Image description

পঞ্চম রাউন্ডেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতে শুল্ক চুক্তি হলো না। ১৪ থেকে ১৭ই জুলাই ওয়াশিংটন ডিসিতে দু’দেশের মধ্যে যে নেগোসিয়েশন হয়েছে তাতে বেশ কিছু বিষয়ে মতানৈক্য রয়ে গেছে। ডনাল্ড ট্রাম্প যদিও বলেছিলেন চুক্তিটি খুব শিগগিরই চূড়ান্ত হবে, তবুও তা অধরাই থেকে গেল। ভারতীয় নেগোসিয়েটাররা ফিরে এসেছেন দেশে। শুল্ক চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশও একই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে হচ্ছে। শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের পরবর্তী আলোচনার দিন তারিখ এখনো জানা যায়নি। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক চুক্তি নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি।  

ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র দেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গেও এখনো কোনো শুল্ক চুক্তি হয়নি। এই দেশ ও অঞ্চলগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কার্যকর রয়েছে বহু বছর ধরে। মার্কিন প্রশাসন, রাজনীতি ও বাণিজ্যে এসব দেশের রয়েছে ব্যাপক প্রভাব, প্রতিবছর তারা খরচ করেন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ওয়াশিংটন ডিসি’র নামজাদা লবিইস্ট ফার্মগুলোর পেছনে। এসবের কিছুই কাজে আসেনি। 

ট্রাম্প প্রশাসন শুরুতে ঘোষণা করেছিল তারা ৯০ দিনে ৯০টি দেশের সঙ্গে চুক্তি করবে। এ পর্যন্ত কেবলমাত্র যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চুক্তিটি সম্পূর্ণ হয়েছে। এ ছাড়া ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে শুল্ক চুক্তি হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যদিও এগুলো চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে কিনা তা এখনো জানা যায়নি।  ট্রাম্প প্রশাসন বেশ কয়েকটি দেশকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে, পয়লা অগাস্টের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন না করা গেলে উচ্চহারে ধার্যকৃত শুল্ক বহাল থাকবে। 

এরকম একটা প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক চুক্তির নেগোসিয়েশন চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূত্র অনুযায়ী, আলোচনাকারী দেশগুলোকে দুটো আলাদা এগ্রিমেন্টে আসতে হবে; প্রথমত: একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি যার আনুষ্ঠানিক নাম হচ্ছে এগরিমেন্ট অন রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ যার বিষয়বস্তু সব দেশের জন্য মোটামুটি অভিন্ন; দ্বিতীয়ত: কান্ট্রি স্পেসিফিক কমিটমেন্ট এগ্রিমেন্ট যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিকামী  প্রতিটি দেশকে তাদের নিজ নিজ নীতি পরিবর্তন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন আইটেম ক্রয়ের তালিকা প্রদান করতে হবে।  এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক হাজার রপ্তানি পণ্যের উপর হ্রাসকৃত শুল্কের একটি তালিকা প্রতিটি চুক্তিকামী দেশগুলোকে দিতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের কাছে পাঠানো চিঠিতে এটা উল্লেখ করেছেন যে, চুক্তিকামী দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগেরও নিরসন করতে হবে। 

সুতরাং শুল্ক আলোচনা নিছক শুল্কের হ্রাস বৃদ্ধির ব্যাপার নয়। তাই যদি হতো তাহলে অনেক দেশেই ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে ফেলতো। বিষয়টি অত্যন্ত জটিল কারণ এতে জাতীয় নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বিস্তৃত জাতীয় নীতিমালার বিষয়ে সকল চুক্তিকামী দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে হচ্ছে। এ কারণে যুক্তরাজ্য ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতম মিত্ররাও চুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি। বাংলাদেশকেও এই জটিল প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে। 

যতদূর জানা গেছে, বাংলাদেশ ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট নেগোসিয়েশনে অনেক দূর এগিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে কি পরিমাণ শুল্ক ছাড় দেয়া যেতে পারে সে ব্যাপারেও বেশ অগ্রগতি হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে কান্ট্রি স্পেসিফিক কমিটমেন্ট চুক্তির ওপরে সরকার আভ্যন্তরীণ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহল থেকে জানা গেছে যে, সরকার আগামী দু’-একদিনের মধ্যে তৃতীয় রাউন্ডের নেগোসিয়েশনের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। 

ইতিমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশের কমিটমেন্ট এগ্রিমেন্টের কথিত বেশ কিছু ধারা সম্পর্কে সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা হচ্ছে নেগোসিয়েশন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস। এতে লাভ হবে আমাদের প্রতিযোগী দেশের, ক্ষতি হবে আমাদের। তবে আমরা এসবকে পাত্তা দিচ্ছি না।’
এই পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডক্টর খলিলুর রহমান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব ও সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ।