Image description

নরসিংদীর বৃহত্তর চরাঞ্চল রায়পুরা। উপজেলার সায়দাবাদ এলাকায় পলাতক আওয়ামী ক্যাডার ও ফ্যাসিবাদের দোসররা রাতের আঁধারে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, তৈরি করছে অস্ত্র আর সেগুলো দিয়ে চেষ্টা চলে নাশকতার। ইতোমধ্যে সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে দেওয়া হয় সশস্ত্র মহড়াও। এতে অকালে প্রাণ হারায় শিশু থেকে বৃদ্ধ নারী-পুরুষ। বিষয়টি নিয়ে গত ৬ আগস্ট অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে আমার দেশ। তখন সংবাদটি ভুয়া দাবি করলেও তিন মাস পর উদ্যোগ নিল প্রশাসন। গতকাল শনিবার অভিযান চালায় র‌্যাব।

আমার দেশ-এর সে প্রতিবেদন তখন মিথ্যা দাবি করেছিলেন তৎকালীন পুলিশ সুপার আবদুল হান্নান। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গতকাল ভোরে সায়দাবাদ এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় র‍্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। সেখান থেকে অন্তত ১১টি অস্ত্রসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় র‍্যাবের প্রধান কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সায়দাবাদ এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষ হচ্ছিল। গত ২৮ সেপ্টেম্বরও চরাঞ্চলে সংঘর্ষে সন্ত্রাসীদের গুলিতে একজন নিহত হয়। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর রায়পুরায় দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত, ২০ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে এক নারী নিহত এবং ২২ এপ্রিল সদর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল আলোকবালিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তদের গুলিতে একজন নিহতের ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞপ্তিতে র‍্যাব আরো জানায়, সায়দাবাদের চরাঞ্চলে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র, গোলাবারুদ মজুত করে এবং সেখান থেকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এ দুর্গম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান পরিচালনা করতে গেলে প্রায় সময় সন্ত্রাসীরা একত্রিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ অবস্থায় রায়পুরা চরাঞ্চলটি সন্ত্রাসীদের একটি অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের র‌্যাব-১১-এর নিজস্ব গোয়েন্দা নজরদারি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ভোরে সেখানে সাঁড়াশি অভিযান চালায়। সেখান থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচটি একনলা বন্দুক, একটি দুনলা বন্দুক, দুটি এলজি, একটি পাইপগান, তিনটি ম্যাগাজিন ও ৩৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। এ সময় আট সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার সন্ত্রাসীদের মধ্যে আছে—ডালিম মিয়ার ছেলে শফিক মিয়া, মৃত হাজি সামছুল মিয়ার ছেলে মোস্তফা, দুলাল মিয়ার ছেলে জাহিদ হাসান, মৃত মহাজুদ্দিনের ছেলে আয়নাল, জাকের হোসেনের ছেলে মহিউদ্দিন হৃদয়, মৃত আলী হোসেনের ছেলে বাচ্চু মিয়া, মৃত আবদুস সামাদ (টুক্কু) মিয়ার ছেলে কালু মিয়া এবং মৃত খলিল রহমানের ছেলে বাছেদ। তাদের সবার বাড়ি রায়পুরার সায়দাবাদে।

তাদের মধ্যে শফিক, মোস্তফা, জাহিদ, বাছেদ ও বাচ্চুর নামে একটি করে হত্যা এবং মহিউদ্দিনের নামে একটি হত্যাচেষ্টার মামলা আছে। তবে তাৎক্ষণিক সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।

র‌্যাব জানায়, সন্ত্রাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করা হবে।

গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রায়পুরার চরাঞ্চল ভৌগোলিকভাবে দুর্গম এলাকা হওয়ায় সন্ত্রাসীরা সেখানে নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলেছিল। তারা অস্ত্র মজুত করে সেখান থেকেই বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। অভিযান চালাতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর তারা একাধিকবার অতর্কিত হামলাও চালায়।

তিনি আরো জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রায়পুরার চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার সঙ্গে এ সন্ত্রাসীদের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দিয়ে থানায় হস্তান্তর করা হবে।