ডেনমার্কে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. নিয়াজ আহমেদ খান। তাকে গ্রহণে এরই মধ্যে কোপেনহেগেনের সম্মতি চেয়ে চিঠি (এগ্রিমো) পাঠিয়েছে সরকার। এখন অপেক্ষা ক্লিয়ারেন্সের। প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক দূত লামিয়া মোর্শেদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী ও তার বোন হুসনা সিদ্দিকীকেও রাষ্ট্রদূত বানাতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। ‘অস্বাভাবিক’ এসব নিয়োগের প্রস্তাবে রীতিমতো তোলপাড় চলছে সেগুনবাগিচায়। বলা হচ্ছে- প্রস্তাবিতদের মেধা-যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। দেশি-বিদেশি ডিগ্রি, বড় চাকরি, বিশাল মাইনে, পরিবারিক ঐতিহ্য- সবই আছে তাদের। দীর্ঘদিনের সামাজিক ব্যবসায়ও তারা সফল! এতদিন ধরে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, এখনো করছেন। প্রশ্ন উঠেছে- এতকিছুর পরও তাদের রাষ্ট্রদূত হওয়ার খায়েশ কেন? তাছাড়া তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে গিয়ে তো বলি দিতে হচ্ছে পেশাদার কূটনীতিকদের। যারা সব ক্রাইটেরিয়া পূরণ করে অপেক্ষা করছেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিংয়ের। কূটনীতির মতো বিশেষায়িত ক্ষেত্রে পেশাদার কূটনীতিকদের বাইরে ৩০ শতাংশ নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকে নিয়োগ পান সেই কোটায়। বিদ্যমান রেশিওতে নতুন করে বাইরের নিয়োগের সূযোগ সীমিত বলে দাবি পেশাদারদের। তাদের মতে, ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের সূচনা ছিল বৈষম্য বিলোপের দাবিতে। রাষ্ট্রদূত পদে প্রস্তাবিত নিয়োগ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও উস্কে দিবে বৈ কমবে না। রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মানবজমিন’র সঙ্গে আলাপে সম্প্রতি বলেন- রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রস্তাবিতদের প্রায় সবাই ‘মাখন খাওয়া’। তারা এতদিন ধরে গাছেরটা খেয়েছেন এখন তলারটা কুড়াবেন। তাদের জীবনকে আরও বর্ণিল ও রঙিন করার জন্যই কি এত রক্ত ঝরলো? সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। উল্লেখ্য, কোপেনহেগেন ছাড়াও বিভিন্ন স্টেশনে রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার পদ শূন্য রয়েছে বা শিগগির হচ্ছে। সেই তালিকায় আছে- সিঙ্গাপুর, দ্য হেগ, থিম্পু, ইয়াঙ্গুন এবং তেহরান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা নিশ্চিত করেছে যে, ওই সব স্টেশনে রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার পাঠানোর বিষয়ে নীতিনির্ধারণী মহলে মৌখিক আলোচনা চললেও কোনো ফাইলওয়ার্ক এখনো শুরু হয়নি। এগ্রিমো তো নয়ই।
ডেনমার্কের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষা ...
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৩০তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বরত ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নিয়োগের সমুদয় প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন। এখন শুধু অপেক্ষা কোপেনহেগেনের গ্রিন সিগন্যালের। তার এগ্রিমো পেতে ১ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
লুৎফে সিদ্দিকী এবং তার বোন হুসনা সিদ্দিকীর একসঙ্গে রাষ্ট্রদূত হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন: প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং তার বোন হুসনা সিদ্দিকীর একসঙ্গে রাষ্ট্রদূত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শেখ হাসিনার আগের আমলে পুলিশের আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এওয়াইবিআই সিদ্দিকীর সন্তান লুৎফে এবং হুসনা। তাদের পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। লুৎফে সিদ্দিকী উপদেষ্টা পদমর্যাদার বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। লুৎফের সহোদরা হুসনা সিদ্দিকী তথ্য-প্রযুক্তিবিদ। কেপিএমজি ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক তিনি। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে কর্মরত। নেদারল্যান্ডসেই তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হতে চান। লুৎফে সিদ্দিকীর পছন্দ সিঙ্গাপুর বলে জানা গেছে।
লামিয়া মোর্শেদের পছন্দ ইউরোপ: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (চুক্তিভিত্তিক) ইউনূস সেন্টারের সাবেক নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোর্শেদের পছন্দ ইউরোপ। যদিও সেখানে কোনো ভ্যাকেন্সি নেই। তবে তার সুহৃদরা বলছেন, সরকার চাইলে বিশেষ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর তার যে প্রভাব তাতে ইউরোপ থেকে কোনো দূতকে ফিরিয়ে এনে হলেও সেখানে তাকে পাঠানো বিচিত্র কিছু নয়।