ড. মিজানুর রহমান বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের (২০১০-১৬) সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান।
প্রথম আলো: আপনি ছয় বছর মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। কিছু বিষয়ে আপনার উদ্বেগ ছিল। গত তিন বছরকে কীভাবে দেখছেন? একই রকম নাকি অবনতিশীল?
মিজানুর রহমান: বহুমাত্রিকতা আছে। অনেক সমস্যা নিয়ে কমিশনকে কাজ করতে হয়। মোটাদাগে বলি, যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছিলাম, সেখানে সাংঘাতিক উন্নয়ন ঘটেছে, তা আমি বলতে পারব না। বলা সম্ভব হচ্ছে না। দুঃখজনক হলেও কিছু ক্ষেত্রে বরং অবস্থার অবনতি ঘটেছে। মানবাধিকার কমিশনের কর্মকাণ্ডের ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, এটা বলতে পারলে খুশি হতাম।
প্রথম আলো: দেশের গণতান্ত্রিক ঘাটতির সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি?
মিজানুর রহমান: গত তিন বছরেই বদলে গেছে, এতটা সরলীকরণ করব না। তবে অভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের সময়ে কমিশন জনচেতনায় যতটা দৃশ্যমান ছিল, সেখানে আর কমিশন নেই। এটা শুধু রাজনৈতিক অবস্থার কারণে ঘটেছে, তা মানতে নারাজ। অবস্থার মৌলিক বদল ঘটেনি। কমিশনের কাজের সঙ্গে মানুষের অভিপ্রায়ের ঘাটতি দেখা যায়।
প্রথম আলো: এবারের গুম দিবসে একদল বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী বলেছেন, গত এক দশকে ২০৮৮ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গত বছরই নিহত ৪৬৫ জন। কেন এতটা বাড়ল?
মিজানুর রহমান: খুব গভীরে না গিয়ে বলব, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে একধরনের বেপরোয়া মনোভাব আমরা দেখি। তারা সবকিছুই করতে পারে এবং তাদের জবাবদিহির জায়গা বড় দুর্বল। অনেক ক্ষেত্রে সেটা যেন অনুপস্থিত। কখনো তারা এতটা বেপরোয়া মনোভাব দেখায়, তাতে মনে হয় তারা যেভাবে চাইবে, সেভাবেই করবে। তাদের চ্যালেঞ্জ করা বা কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মতো কোনো প্রতিষ্ঠান এই রাষ্ট্রে নেই। এই মনোভাবটিই আজকের এই অবস্থা তৈরির পেছনের কারণ মনে হয়।
প্রথম আলো: মানবাধিকার কমিশনের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক মুঠোফোনে আমাদের বলেছেন, তিনি দুই মেয়াদ সদস্য হিসেবে আপনার সঙ্গে এবং এক মেয়াদে চেয়ারম্যান হিসেবে বন্দুকযুদ্ধ ও গুমের ঘটনার পর সরকারকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু সরকারের তরফে কখনো বলা হয়নি যে এসব ঘটনায় কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। আপনার কী অভিজ্ঞতা? এই রাষ্ট্রযন্ত্র একটিও অন্যায় হত্যাকাণ্ড করেনি?
মিজানুর রহমান: ৯ বছর পেছনে ফিরে আমি একটি ঘটনা স্মরণ করতে পারি। তার নাম টিটো। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি তার বাড়ি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মোটরসাইকেল থেকে তুলে তাঁকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে এনে বলে যে, তারা জানে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত করে বলল, তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। অথচ মোটরসাইকেলটি তারা জমা করেছিল তেজগাঁও থানায়। আমরা সেই তদন্তের দুর্বলতা শনাক্ত করে ফেরত পাঠাই। তখন উচ্চপর্যায়ে নতুন তদন্ত হয়েছিল। জানা গেল, যাঁর নির্দেশে টিটো অপহৃত হন, তিনি যে বাহিনী থেকে র্যাবে এসেছিলেন, সেখানে ফিরে গেছেন। যেহেতু তিনি র্যাবে নেই, তাই কিছু করার নেই। কিন্তু হুকুমদাতা চিহ্নিত হওয়ার পরও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও আমরা কোনো জবাব পাইনি।
প্রথম আলো: নির্যাতনের বিষয়ে কারও বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি পেয়েছেন কি?
