Image description

‘আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে, যারা তাকে শহীদ করেছে আমি তাদের বিচার চাই। আমার বাবা যে রক্ত দিয়েছেন, এটা যেন কেউ ভুলে না যায়। তাকে যেন সবসময় মানুষ স্মরণে রাখে। এছাড়াও আমাদের দাবি জুলাই সনদ যেন দ্রুত দেওয়া হয়।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজবাড়ীর শহীদ মো. কুরমান শেখের মেয়ে মিতু খাতুন এসব কথা বলেন। শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে শহরের শ্রীপুরে নির্মিত শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে ‘এক শহীদ, এক বৃক্ষ’ কর্মসূচি পালন শেষে সাংবাদিকদের  সঙ্গে তিনি বলেন।

মিতু খাতুন বলেন, একটা মেয়ের কাছে তার বাবা হচ্ছে বটগাছ। কিন্তু আজ আমার বাবা নামক সেই বটগাছ টা নেই। আমাদের বাবার সেই ছায়াটা নেই। তাকে আমরা প্রতিনিয়ত স্মরণ করি। তার কথা, তার সবকিছুই আমাদের কানে বাজে। আমার বাবা চেয়েছিল আমি এবং আমার ভাইয়া লেখাপড়া করে যেন ভালো কিছু করতে পারি। আজ আমাদের এই পর্যন্ত নিয়ে আসছেন আমার বাবা। আগামীকাল তার মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হবে। তিনি আমাদের মাঝে নেই একটা বছর হয়ে গেল। তার অপূর্ণতা যে আমাদের কতটা ভোগাচ্ছে সেটা একমাত্র আমরাই জানি।

তিনি আরও বলেন, আমার আব্বুর মুখে সব সময় আমার নামটাই থাকতো। আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। তিনি যখন বাসায় আসতেন কলিং বেল দেওয়ার পরও মিতু মিতু বলে ডাকতেন। এখন আর কেউ ডাকে না। গত বছরের ২০ জুলাই আমার বাবাকে তার দোকানে থাকা অবস্থায় পুলিশ গুলি করে। সেখানে স্পটেই আমার বাবা মারা যান। আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, শহীদ কুরমান শেখের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নে। ঢাকার সাভারে দৈনিক ভাড়ার ভিত্তিতে দোকান নিয়ে মুরগির ব্যবসা করতেন তিনি। স্ত্রী শিল্পী খাতুন, ছেলে রমজান শেখ (২২) ও মেয়ে মিতু আক্তারকে (২০) নিয়ে তিনি সেখানেই বসবাস করতেন। গত বছরের ২০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন কুরমান শেখ।

এদিক শনিবার বেলা ১১টায় শহরের শ্রীপুরে নির্মিত জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে বন অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে ‘এক শহীদ, এক বৃক্ষ’ কর্মসূচিতে বৃক্ষরোপণ করা হয়।

বৃক্ষরোপণ শেষে জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, জুলাই মাসজুড়েই আমরা সরকার নির্ধারিত জুলাই পুনর্জাগরণ প্রোগ্রামগুলো করে আসছি। মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজকে সারা বাংলাদেশে একই সময়ে শহীদের পরিবার ও জুলাইয়ে আহতদের সাথে নিয়ে নির্মিত শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে ‘এক শহীদ, এক বৃক্ষ’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আমাদের রাজবাড়ীর তিন শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে স্মৃতিস্তম্ভের পাশে তিনটি বৃক্ষরোপণ করলাম। প্রতেকটি গাছেই শহীদের নাম উল্লেখ করে দেওয়া হবে।

এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শংকর চন্দ্র বৈদ্য, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. তারিফ-উল-হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া হক, শহীদ সাগরের বাবা মো. তোফাজ্জল হোসেন, শহীদ গণির স্ত্রী লাকি আক্তার, শহীদ কুরমানের মেয়ে মিতু খাতুন,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মীর মাহমুদ সুজন, সদস্য সচিব মো. রাশেদুল ইসলাম রাশেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।