Image description
আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের দ্বন্দ্বে খুন সন্ত্রাসী মামুন

পুরান ঢাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন (৫৫) হত্যায় অংশ নেয়া দুই শুটারসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃত দুই শুটার হলেন- ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ ওরফে পিয়াস। গ্রেপ্তার বাকি তিনজন হলেন- রুবেল, শামীম আহম্মেদ ও ইউসুফ ওরফে জীবন। গ্রেপ্তার ফারুক ও রবিন ছিলেন পেশাদার শুটার। গ্রেপ্তারের সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুইটি পিস্তল, হত্যাকাণ্ডের পারিশ্রমিক নগদ টাকা, হত্যার কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

ডিবি জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী রনি। রনি ছিলেন এক সময়ের মুদি দোকানি, বর্তমানে কাফরুলের বাসিন্দা এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী। আন্ডারওয়ার্ল্ডের আলোচিত জুটি ইমন-মামুনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য এবং প্রকট। হত্যাকাণ্ডের জন্য রনি নিজে দুই লাখ টাকা দেয় এবং অস্ত্রও সরবরাহ করে। মূল আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য বিস্তার নিয়েই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রনি পলাতক রয়েছে। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি’র ডিবি প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ১০ই নভেম্বর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রবেশের পথে দুজন অস্ত্রধারী গুলি ছোড়ার ঘটনায় তারিক সাইফ মামুন গুরুতর জখম হলে তাকে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ঢামেকের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ ছায়া তদন্ত শুরু করে জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়। গোয়েন্দা তথ্য ও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়। পরে তাদেরকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে সিলেট সদর, নরসিংদী ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও আলামত উদ্ধার করা হয়। অভিযানকালে গ্রেপ্তার আসামি ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে নরসিংদী সদর থানাধীন ভেলানগর থেকে মঙ্গলবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের তল্লাশি করে ফারুক ও রবিনের কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪০ টাকা উদ্ধার করা হয়, যা ফারুক ও রবিনকে মূল পরিকল্পনাকারী রনি হত্যাকাণ্ডের পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করে। 

ডিবি’র এই কর্মকর্তা আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর ফারুক ও রবিন তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রেন্ট-এ কারের গাড়িচালক রুবেলের কাছে দেয়। রুবেল অস্ত্র ও গুলি পাওয়ার পর তা রনিকে মোবাইল ফোনে অবগত করে। রুবেলকে নিয়ে  মোহাম্মদপুর থানাধীন রায়েরবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপর আসামি ইউসুফের (পেশায় দর্জি) বাসার মেঝে থেকে দু’টি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি ও ২টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার ইউসুফ এবং রুবেল জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দিন রুবেল অস্ত্র-গুলিভর্তি একটি ব্যাগ ইউসুফকে তার কাছে রাখার জন্য বুঝিয়ে দিয়ে যায়। 

ডিবি জানায়, এক সময়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের আলোচিত জুটি ইমন-মামুনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য এবং প্রকট। গত কয়েকদিনে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের ঘনিষ্ঠ সন্ত্রাসী রনি ফারুকের সহায়তায় একাধিকবার মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তখন তারা নতুন পরিকল্পনা করে ১০ই নভেম্বরকে হত্যাকাণ্ডের জন্য বেছে নেয়। যেহেতু নিহত মামুনের মামলায় হাজিরার দিন ধার্য ছিল ১০ই নভেম্বর। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যার দিকে মূল পরিকল্পনাকারী রনি তার নিজের বাসায় আরেক সন্ত্রাসী রবিনকে ডেকে নেয়।

ডিবিপ্রধান শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ১০ই নভেম্বর রনি সকাল ৯টার দিকে রবিনকে ফোন দিয়ে জজ কোর্ট এলাকায় যেতে বলে এবং সে অনুযায়ী সকাল ১০টার দিকে রবিন তার বন্ধু শামীমের ড্রাইভিংয়ে জজ কোর্ট এলাকায় যায় হত্যার মিশনে অংশগ্রহণের জন্য। অন্যদিকে রনির নির্দেশে ফারুকসহ সুমন কামাল ও আরও ১/২ জন জজ কোর্ট এলাকায় উপস্থিত হয়। রনির নির্দেশে ফারুক অটোরিকশাযোগে জজ কোর্ট এলাকায় যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে সুমন ও ফারুককে শুটিংয়ের জন্য রনি নির্দেশ দেয়। এক পর্যায়ে সুমন ও রনির মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। রনি তখন সুমনের কাছ থেকে দু’টি পিস্তল নিয়ে একটি ফারুক ও অপরটি রবিনকে দিয়ে হত্যার মিশনে পাঠায়। অপর পলাতক কামালের ওপর নির্দেশনা থাকে মামুনকে অনুসরণ করে তার গতিবিধি তাদেরকে জানানো। সে মোতাবেক কামাল মামুনের সঙ্গেই থাকে এবং তার সংকেত পেয়েই ফারুক ও রবিনকে দেয়। এরপর মামুনকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি ছুড়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফারুক ও রবিন। এরপর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা বেড়িবাঁধ হয়ে রায়েরবাজারে যায় এবং রনির নির্দেশে রুবেল, ফারুক ও রবিনের কাছ থেকে অস্ত্র-গুলিগুলো গ্রহণ করে তা রুবেলের বন্ধু ইউসুফের কাছে জমা রাখে। 

পরবর্তীতে রনির দেয়া ২ লাখ টাকা রুবেল, ফারুক ও রবিন প্রত্যেককে ১ লাখ করে টাকা দেয়। তিনি বলেন, পরবর্তীতে রনির পরিকল্পনা ও নির্দেশে রুবেলের মাধ্যমে ফারুক, রবিন ও শামীমকে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। তাদের সঙ্গে রুবেল নিজেও সফরসঙ্গী হয়। ঘটনার পরপরই ফারুক, রবিন, রুবেল ও শামীমের ব্যবহৃত মোবাইলগুলো তাৎক্ষণিকভাবে হাতিয়ে নেয় রনি, যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কোনোভাবেই তাদেরকে চিহ্নিত ও অনুসরণ না করতে পারে। তারা প্রথমে সিলেটে যায় এবং রবিন ও রুবেলের প্রচেষ্টায় ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে। সেখানে ভারতে প্রবেশের কোনো সুবিধা না করতে পেরে তারা সাতক্ষীরা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশের লক্ষ্যে সিলেট ত্যাগ করে ঢাকা অভিমুখে রওনা করে। এসময়ই পথিমধ্যে ডিবি তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।