মিজানুর রহমান: দু–একটি ক্ষেত্রে গাফিলতির কথা বলে তারা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তবে কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানিয়ে চিঠি দেয়নি। আমরাও খুব ফলোআপ করতে পেরেছি, তা নয়।
প্রথম আলো: তাহলে এটা পরিষ্কার যে, জবাবদিহির অভাবেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম–নির্যাতন ইত্যাদি বেড়েছে।
মিজানুর রহমান: এটা আমি আগেই বলেছি। তাদের জবাবদিহি করার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান দেশে অনুপস্থিত।
প্রথম আলো: মাদকবিরোধী যুদ্ধে ৪৫৩ দিনে ৪২৮ জন নিহত হয়েছেন। আবার ২০১৮ সালে মাদক আইন সংশোধন হলো। আর সে কারণে দেশে এখন মাদক মামলার বিচার বন্ধ আছে। এই রাষ্ট্রের এত বড় সাংঘর্ষিক অবস্থাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
মিজানুর রহমান: যেকোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিটি অস্বাভাবিক মৃত্যু, তা বন্দুকযুদ্ধে হোক, চোরাচালানের সময়ে হোক বা হাসপাতালে মৃত্যু হোক, সেটা দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। রাষ্ট্র খুঁজে দেখে এতে কারও গাফিলতি বা কারও জবাবদিহির দরকার আছে কি না। মাদকের ছোবল থেকে সমাজ ও তরুণদের বাঁচাতে হবে, এর বিরোধিতা কেউ করে না। কিন্তু মাদকবিরোধী অভিযানের নামে যখন মানুষকে হত্যা করা হয় এবং তার কোনো তদন্ত হয় না—এর অর্থ দাঁড়ায় নির্বাহী বিভাগ হত্যার মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বিচার করছে। এই পরিস্থিতি সমগ্র দেশ ও সমাজকে একটি ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রথম আলো: দেশে গুম নেই, তাই গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সই করার গরজ বাংলাদেশের নেই। আপনি কমিশনে থাকতে গুম ব্যাপকতা পায়। প্যারিসের একটি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯-১৮ সময়কালে ৫০৭ জন গুম হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ৬৫ লাশ মিলেছে।
মিজানুর রহমান: পরিসংখ্যান কে কীভাবে করেছে, সেটা হয়তো বিতর্কের বাইরে নয়। তবে আইনে গুম নেই বলে দেশে কেউ গুম হয় না, এটা জনগণের সঙ্গে তামাশা। আমরা গুমকে বলেছি ভয়াবহ ও অগ্রহণযোগ্য। গুম হওয়ামাত্রই তীব্র প্রতিবাদ ও তদন্ত দাবি করেছি। গুমের অপসংস্কৃতির কারণেই মানুষের মধ্যে একটা অনিরাপত্তার বোধ তৈরি হয়েছে। এটা রাষ্ট্রের জন্য একটা দুঃসংবাদ। ষাটের দশকে লাতিন আমেরিকায় যখন গুম শুরু হয়, তখন সরকারগুলো এই একই সুরে বলত, কোথাও গুম নেই। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এসবের সঙ্গে একদম যুক্ত নয়। এটা নিশ্চয় কোনো দুষ্টচক্রের কাজ। যখন আমরা এখানে নিজেরাই নিজেদের গুম করে ফেলার কথা বলি, তখন তো সরকারের উচিত আরও জোরেশোরে তদন্ত করা। যারা এই কাজ করছে, তাদের ধরে, বিচারের মুখোমুখি করা কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজের মধ্যে পড়ে না? অপরাধীদের ধরিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রকেই প্রমাণ করতে হবে তারা গুম করে না। এমনটি করলেই তবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ওপর নাগরিকের বিশ্বাস পুনঃস্থাপন হতে পারে।
একটি ঘটনা আমাকে বড় বেশি বেদনাক্লিষ্ট করে। আমি কমিশনের চেয়ারম্যান থাকতে একদিন এক ভদ্রলোক আমার কক্ষে প্রবেশ করেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া পদক ও ভূষণে তিনি সজ্জিত। সামরিক কায়দায় তিনি আমাকে স্যালুট করলেন। ছোটখাটো মানুষ, কিন্তু বলিষ্ঠ হৃদয়। ভদ্রলোক বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ছিলেন। তাঁর ছেলে ছাত্রলীগ করতেন। মন্ত্রীদের সঙ্গে ছেলেটির বহু সভা–সমিতির ছবি আছে। কথা আছে, বলে পুলিশ ছেলেটিকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ বাবাকে বলেছিল, এক ঘণ্টা পর এসে ছেলেকে নিয়ে যাবেন। বাবা এক ঘণ্টা পর গিয়ে জানলেন, থানায় তাঁকে আনা হয়নি। এরপর আর তাঁর খোঁজ মেলেনি। বাবা যে যেখানে বলেছেন, সেখানে গিয়েছেন। প্রায় সব জেলা চষে বেড়িয়েছেন। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। র্যাবের তৎকালীন ডিজি একজন কর্নেল ছিলেন, বহুবার তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এক বছর বিরতিতে তিনি আবার দেখা করতে এলেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে জানালেন, ছেলের দুশ্চিন্তায় তাঁর স্ত্রী পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছেন। শেষবার তিনি বলেছিলেন, তাঁর স্ত্রী মৃত্যুশয্যায়। তাঁর স্বাস্থ্যও ভেঙে পড়েছে। তাঁরা দুজনেরই অন্তিম ইচ্ছা, যেন তাঁরা ছেলেটির হদিস পান। মরে গেলে তাঁর কবরের পাশে গিয়ে ছেলের জন্য দোয়া চাইতে পারেন।
প্রথম আলো: গুমবিরোধী ওই সনদের ২ ধারা বলছে, গ্রেপ্তার বা আটক করে লুকিয়ে রাখাটাও গুম। এটা ঘটছে না? ২০১১, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে গুম বিষয়ে জাতিসংঘ চিঠি দেয়, জানতেন?
