
Ahmad Musaffa (আহমদ মুসাফফা)
মাহফুজের সার্কেল মূলত ঢাবি বেইজড একটা ছোট্ট সার্কেল। সেখানে ওরা পাঠচক্র করত। পরে ওরা গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামে একটা ছাত্রসংগঠন গড়ে তুলে। এই ছাত্রশক্তির ছেলেপেলেরাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লার্টফর্মের নেতৃত্বে ছিল।
গণঅভ্যুত্থানের পরে মাহফুজ দেখতে পাইল সারাদেশের ছাত্রছাত্রীরা এই আন্দোলনে শরীক, কিন্তু ঢাবির কয়েকজন বাদে সে কাউকেই ব্যক্তিগতভাবে চিনে না। সারাদেশে ছাত্র আন্দোলনের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে মূলত ছাত্রশিবির, ছাত্রদল এবং রাজনীতি সচেতন ছাত্রদের তত্ত্বাবধানে। তাদের সেই সাংগঠনিক সক্ষমতা আছে। বিশেষ করে শিবিরের। প্রত্যেকটা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনশক্তি আছে। এরা সাধারণ ছাত্রদেরকে সাথে নিয়ে আন্দোলনে ঝাপায় পড়ছিল। প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে, এলাকায় এলাকায় যেসব সমন্বয়ক কমিটি গঠন হইছে সেখানে শিবিরে গিজগিজ করছে। মাহফুজ এটা জানত।
অভ্যুত্থানের পরপরই ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতৃত্বের ডাকের জন্য রেডি ছিল। যারা যারা আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিল, তাদেরকে নিয়ে এলাকা, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক একটা প্লাটফর্ম তৈরি করলে একটা বড় রাজনৈতিক দল দাঁড়িয়ে যেতে পারত। এটার একটা বিপ্লবী চরিত্রও থাকত। কিন্তু মাহফুজ মনে করছে এটা জামায়াত শিবির দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড একটা দল হয়ে যাবে। তাই অপেক্ষমান এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে সে তার ঢাবি সার্কেলের পরিচিত ভাই বেরাদার নিয়ে রাজনৈতিক দল গুছানো শুরু করে। এভাবেই ঢাবির বাইরের অন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রনেতৃত্ব বাদ পড়ে যায়। আন্দোলনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হইছে এইখানেই।
মাহফুজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকে নিতে রাজি ছিল না। সম্ভবত সে নিজেই সেই জায়গাটা নিতে চাচ্ছিল। কিন্তু তখন শিবিরের সাদিক কায়েম ছাত্রনেতৃত্বের মধ্যে একটা ইনফ্লুয়েনশাল ফিগারে পরিণত হইছে। সাদিক কায়েম ডঃ ইউনুসের ব্যাপারে নাহিদ, আসিফদেরকে রাজি করতে সমর্থ হয় এবং দেরীতে হলেও ইউনুসের পক্ষে ছাত্রদের আহবানবার্তা প্রচার করা হয়। সাদিক কায়েম নেতৃত্বের গুণাবলীসম্পন্ন একটা ছেলে। ছাত্রদের নতুন দলে তার একটা ভাল রাজনৈতিক সম্ভাবনা ছিল। এটা বুঝতে পেরে মাহফুজ সাদিক কায়েমকে মাইনাস করে। একে একে আন্দোলনের সাথে যুক্ত ঢাবি শিবিরের ইনফ্লুয়েনশাল নেতাদেরও মাইনাস করা হতে থাকে।
ভাই বেরাদার নিয়ে রাজনৈতিক দল গোছানোর প্রথম ধাপ হিসেবে মাহফুজেরা কিছু সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার সম্বলিত একটা কমিটি বানায়। কিন্তু মাইনাসের রাজনীতি করতে গিয়ে ততদিনে তৃণমূলের সাথে তাদের কানেকশন অলমোস্ট নাই হয়ে গেছে। তখন আবার ডাক পড়ল শিবির নেতাদের। সাদিক ততক্ষণে ঢাবি শিবিরের সভাপতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ফেলেছে। আলী আহসান জুনায়েদ, রাফে সালমান রিফাতরা ফিরে আসলো। আরেফিন ঢুকলো। আখতার হোসেন আবার সক্রিয় হল।
ফিরত আসা শিবিরের ছেলেপেলেরা তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা, কানেকশন দিয়া রুট লেভেলে নাগরিক কমিটির সংগঠন গোছানো শুরু করল। নাগরিক কমিটির রুট লেভেলের সংগঠনগুলোতে আবার প্রচুর শিবিরের মানুষজন ঢুকল। এখানে সবচেয়ে আইরনির ব্যাপারটা হচ্ছে, যে জামায়াত শিবিরের ইনফ্লুয়েন্স ঠেকাইতে বিপ্লব পরবর্তী অপেক্ষমান ছাত্র-জনতাকে মাহফুজ মাইনাস করে দিসিল, সেই তাকেই শিবির নেতাদের ডেকে এনে তৃণমূল পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গোছানো লাগল, যেখানে কমিটিগুলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জামায়াত শিবিরের মানুষ দিয়াই ভর্তি। মাঝখান দিয়ে সুবর্ণ সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে গেছে, মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ হয়ে গেছে। এতে নতুন রাজনৈতিক দলটির বিশাল সম্ভাবনাকেই শুধু সংকোচিত করা হল।
এডিট: আলী আহসান জোনায়েদ, রাফে সালমান রিফাত, আরেফিনসহ আরো অনেকে এই দল থেকে বেরিয়ে গেছে।
এই হল মাস্টারমাইন্ড সাহেবের রাজনীতি।