
আগামী নতুন অর্থবছরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে ঋণ সুবিধা দিতে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চায় এসএমই ফাউন্ডেশন। সেই সঙ্গে এ খাতের ব্যবসায়ীদের বিশেষ কর সুবিধা দিতে এনবিআরে ১৪০টি প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সহযোগিতায় আয়োজিত ‘এসএমই-বান্ধব বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৫-২৬’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন ফাউন্ডেশনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। মূলত সেমিনারে এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নীতি সহায়তা দাবি করেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, দেশের প্রায় এক কোটি ১৮ লাখ এসএমই উদ্যোক্তার তুলনায় বর্তমান বাজেট ও কাঠামো অনেকটাই সীমিত। এসব উদ্যোক্তার প্রায় ৭০ শতাংশ ঢাকার বাইরে অবস্থান করলেও সেখানে এসএমই ফাউন্ডেশনের কোনো কার্যালয় নেই, যা সেবা বিস্তারে বড় প্রতিবন্ধক। তাই এসএমই নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং সারা দেশে উদ্যোক্তাদের সহায়তায় আসন্ন বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন ফাউন্ডেশনের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তারা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইআরএফের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশরাফুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মুসফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সামিম আহমেদ। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জানান, ২০০৭ সাল থেকে এসএমই ফাউন্ডেশন জাতীয় শিল্পনীতি ও এসএমই নীতিমালাগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি উদ্যোক্তা উন্নয়ন, ক্লাস্টারভিত্তিক কার্যক্রম, প্রযুক্তি হস্তান্তর, দক্ষতা উন্নয়ন, নারী উদ্যোক্তা সহায়তা এবং সহজ শর্তে অর্থায়নসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ উদ্যোক্তা এই কার্যক্রমের মাধ্যমে সরাসরি উপকৃত হয়েছেন, যদিও দেশের প্রায় এক কোটি ১৮ লাখ উদ্যোক্তার তুলনায় এই পরিসংখ্যান অনেক কম। এই খাতে দেশের ৭০ শতাংশ উদ্যোক্তা ঢাকার বাইরে অবস্থান করলেও ফাউন্ডেশনের কোনো আঞ্চলিক কার্যালয় নেই।
সভায় জানানো হয়, দেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ৩২ শতাংশ, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, চীনে এই হার ৬০ শতাংশ, ভারতে ৩৭ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৫২ শতাংশ, আর পাকিস্তানে ৪০ শতাংশ।
তিনি বলেন, ‘এমএই খাতের প্রতিবন্ধকতা আমরা দূর করতে চাই। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এই খাতে সহজে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। বড় ব্যবসায়ীদের মতো একই প্রক্রিয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া আছে। এগুলো কমিয়ে সহজ করতে হবে।’
সামিম আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতি ধরে রাখতে এসএমইর কাঠামোগত পরিবর্তন ও পুনর্গঠন করতে হবে। দেশের এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের অনেক সক্ষমতা আছে। এখন উদ্ভাবন ও গবেষণায় জোর দিলে তারা আরো এগিয়ে যেতে পারবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক জানান, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে প্রাপ্ত ৩০০ প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে ১৪০টি প্রস্তাব এনবিআরে জমা দেওয়া হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এনবিআরের কাছে ৫৫৭টি প্রস্তাব জমা দিয়েছে ফাউন্ডেশন, যার মধ্যে ৮৫টি প্রস্তাব আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।
কাস্টমস আইন ২০২৩ এবং শুল্কসংক্রান্ত প্রস্তাবনায়, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার জন্য কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি ও কমানোর প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এসএমই-বান্ধব কর ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হলে এই খাতের বিকাশ ত্বরান্বিত করবে।