মিজানুর রহমান: গুম যে ঘটছে, তা অনস্বীকার্য। তিন মাস আটকে রেখে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করার ২৪ ঘণ্টা আগে আটক দেখানো হয়। এ রকম কাগজে-কলমে অনেক কিছুই ওলটপালট দেখানো যায়, এসব কাজ করতে করতেই নিরাপত্তাহীনতার আবহ সারা দেশে তৈরি হয়। আর ওই চিঠির কথা সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছিলাম। কমিশন কপি পায়নি। আমরা অবশ্যই গুম বা আনঅ্যাকনলজেড ডিটেনশন সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।
প্রথম আলো: জাতিসংঘের কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার বা ক্যাট সাতটি সুপারিশ রেখেছে। বিশেষ করে তদন্তের বিষয়ে অস্বীকৃত আটক, গুম এবং হেফাজতে মৃত্যুর সব অভিযোগ দ্রুত ও বিস্তারিত তদন্ত আটককারীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা কর্তৃপক্ষের অধীনে করতে বলেছে। আপনার মনে আছে ইউএনডিপির খসড়া আইনে স্বাধীন পুলিশ কমিশন করার কথা বলা ছিল।
মিজানুর রহমান: দেখুন, আইন আপনাকে স্বাধীনতা যা–ই দিক, নিজেকে নিজে পরাধীন রাখলে তার কোনো প্রতিকার নেই। নিজেদের বিষয় নিজেদের দ্বারা তদন্ত করায় যে বিপদ আছে, সেটা তো আইনবিজ্ঞানের কথা, যা আমরা গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে বলে আসছি। তদন্তের দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত করার কথা আমরা আগে থেকে বলে আসছি। সেটাই এখন করা হোক। এই তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের তদারকি করবে সুপ্রিম কোর্ট। তাহলেই আপনি দেখবেন, আমাদের তদন্ত প্রক্রিয়ায় কী মৌলিক পরিবর্তন আসে। তখন আর জনগণকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হবে না। বরং যে উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে, সেই অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে আমরা দ্রুত এগিয়ে যাব।
এখন আপনি ওই তদন্ত বলুন, আর অস্বীকৃত আটক প্রতিরোধ বলুন, এটা তখনই সম্ভব যখন রাজনৈতিক অভিপ্রায় পরিষ্কার থাকবে। অঙ্গীকার থাকতে হবে যে, আমি আইনের ব্যত্যয় ঘটতে দেব না। আইন ও মানবাধিকার শুধু আইন মান্যকারীদের নয়, আইন অমান্যকারীদের জন্যও প্রযোজ্য। এই সরল সত্য রাষ্ট্রকে সবার আগে স্বীকার করে নিতে হবে।
প্রথম আলো: ৮ আগস্টে দেওয়া ক্যাটের সুপারিশে বলা আছে, যেকোনো পরিস্থিতিতে বিনাবিচারে আটক বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা হেফাজতে নির্যাতন না করা এবং ২০১৩ সালের নির্যাতনবিরোধী আইনের আওতায় কোনো বাহিনীকেই দায়মুক্তি দেওয়া হবে না। এই দুটি বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে হবে। আপনি কি এ রকম কোনো ঘোষণা শুনেছেন?
