
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হলের (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল) পুকুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত শিক্ষার্থীর নাম সাজিদ আব্দুল্লাহ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং কক্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকালের দিকে পুকুরে একটি মরদেহ ভাসতে দেখে পুকুরপাড়ে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে ইবি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সহায়তায় মরদেহ পানি থেকে উপরে তোলা হয়।
নিহত শিক্ষার্থীর অন্তত তিনজন বন্ধু নিশ্চিত করেছেন, সাঁতার জানত সাজিদ। ঢাকার তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় পড়াকালীন এবং ইবির পুকুরেও অজস্রবার সাঁতার কেটেছে সে। তার বন্ধুবান্ধব এবং চেনা পরিচিত শিক্ষার্থীরাও নিশ্চিত করছে তার সাঁতার জানার ব্যাপারে। তাহলে কীভাবে মারা গেলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সাজিদ? সেই প্রশ্ন এখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর মনে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে অনেকেই।
সাজিদের মৃত্যু ঘিরে মোটা দাগে ৪টি প্রশ্ন সামনে এনেছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসকরা। প্রথমত, যে পুকুরে সাজিদ ডুবেছেন, সেখানে একাধিকবার সাঁতার কেটেছে সে; তাহলে কীভাবে একই জায়গায় মারা গেলেন। এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে ছেলেটি সাঁতার জানতো এবং এই পুকুর সাঁতার দিয়ে পার হয়েছে একাধিকবার, সেখানে সাঁতার না জানা মানুষের মতো গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটার কথা নয়। আর গোসল করতে নামলেও জামাকাপড় খুলে নামার কথা কিন্তু মৃতদেহ উদ্ধারের সময় তার পরিধেয় টি-শার্ট ও ট্রাউজার পড়া ছিল।’
দ্বিতীয়ত, যে পুকুর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে; সেই পুকুর সংলগ্ন দুটি হল রয়েছে— শাহ আজিজুর রহমান হল এবং শহীদ আনাছ হল। দুটি হলের শিক্ষার্থীরাই পুকুরঘাটের দোকানগুলোতে আড্ডা দেন, চা-নাস্তা খান। যদি গোসল করতে নেমে সে ডুবেও যেতে থাকেন; তবে চিৎকার-চেচামেচিতে কারো এগিয়ে যাওয়ার কথা। অন্ততপক্ষে কারো কানে সাজিদের আর্তনাদ পৌঁছাবে না— এমনটা হওয়ার কথা নয়; এমন প্রশ্ন তুলেছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
আরেকটি অংশ বলছেন, হলের পুকুরে গোসল করতে গেলে সাধারণত কেউ একাকী যায় না। বন্ধু-বান্ধব সার্কেল নিয়েই পুকুরে ঝাপাঝাপিতে মাতেন শিক্ষার্থীরা। যদি গোসল করতে নেমে সাজিদ নিখোঁজ হয়; তাহলেও তার সঙ্গী-সাথীদের টের পাওয়ার কথা যে সাজিদ নিখোঁজ। কিন্তু এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
সবচেয়ে বড় সন্দেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস জেনেছে যে, ‘সাঁতার না জানা কোন ব্যক্তি পানিতে ডুবে গেলে সাধারণত তার শরীর পানিতে একদম তলিয়ে যায়। মৃত্যুর পর শরীরের ভেতরে পচন প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার ফলে গ্যাস তৈরি হতে থাকে। এরপরে ধীরে ধীরে শরীর ফুলতে শুরু করে এবং একপর্যায়ে তা পানির উপরে ভেসে ওঠে। এ সময়ে তার পেট ফুলে ওঠে এবং পুরো শরীরটা পানিতে ভাসতে থাকে।’ যদিও নিহত সাজিদের ক্ষেত্রে পেট নয় বরং মাথা পানিতে ভাসতে দেখা গেছে।
ক্যাম্পাস থেকে লাশ নিয়ে যাওয়ার পর মরদেহ দেখেছেন এমন এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দিয়ে জানান, ‘পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর লাশ ভেসে উঠতে সাধারণত ১ থেকে ২দিন সময় লাগে। পানির গভীরতা, তাপমাত্রা এবং দেহের আয়তনের ক্ষেত্রে সময়ের কমবেশি হতে পারে। তবে এই লাশ দেখে মনে হয়নি এটা পুরোনো বডি।’ তিনি আরও বলেন, যখন লাশ ভেসে উঠেছে, তার অন্ততঃ ৬-১২ ঘন্টা আগে সে মারা গেছে। অর্থ্যাৎ যদি লাশটি বিকেলে ভেসে ওঠে, তাহলে আগের ভোররাতে বা সকালের দিকে সে মারা গেছে’—এমনটাই অনুমান করেন তিনি।
