
Qadaruddin Shishir ( কদরুদ্দীন শিশির)
ভারতের বাংলাভাষী মিডিয়াগুলোর সাংবাদিকতার মান কেমন সে ব্যাপারে মোটামুটি অনেকের ধারণা পরিস্কার আছে।
তবে ৫ আগস্টের পর থেকে এটাও পরিস্কার হয়ে উঠছে যে, ওইপারের বাংলাভাষী মিডিয়ার প্রপাগান্ডার মানও খুবই নিম্ন।
যেমন ধরুন Aaj Tak Bangla এর এই ভিডিও প্রতিবেদনটির কথা।
আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি তারা একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে, "হাসিনাকে শেষ করতে নাহিদদের ব্যাঙ্ক A/Cএ কয়েকশো কোটি!"
নিতান্ত 'গাণ্ডু' লেভেলের প্রতিবেদক/সহ-সম্পাদক এবং বার্তা সম্পাদক না হলে শিরোনামটি এমন হতো না।
কারণ, মাত্র গতকালই নাহিদ পতদ্যাগের পর তার সম্পদের একটি সংক্ষিপ্ত হিসাব দিয়েছেন এবং স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, তার একটি মাত্র ব্যাংক একাউন্ট আছে (যা গত আগস্ট মাসে খোলা, এর আগে তার কোনো একাউন্ট ছিল না)। এবং সেই একাউন্টের সর্বশেষ ব্যালেন্সের স্ক্রিনশট প্রকাশ করেছেন যেখানে দেখা যাচ্ছে তার একাউন্টে ১০ হাজারের কিছু বেশি টাকা রয়েছে।
অত্যন্ত নিচু কোয়ালিটির প্রতিবেদক এবং সহ-সম্পাদক না হলে এটা বুঝার কথা যে, নাহিদ যেভাবে পাবলিকলি তার মাত্র একটি ব্যাংক একাউন্টের অস্তিত্বের কথা বলেছেন এবং সেটির ব্যালেন্স প্রকাশ করেছেন কেউ যদি এর বাইরে তার কোন ব্যাংক একাউন্ট আছে বলে দাবি করে তাহলে তাকে সেটির পক্ষে প্রমাণ হাজির করতে হবে। ওই একাউন্টের বিস্তারিত প্রকাশ করতে হবে।
যেহেতু Aaj Tak Bangla একদম স্পষ্ট করে বলছে যে, ''নাহিদদের ব্যাঙ্ক A/Cএ কয়েকশো কোটি'' টাকা আছে, তার মানে তাদের কাছে নাহিদের ব্যাংক ডিটেইলস আছে।
এখন Aaj Tak Bangla-কে প্রকাশ করতে হবে যে, নাহিদের কোন সেই ব্যাংক একাউন্ট যেটিতে কয়েকশো কোটি টাকা আছে।
নাহিদ যেহেতু নিজের ব্যাংক একাউন্টের যাবতীয় ডিটেইলস পাবলিকলি প্রকাশ করে দাবি করেছেন এর বাইরে তার কোন ব্যাংক একাউন্টই নেই, এখন Aaj Tak Bangla তাদের কাছে থাকা একাউন্টের ডিটেইলস প্রকাশ না করলে সেই দাবির কোন ভিত্তি থাকেনা।
প্রপাগান্ডু হিসেবে আইকিউ লেভেল কিছুটা বেটার হলে Aaj Tak Bangla এর প্রতিবেদক বা সহ-সম্পাদক শিরোনামে 'ব্যাংক একাউন্ট' এর বদলে হয়তো শুধু 'একাউন্ট' লিখতেন। এতে ভাবার সুযোগ থাকতো যে, মনে হয় 'একাউন্ট' বলতে 'বিটকয়েন একাউন্ট' এর কথা বলেছে টিভি চ্যানেলটি। এতে নাহিদের 'কয়েক শ কোটি' থাকা ব্যাংক একাউন্টের ডিটেইলস প্রকাশ করা সংক্রান্ত বারডেনটুকু তাদের ওপর ফেলার সুযোগ আপাতত কেউ পেতো না।
প্রপাগান্ডা বা ডিসইনফরমেশন Aaj Tak Bangla বা Republic Bangla বা এরকম ভারতীয় বাংলা মিডিয়া (এবং ইংরেজিও) ছড়াবেই বাংলাদেশ বিষয়ে-- এটাই চূড়ান্ত কথা। তবে একটু চালাক হলে ভাল আরকি।
বিটকয়েন সংক্রান্ত রিপোর্টটি যে একটি আওয়ামী ডিসইনফরমেশন তা গতকালই একাধিকজনের লেখায় উঠে এসেছে। এখন এটি 'ভারতীয় ডিসইনফরমেশন' এর রূপ নিচ্ছে।
ভারতীয় মিডিয়াও আওয়ামী ফেসবুকারদের মতো যে theasiapost.news নামের ওয়েবসাইটের রেফারেন্সে 'খবর'টি ছড়াচ্ছে সেই ওয়েবসাইট আওয়ামী লীগের পতনের পর গত ২৫ অক্টোবর খোলা হয়েছে। তাদের ৩০ জনের মতো ফলোয়ারওয়ালা ফেসবুক পেইজটিও একইদিন খোলা।
তাদের এবাউট সেকশনে কোন পরিচয় নেই। অন্য কোন জায়গায়ও তাদের পরিচয় পাওয়া যায় না।
কোন ওয়েবসাইটের 'ভুয়া' হওয়ার প্রথম বৈশিষ্ট্যটিই হলো তারা তাদের কোন পরিচয় দিতে চায় না। কে বা কারা সাইটটি চালায় তা জানাতে চায় না কিন্তু নিজেদের 'সংবাদমাধ্যম' আকারে প্রচার করতে চায়।
প্রকাশনার পর থেকে মোট ২৩ টি প্রতিবেদন এই সাইটে প্রকাশিত হয়েছে যার প্রতিটি রিপোর্টই বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বা সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির বিপক্ষে অথবা আওয়ামী লীগের পক্ষে।
যেমন, সর্বশেষ লেখাটিতে বলার চেষ্টা করা হয়েছে যে, জুলাই আগস্ট হত্যাযজ্ঞ নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি অসত্য ও ভুলে ভরা। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোন ভুল/অপকর্ম নিয়ে একটি রিপোর্টও নেই।
এটিও প্রপাগান্ডা বা ডিসইনফরমেশন ছড়ানো ওয়েবসাইটগুলোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য-- সবসময় বিবদমান দুটি গোষ্ঠির মধ্যে একটি গোষ্ঠির পক্ষে বা বিপক্ষে বলবে, কখনো উভয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলবে না।
এই সাইটের কোন লেখাই কারো নামে প্রকাশিত হয়নি-- এটিও ডিসইনফরমেটিভ ওয়েবসাইটগুলোর বৈশিষ্ট্য।