
ছেলের লাশ দেবে দেবে বলে অনেক ভুগিয়েছে। চার দিন পর লাশ নিয়ে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। নির্মমভাবে আদরের ছেলেটাকে গুলি করে মেরেছে। অপরাধীদের বিচার হবে কিনা, তাও জানা নেই। সন্তানের মরদেহ খুঁজে বাড়িতে আনার জন্য ডিসি-এসপির কাছে অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে।
কথাগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ রাজধানীর ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহর বাবা কামরুল হাসান ও চাচা মো. মামুন খানের।
চাচার ভাষ্য, ‘ছেলের লাশ আনতে গিয়ে যে অমানুষিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে, সে মুহূর্ত আজও বয়ে বেড়াচ্ছি আমরা।’
তাদের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ভদ্রাসন গ্রামে। স্বজনরা জানান, খালিদ বেশ মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। তাকে নিয়ে বাবা-মাসহ স্বজনের স্বপ্ন ছিল অনেক। সে স্বপ্ন এক বছর আগেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।
শহীদ খালিদ পরিবারের বড় ছেলে ছিলেন। তাঁর ছোট ভাই ও বোন রয়েছে। তারা মা-বাবার সঙ্গে ঢাকায় থাকেন।
গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তিনিসহ জুলাই অভ্যুত্থানে ভাঙ্গার তিন শহীদের স্মরণে দোয়া ও তাদের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। অপর দুজনের একজন শিশু আবদুল আহাদ (৪) ও তামিম শিকদার (১২)।
স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন আবুল হাসান। গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে তাদের বাসার নিচে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। বারান্দায় বাবা-মায়ের মাঝে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখছিল শিশু আবদুল আহাদ। হঠাৎ একটি গুলি তাঁর ডান চোখে বিদ্ধ হয়ে মাথায় ঢুকে যায়। মুহূর্তেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে সে। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আয়কর বিভাগের উচ্চমান সহকারী আবুল হাসানের বাড়ি ভাঙ্গার পুখুরিয়া গ্রামে। রায়েরবাগে একটি বাড়িতে স্ত্রী সুমি আক্তার, বড় ছেলে দিহান মাতুব্বর ও ছোট ছেলে আহাদকে নিয়ে থাকতেন তিনি।
১১ বছরের শিশু শহীদ তামিম শিকদার একই দিন বিকেলে রাজশানীর বনশ্রীর ফরাজি হাসপাতালের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। সে ভাঙ্গার খাপুরা গ্রামের দিনমজুর জুয়েল শিকদারের ছেলে। তার মরদেহ গ্রামের মোল্লাবাড়ি কবরস্থানে দাফন করা হয়।
খালিদের দাদা হান্নান তালুকদার আক্ষেপ করে বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক, আর কোনো মায়ের কোল যেন খালি না হয়। তাদের স্বপ্ন যেন চিরতরে ধ্বংস না হয়ে যায়।
ইউএনও মিজানুর রহমান বলেন, গত বছরের অভ্যুত্থানে দেশে অনেক মা তাদের সন্তান হারিয়েছেন। এর মধ্যে ভাঙ্গায় চার বছরের শিশু আহাদসহ আরও দুজন রয়েছেন। শহীদদের পরিবারের সব সমস্যায় উপজেলা প্রশাসন পাশে দাঁড়াবে।