসহ বিভিন্ন নীতিসহায়তার প্রস্তাব নিয়ে আমরা কাজ করছি। সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই সুবিধা কার্যকর হলে তৈরি পোশাকবহির্ভূত খাতের রপ্তানি বৃদ্ধি, বৈচিত্র্যকরণ ও দেশিবিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।