Image description

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গত বছর জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিব। সে সময় তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তার স্ত্রী। এ বছর জানুয়ারিতে জন্ম নেওয়া কন্যাশিশুটির নাম রাখা হয় সাবরিনা বিনতে সিদ্দিক। অভিভাবকহীন শিশুটি যেন বৈষম্যের শিকার না হয়, সেই চাওয়া রাকিবের স্ত্রী সাদিয়া খাতুনের।

বিয়ের ছয় মাসের মাথায় স্বামী হারানো সাদিয়া বলেন, ‘বর্তমানে ছয় মাসের মেয়েই আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। আমার স্বামী তার মেয়েকে দেখে যেতে পারল না, মেয়েও কোনোদিন বাবাকে দেখতে পারবে না, আমার এই আফসোস কোনোভাবেই দূর হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই ঠিকই ফিরে আসছে, আমার স্বামী তো ফিরল না। আমি স্বামীহারা, মেয়েটা জন্মের আগেই বাবা হারিয়ে এতিম। দেশের বৈষম্য দূর করার আন্দোলনেই তো সে মারা গেছে, আমার সন্তান যেন বৈষম্যের শিকার না হয়। সে বেঁচে থাকলে মেয়েকে নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করতে হতো না।’

রাকিবের নিজ বাড়ি গৌরীপুর উপজেলায়। তবে তিনি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কোনাপাড়া মাদ্রাসায় চাকরি করতেন। চাকরির সুবাদে ওই এলাকায় বিয়ে করেন সাদিয়া খাতুনকে। সাদিয়া তখন ওই মাদ্রাসায় পড়তেন। গত ১৮ জানুয়ারি রাতে সাদিয়া কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।

গত বছর ২০ জুলাই গৌরীপুরের কলতাপাড়া বাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হন রাকিব। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাদিয়া জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে যান। তার বাবার বাড়ির আর্থিক অবস্থাও খুব সচ্ছল নয়। জুলাই আহত-নিহতদের জন্য সরকার থেকে নানা সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া হলেও সেগুলোর বেশিরভাগই পাননি তিনি। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মাধ্যমে সর্বশেষ জেলা পরিষদ থেকে অনুদানের ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় তার হাতে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে এবং আমার বাচ্চার খোঁজখবর নেন না। সরকারি যা সহযোগিতা করা হয়েছে তার বেশিরভাগ টাকাই তারা নিয়ে গেছেন। আমি হাসপাতালে থাকাকালীন জুলাই ফাউন্ডেশনের দেওয়া ৫ লাখ টাকা আমার শ্বশুর নিয়ে নিয়েছেন। ভেবেছিলাম আমার সন্তানের জন্য কিছু দেবেন, কিন্তু দেননি।’

সাদিয়ার দাবি, শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের ১০ লাখ টাকা যেন প্রকৃত ওয়ারিশ শনাক্ত করে বণ্টন করা হয়। এই টাকা যদি তার সন্তান না পায়, তবে তার ভরণ-পোষণ করাই কঠিন হয়ে যাবে।

রাকিবের বাবা আব্দুল হালিম কালবেলাকে জানান, তার চার সন্তানের মধ্যে রাকিব ছিলেন একমাত্র ছেলে। তিন মেয়ের মধ্যে দুজনকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ে। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে হাফেজ বানিয়েছিলেন। মৃত্যুর পর ছেলেই যেন তার জানাজাটা পড়ায়, শেষ বয়সে যেন বাবা-মায়ের খেয়াল রাখে।

আব্দুল হালিম বলেন, ‘ছেলের লাশ কাঁধে নেওয়া যে কেমন কষ্ট, সেটা আমার মতো হতভাগা বাবা ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না। আমি চাই এভাবে যেন কারও সন্তান হারাতে না হয়।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় শিক্ষার্থী অর্পিতা কবির অ্যানি বলেন, ‘গত ২০ জুলাই রাকিব কলতাপাড়া বাজারে আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তার কন্যা পৃথিবীতে আসছে, সে তার বাবাকে দেখেনি। এই সন্তান জুলাই বিপ্লবের সন্তান। শহীদ রাকিবের স্ত্রী ও সন্তানের দায়িত্ব যেন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়।’