Image description

মৃত্যুর শেষ ক্ষণ পর্যন্ত কেবল মানবিকতার বীজ বুনে গেছেন শহিদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। শুধু পানি বিতরণ নয়, আহতদের অব্যাহত সাহায্য ও পুলিশের ধাওয়ার পরও মাঠ না ছাড়ার সিদ্ধান্ত কেবল একজন উপযুক্ত নেতার মধ্যেই বিদ্যমান। যে নেতৃত্বের সাক্ষী দিচ্ছেন রণক্ষেত্রের সহযোদ্ধা ও তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। প্রথম শাহাদত বার্ষিকীতে মৃত্যুঞ্জয়ীকে নিয়ে থাকছে আজকের এ প্রতিবেদনে।

শহিদের কাছে মৃত্যু যে কত তুচ্ছ, তার জ্বলন্ত প্রমাণ মুগ্ধ। ফ্যাসিবাদ হটাতে বিক্ষোভ-মিছিল-প্রতিবাদের মানুষদের পানি বিলিয়ে বসে থাকার পর পুলিশের ধাওয়ায় যখন সবাই ছুটছে এদিক ওদিক। তখনও পুলিশের গতিবিধি লক্ষ্য করছিলো মুগ্ধ। মাথা তুলে তাকাতেই পুলিশের একটি গুলি নিস্তেজ করে দেয় মুগ্ধকে।

রণক্ষেত্রে কখনও পানি হাতে, কখনও আহতদের জন্য আরোগ্যের হৃদয় হয়ে, কখনও স্লোগানে, কখনও পুলিশের টিয়ারসেল দমাতে সবাইকে নিয়ে আগুনের পাশে জড় হয়েছে মুগ্ধ। ঘর, ক্যাম্পাস, রণক্ষেত্র সবখানেই নেতৃত্ব যেন তার পোষ মানা। যে নেতৃত্ব মৃত্যুর শেষ ক্ষণ পর্যন্ত মানবিকতার বীজ বুনে গেছে।

মুগ্ধের মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি একা হয়েছে একই চেহারার জমজ ভাই মীর স্নিগ্ধ। যে ঘর ও বিছানায় বছরের পর বছর কেটেছে একসঙ্গে সেটি এখন ছন্দহীন। মৃত্যুর এক বছর পরও ঘুমের ঘোরে মুগ্ধকে খুঁজে ফেরে মীর স্নিগ্ধ। সম্পর্কের নিখাদ গভীরতার অনন্য প্রমাণ এই যে, মুগ্ধ ও সিগ্ধকে পার্থক্যকারী চোখের নিচের তিল যা মুগ্ধের মৃত্যুর পর সিগ্ধের চোখের নিচেও উঠতে শুরু করেছে।

পুরো পরিবার মাতিয়ে রাখা মুগ্ধ ছিলো একাধিক গুণের অধিকারী যা তার পরিবারে এখন শোভা পাচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার অসাধারণ সব গুণের স্মৃতিচারণ করেছেন।

 

তার স্মৃতি ধরে রাখতে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

 

শহিদ মুগ্ধ এতটাই মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল, চব্বিশের ১৯ জুলাই মুগ্ধের দাফনে অংশ নেয়ার তিন ঘণ্টা পর একইভাবে গুলি খেয়ে শহিদ হন রেদওয়ান শরীফ জয়। বিরল এই স্মৃতি ধরে রাখতে মুগ্ধের পাশের কবরেই সমাহিত করা হয়েছে শহিদ জয়কে। সতীর্থদের চাওয়া শহিদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।