মূলত এসব সন্দেহকে সামনে রেখেই মর্মান্তিক এই ঘটনার তদন্তের দাবি ইবি শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থী মুসা হাশেমী লিখেছেন, দাবি করা হচ্ছে ক্যাম্পাসের পুকুরের পানিতে ডুবে ওর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে মোটেও এমন মনে হচ্ছে না। জিয়ন সরকার লিখেছেন, কিছুক্ষণ আগে ওর লাশটা দেখলাম কুষ্টিয়া মেডিকেলে। নিজের অজান্তেই চোখের পানি চলে আসলো। ইশ! আজ বিশব্বিদ্যালয়ের পুকুরে তার লাশ ভেসে উঠে অথচ নিজ চোখে দেখলাম ব্লাড আসতেছে তার নাক দিয়ে। তাহলে কি পানিতে ডুবে নাকি অন্য কিছু..........? এই রহস্যময় মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত যেনো হয় এই টাই এখন আমাদের চাওয়া।
আবু রায়হান রনি লিখেছেন, সাজিদ কি আসলেই পানিতে ডুবে মারা গেছে নাকি মেরে পানিতে ফেলে দেওয়া হইছে?? রহস্যজনক মনে হচ্ছে। সাজিদ ছোট বাচ্চা না যে খেলতে খেলতে পা পিছলে পুকুরে পড়ে মারা যাবে। ক্যাম্পাসে যার শতাধিক বন্ধু সে কেন শখের বসে কাউকে না বলে একা একা পুকুরে যাবে গোসল করতে?যে পুকুরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের চলাচল থাকে, পুকুরপাড়ে পোলাপান বসে গল্প করে, আড্ডা দেয়। সাজিদের গোসলের দৃশ্য কি কারোরই নজরে পড়ে নাই? সাজিদের মোবাইল ফোন কোথায়?? সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। হয়তো এর মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে।
আবু রায়হান খান রানা লিখেছেন, ইনসান আর সাজিদ সব সময় একসাথে ঘুরতো। এভাবে সাজিদ এর সাথে আমরও একটা ভাল সম্পর্ক ছিল। হালে তারা একটি নতুন ব্যবসাও শুরু করেছিল। কিন্তু ছেলেটার এভাবে আকস্মিক মৃত্যু আমাকে ভাবাচ্ছে। আমার একটি পর্যবেক্ষণ আমি এখানে শেয়ার করছি: ছবিতে দুহাতে মুষ্টি বাধার ধরন দেখে যাদের অল্প একটু মুষ্টিযুদ্ধ কিংবা কারাতে সম্পর্কে ধারণা আছে তারা সহজে অনুমান করতে পারবেন হাতের এই মুষ্টিটা বাধা হয় যখন কারো গলায় আঘাত করতে হয়। হয়তো সে আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সর্বশেষ প্রতিরক্ষা করতে চেয়েছিল। এজন্য আমার মনে হচ্ছে সে পরিকল্পিতভাবে হত্যা হয়েছে। আর যখন ইনসান বাড়িতে ছিল তখনই বা কেন তাকে রাতে ডুবে মরতে হল।
সাজিদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত ইনসান ইমাম বলেন, ফোনে না পাওয়ার রুমে গিয়ে দেখি বাইরে থেকে ছিটকিনি আটকানো, ছিটকিনি খুলে ধাক্কা দেওয়ার পরও গেইট খুলে না এরমাঝে কয়েকবার ফোন আসলে আমি তাড়াহুড়ো করে ওখানে চলে গেছি। তারপর সিকিউরিটি মামারসহ ফোন নিলে দেখি তার বাড়ি থেকে কল আসতেছে, ফোন লক থাকায় আমরা ফোন খুলতে পারিনি শুধুমাত্র ইনকামিং ফোন রিসিভ করতে পারছি।
লাস্ট কখন দেখা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল ১৬ তারিখ দুপুর ২ টার দিকে সাজিদের সাথে আমার দেখা হয় আমরা একসাথেই ছিলাম তারপর ক্যাম্পাসে এক বড়ো ভাইর মৃত্যুতে আমি তার সৎকারের জন্য দিনাজপুরে চলে যাই। রাতেই চলে আসি আবার। এসে থেকে আমি অনেক ক্লান্ত থাকায় পরে দুপুর থেকে আমি ওকে কল দিচ্ছি কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। তারপরে রব্বানী ভাই আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন সাজিদ কই, আমি বললাম ভাই ও তো আমার রুমে নেই ওর রুমে হয়তো আছে। তারপর দেখি রুমে গিয়ে বাইরে থেকে ছিটকিনি দেওয়া, ছিটকিনি খুললে দরজায় ধাক্কা দিলে দরজা খুলে না।