মিজানুর রহমান: না। তবে পুলিশ দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনারা যখন আইন প্রয়োগ করবেন, তখন মানবাধিকারের প্রতি আপনাদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। সরকারপ্রধানের এই স্পষ্ট উচ্চারণকে যদি আমরা একটি নীতিতে রূপান্তরিত করতে পারতাম এবং সেই উদ্দেশ্যে যদি জবাবদিহির জায়গায় একটা পরিবর্তন আনতে পারতাম, তাহলে বেশ কিছু জায়গায় আমরা বড় অগ্রগতি দেখতাম।
প্রথম আলো: ক্যাটের সুপারিশে পার্বত্য চট্টগ্রাম এসেছে। মানবাধিকারকর্মীরা কল্পনা চাকমার নিখোঁজ থাকাসহ তিনটি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কথা বলেছেন। আপনার কি মনে হয়, এই অঞ্চলে গত এক দশকে ভালো অগ্রগতি হয়েছে?
মিজানুর রহমান: সেখানে প্রচুর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেছে। এখন একে উন্নয়ন বলে সংজ্ঞায়িত করলে উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সব উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু যদি মানুষ হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের অনেক ঘাটতি আছে। এটা আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে। আগে মনে হতো, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বড় অগ্রগতি হবে। কিন্তু সেই পথচলা এখন স্তব্ধ হয়ে আছে। পার্বত্যবাসীর মধ্যে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আমাদের আইন বিভাগের ছাত্র, সাহসী তরুণ নেতা শক্তিমান চাকমাকে যেভাবে হত্যা করা হলো, তা আমরা স্মরণ করতে পারি। কেন তাঁকে প্রাণ দিতে হলো, তা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়।
প্রথম আলো: ক্যাট রোহিঙ্গাদেরও আইনি সহায়তা ও দেশের আদালতে যাওয়ার সুযোগ দিতে বলছে। সম্ভব? আবার দেখুন প্রত্যাবাসন হলো না।
মিজানুর রহমান: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের কাছে অনেক বেশি সুবিধা চাইছে। কিন্তু আমাদের সমস্যাগুলো সম্ভবত অতটা গভীরতায় খতিয়ে দেখে না। তবে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আমরা বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের ওপর নির্ভর করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে ফল মেলেনি। চীনের মধ্যস্থতায় কিছু হবে, সেই ভরসাও করা যাচ্ছে না। রাশিয়াও মিয়ানমারের পাশে। এই অবস্থায় নতুন করে রোহিঙ্গা ইস্যু আন্তর্জাতিকীকরণে গতি আনার দুরূহ কাজটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করতে পারলে সাধুবাদ দেব।
প্রথম আলো: ভারতের আসামের নাগরিকপঞ্জিতে ১৯ লাখ মানুষ ‘বিদেশি’ হিসেবে নাগরিকত্ব হারাল। সম্প্রতি দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বিষয়টি প্রথমবারের মতো উঠেছে। রোহিঙ্গাদের পর আরেকটি উদ্বাস্তু সংকটের আশঙ্কা করছেন কি?
মিজানুর রহমান: এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদিও বিষয়টিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বলছেন, কিন্তু আমরা জানি না, আমাদের স্বপ্নভঙ্গ হবে কি না। একটা অশুভ ইঙ্গিত এল, এমন এক সময়ে, যখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে যদি বাংলাদেশে পুশব্যাকের চেষ্টা করা হয়, সেটা কীভাবে মোকাবিলা করব, কীভাবে তা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াল। আমরা দেখতে চাই স্বার্থ বিসর্জন না দিয়ে রাষ্ট্র যেন এটা মোকাবিলা করার একটা শক্ত অবস্থান নেয়।
প্রথম আলো: মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার আর কোনো মন্তব্য? মানবাধিকার কমিশন এক মাস ধরে নেই। একজন আমলার পর আবারও আমলাকে চেয়ারম্যান করার কথা শোনা যাচ্ছে।
মিজানুর রহমান: সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, আইন প্রয়োগকারী বাহিনী বা নির্বাহী বিভাগের কারণে আমরা বিচার বিভাগকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছি। সাক্ষ্য-সাবুদবিহীন মোবাইল কোর্ট এবং আইন প্রয়োগকারীদের কার্যক্রমে যেন একটা ‘মব জাস্টিস’ শুরু হয়ে গেছে। মানবাধিকার কমিশন এক দিনের জন্য শূন্য রাখাও দুর্ভাগ্যজনক। আর নতুন কমিশনে আমলাতন্ত্রকে দূরে রাখাই শ্রেয়।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
মিজানুর রহমান: ধন্যবাদ।
প্রথম আলো
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন