আগষ্টের ৫ তারিখ অমিত শাহ‘র প্রস্তাব মোতাবেক কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়। ভারতীয় সংবিধান থেকে বাতিল করা হয় ৩৭০ ধারা। বিপুল পরিমান সেনা মোতায়েন করে পুরো কাশ্মির অবরুদ্ধ করে নিজেদের মিডিয়াতে প্রচার করা হয় যে, কাশ্মিরে শান্তি বিরাজ করছে। আসলে ঘটনা ছিল উল্টা। এবং এই সেনা নিয়ন্ত্রণ সিথিল হলে কাশ্মিরের অবস্থা ভারত কিভাবে সামাল দিবে এটাই হল মূল পরীক্ষা।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দি ক্যারাভানের সহকারি সম্পাদক আরশু জন কথা বলেছেন সাবেক ‘র’ প্রধান ও ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ পরিচালক এ এস দৌলাত’র সাথে। সাক্ষাৎকারটি জবানের জন্য ক্যারাভান থেকে অনুবাদ করেছেন তুহিন মোহাম্মদ।
আরশু জন: ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলকরণ এবং জম্মু ও কাশ্মিরকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রস্তাব সম্পর্কে আপনি কি মন্তব্য করবেন?
এ এস দৌলাত : এটি দুখঃজনক ও দূর্ভাগ্যজনক বিষয়। আমার মনে হয়না এটা জরুরি ছিল। আমাকে জানানো হয়েছিল যে ৩৭০ ধারা ইতিমধ্যে বিলোপ করা হয়েছে, এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও সংসদে সেরকম জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, আমরা এখন শুধু এই প্রক্রিয়াটির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করছি। তিনি ঠিক বলছিলেন, ধারাটির বিলোপ সংঘটিত হয়ে গেছে। আমি বহুবার বলেছি যে ৩৭০ ধারা কিছুই না, এটি একটি মামুলি বিষয় মাত্র। তাই কেন এই মামুলি বিষয়টা মুছে ফেলা হবে না। কেন আপনি কাশ্মিরিদের নাকে খত দেয়াতে চান? এটা হতে দিন, ৩৭০ ধারা কিছুই না।
আমাকে ১৯৪৭ সালে কাশ্মিরের ভারতভুক্তিতে ফিরে যেতে হবে। একেবারে শুরুতে, ভারতের পলিসি এবং চেষ্টা ছিল মূলধারার কাশ্মিরকে ভারতের অন্যান্য অংশের সাথে প্রবাহিত করা। এবং আমি মনে করি ভারত বিস্তৃতভাবে সফল হয়েছিল। যদি আপনি ১৯৪৭ এবং ১৯৫৩ এমনকি ১৯৭৫ ফিরে যান, যখন জম্মু ও কাশ্মির ন্যাশনাল কনফারেন্সের সাবেক প্রধান শেখ আব্দুল্লাহ বুঝতে পেরেছিলেন দিল্লীর সাথে লড়াই করা সম্ভব না এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা সর্বোৎকৃষ্ট।
সর্বোপরি কাশ্মিরিরা স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিল। কিন্তু যখন স্বায়ত্তশাসনের কথা হচ্ছিল, তখন কাশ্মিরিরা জানতো শেখ আব্দুল্লাহ স্বায়ত্তশাসন পাবে না। আমি যেটা বলতে চাইছি যে আমি মনে করি কাশ্মিরিরা স্ট্যাটাস ক্যুতে পুনর্মিলিত হতে পেরেছিল। যদি এটা স্পষ্ট যে দিল্লী কিছু ক্ষেত্রে স্ট্যাটাস ক্যু বজায় রাখতে পারেনি এবং যে কারণে আমরা এই স্ট্যাটাস ক্যুর বাইরে চলে গেছি।
সন্ত্রাস সম্ভবত বাড়বে। আমি মনে করিনা এটা এখনি ঘটবে, কিন্তু তেমন সময় আসবে। আমি মনে করি, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির হাতে এখন একটি দায়িত্ব তৈরি হয়েছে, কি ঘটতে যাচ্ছে তা অনুসরণ করা।
হয়তো এটা সঠিক চিন্তা, সেটা অবশ্য সময়ই বলবে। যেমন সিনিয়র কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরাম বলেছেন, “আজকে যা ঘটেছে হতে পারে এর স্থপিতরা একদিন এর জন্য অনুশোচনা করবে এবং আমি আশা করি আমি ভুল।” আমারও একই রকম মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার সত্যিই আশঙ্কা যে— এমন ব্যক্তি যিন কাশ্মিরকে ভাগ এবং ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড টেরর’ এর অনুষঙ্গ হিসেবে দেখেন, তাদের সংখ্যাটা বাড়বে। সন্ত্রাস সম্ভবত বাড়বে। আমি মনে করিনা এটা এখনি ঘটবে, কিন্তু তেমন সময় আসবে। আমি মনে করি, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির হাতে এখন একটি দায়িত্ব তৈরি হয়েছে, কি ঘটতে যাচ্ছে তা অনুসরণ করা।
আমি আরেকটি পয়েন্ট তৈরি করতে চাই, সেটা হলো— সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাশ্মির অন্যতম একটি ট্রাজেডি হলো নেতৃত্বের অভাব। এই নেতৃত্ব হয় স্বার্থপর না হয় নিজেকে অধিক মূল্যবান মনে করছে কিংবা নিজেকে অবমূল্যয়ন করছে, মূলত সেখানে কোন নের্তত্বই নেই। আমার বইয়ে বলেছি, কশ্মিরে একমাত্র নেতা ড. ফারুক আব্দুল্লাহ [ ন্যাশনাল কনফারেন্সের চেয়ারপারসন এবং সাবেক মূখ্যমন্ত্রী]। তিনি কাশ্মিরকে বোঝেন, তিনি দিল্লীকে বোঝেন, তিনি পাকিস্তানকে বোঝেন এবং তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্কটা বোঝেন। মুফিত সাহেবা [ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ জম্মু অ্যান্ড কাশ্মির’র সাবেক প্রধান এবং দুই বারের মুখ্যমন্ত্রী] দুঃখজনকভাবে তিনি এগুলোর কিছুই বুঝতেন না। তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন কিন্তু তিনি দিল্লীকে বুঝতেন না।
একটা বিষয় আপনি বারবার বলেছেন যে ৩৭০ ধারা একটা ফাঁপা বিধান ও তুচ্ছ বিষয়। আপনি কি মনে করেন, এই সরকার এটি বিলোপে নেতৃত্ব দিয়েছে।
আমি মনে করি একটি বিজেপি’র এজেন্ডার অংশ। তিনমাস আগে বিজেপি যে শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছে, তাতে যা ঘটেছে তা বিস্ময়কর নয়। আমি মনে করে করি এখানে কিছু ভুল কংগ্রেস বা বিরোধীদের রয়েছে— কারণ বিরোধীরা খুবই দুর্বল। কোথায় কংগ্রেস? কী হয়েছে তাদের? ১৯ জানুয়ারি যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কলকাতার প্যারেড গ্রাউন্ডে একটা বড় আয়োজন করলেন। সেটা ছিলো দারুণ শো, একটা ত্রিমাত্রিক শক্তির প্রদর্শন। কেন তারা একত্রিত হতে পারলো না? কেন তাদের একত্রে আনা সম্ভব হলো না? এর দায়ভার প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের মধ্যে নিহিত।
বিজেপির এই এজেন্ডা এবং এর শেষ আপনি কীভাবে ব্যাখা করবেন?
তারা বলেছিলো যে তারা ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা বিলোপ করবে। এর শেষ বিজেপিকেই জিজ্ঞেস করতে হবে। আমরা এটাকে অগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে নিলেও পারতাম, কিন্তু বিজেপির কাছে এটি ছিল সিরিয়াস ইস্যু এবং এটি তারা চটজলদি করেছে।
আমাকে যে বিষয়টি সত্যিই আঘাত দিয়েছে তা হল— কাশ্মিরে একটা বিশাল সংকট তৈরি হচ্ছে— আপনি সেটা দেখতে পাচ্ছেন, কাশ্মিরের দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রত্যেকেই সেটা দেখতে পাচ্ছে। আমি জানিনা কাশ্মির থেকে ঠিক কতগুলো ফোনকল পেয়েছি। আমি বুঝতে পারছি যে কিছু একটা হতে যাচ্ছে। কিন্তু কোথায় নেতৃত্ব? সেখানে জনগণকে পথ দেখানোর কেউ নেই কিংবা এটা বলার মতো কেউ নেই যে— ভয় নেই আমরা সবাই এক, আমরা একসাথে থাকবো। কাশ্মিরের টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগের দিন আমাদের কাছে কাশ্মিরের মূলধারার রাজনৈতিক দলের একটি ছবি এসছে । এবং এটি একটি ছবির চেয়ে বেশি কিছু। রাজনীতিবিদরা কোথায়? কেন আপনি এটা প্রত্যাশা করেন না?
কাশ্মিরে কিছুই ঘটবে না। কাশ্মির যখন সে চাপের মধ্যে থাকে, তারা বালিতে মাথা চাপা দেবে এবং নিচে পড়ে থাকবে। এটা স্বাভাবিক, যেভাবে কাশ্মিরে ইতিহাস তৈরি হয়। এবং তারপর সে আবার জেগে উঠবে— সে হাল ছাড়বে না।
কী মনে হয়, এখন কী ঘটবে? যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে সেখানে কী ঘটছে তা আমরা জানি না, কিন্তু আপনি কী অনুমান করছেন, কাশ্মির কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে?
কাশ্মিরে কিছুই ঘটবে না। কাশ্মির যখন সে চাপের মধ্যে থাকে, তারা বালিতে মাথা চাপা দেবে এবং নিচে পড়ে থাকবে। এটা স্বাভাবিক, যেভাবে কাশ্মিরে ইতিহাস তৈরি হয়। এবং তারপর সে আবার জেগে উঠবে— সে হাল ছাড়বে না।
এই ক্ষেত্রে, এই মাত্রায় সেনা মোতায়েন জরুরি ছিল বলে আপনি মনে করেন?
এটা শক্তির প্রদর্শন হতে পারে। তারা বলছে, ওখানে পাকিস্তানের হুমকি আছে। হতে পারে ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলোর কাছে এ বিষয়ে কিছু আছে? আমি জানি না।
এটি কি কাশ্মিরে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা?
আমি বলতে পারি না। আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো অবস্থানে নেই।
তারপরও, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারের এই প্রতিক্রিয়া কি জানান দিচ্ছে বলে মনে করেন?
আমি শুনেছি তাদেরকে গৃহবন্দী করা হয়েছে, কিন্তু তুমি বলছো যে তাদের গ্রেফতার করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সম্ভবত এটি ঘটেছে কারণ ওমর এবং মেহবুবা দুজনই টুইট করেছিলেন। মেহবুবা বলেছিলেন যে এটি কাশ্মিরের ইতিহাস এবং গণতন্ত্রের সবচেয়ে অন্ধকার দিন। এবং ওমর বলেছিলেন যে এটি তাদের সংগ্রামের শুরু মাত্র— সুতরাং সম্ভবত এটি বন্ধ করতেই এমনটা করা হয়েছে।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ দিল্লীর রাজনীতিবিদরা বলছে যে এই পদক্ষেপ শান্তি উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা আনতে চলেছে?
আমি আশা করি, কেজরিওয়াল সঠিক বলেছেন। ঈশ্বর কেজরিওয়ালের মঙ্গল করুন।
কিন্তু আপনার মতামত কী?
আমরা প্রত্যেকেই বিবৃতি দিতে পারি, কিন্তু দয়া করে ব্যাখা করুন কীভাবে হবে, কীভাবে এই উন্নয়ন অগ্রসর হবে যখন দিল্লী শাসনে থাকছে ? ধরা যাক যে যখন কাশ্মিরে গভর্নর বা রাষ্ট্রপতি শাসন জারি ছিল, সেখানে দিল্লীর শাসন চলেছে। আপনি কি সেখানকার উন্নয়ন কিংবা উৎকর্ষসাধনে কোন অগ্রগতি দেখেছেন? আমি কিছুই শুনিনি— যদি সেটা হয় তাহলে ভালো কথা। দেখুন, জটিলতাটা পরিষ্কার। এখন শুধু ৩৭০ ধারা এবং ৩৫-এ বিলোপের কারণে কাশ্মির কেন্দ্রের একটি অঞ্চলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে। আমরা কিছুতেই কোন ভাড়ামি সহ্য করবো না। এতে কাশ্মির অবশ্যই দিল্লী দ্বারা শাসিত হবে।
যখন কাশ্মির দিল্লী কর্তৃক শাসিত হয়, যখন সেটা কেমন সমালোচিত হয়? ইতিহাস কী বলে?
আমাদের ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সালের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। সেই সময়ের কিছু বিষয় ছিল খুবই খারাপ আবার কিছু বিষয় ছিল খুবই ভালো কিন্তু পরিশেষে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি রাও, যিনি ছিলেন জ্ঞানী এবং সল্পভাষী, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পুনরুদ্ধার এবং সামনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া এটি আর কাজ করবে না। প্রাক্তন বিজেপি প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর আইডিয়া কি ছিল? একই রকম। তিনি দুটি বিষয়ে বিশ্বাস করতেন—এক, পাকিস্তানের সাথে আমাদের লড়াইয়ের স্থায়ী অবসান এবং দুই, কাশ্মিরে আমাদের এগিয়ে যাওয়া।
২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোদি সরকারের অধিনে কাশ্মিরে এগিয়ে যাওয়ার কোন পদক্ষেপ লক্ষ করেছেন?
না। সময়ে সময়ে এই সরকার বলেছে যে তারা বাজপেয়ীকে অনুসরণ করছে কিন্তু তা সত্য নয়। এমনকি বাজপেয়ী পার্টিতে একজন অগ্রহণযোগ্য ধারা হয়ে উঠেছে— কেউই তাকে অনুসরণ করে না। দুঃখজনকভাবে বাজপেয়ীর উত্তরাধিকার শেষ হয়ে গেছে। তুমি জানো, ২০১৪ সালে যখন মোদিজি ক্ষমতায় এসেছিলো, অন্যদের মতো কাশ্মিরের হেড ক্লারিক উমর ফারুক মিরওয়াইজও তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে আমরা খুবই আনন্দিত এবং আমরা আশা করি যে মোদি বাজপেয়ীর শান্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু সেই চিন্তা-ভাবনা এখন আলাদা হয়ে গেছে।
যদি বাজপেয়ীয়র মতার্দশ এগিয়ে যেত এবং মোদির চিন্তা পৃথক হয়ে থাকে, তাহলে মোদি কি বিষয়টি আরও পিছিয়ে দিচ্ছেন?
সময় বলবে, ইতিহাস বলবে।
যদি মেহবুবা মুফতি সাহেবা এবং ড. ফারুক কাশ্মিরে রাজনৈতিকভাবে একসাথে কাজ করতেন— এমনকি এক পার্টিতে না হওয়া সত্ত্বেও— যদি তারা রাজনৈতিকভাবে এক থাকতেন এবং আমরাও কাশ্মিরের স্বার্থে এক থাকতাম, আমাদের পরিবার কিংবা আমাদের পার্টির স্বার্থের বাইরে গিয়ে। কাশ্মির অন্য রকম হতো।
পাঁচ বছর ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে।
আমি সবসময় একটা বিষয় মেইনটেইন করি— সেটা হলো একজন প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হয় সংকটের সময়ে। বাজপেয়ী তিনি গুরুতর সংকট মোকাবেলা করেছেন— তিনি ১৯৯৯ সালে কার্গিল পেয়েছেন, ২০০১ সালে ভারতের সংসদে হামলা পেয়েছেন এবং ১৯৯৯ সালে ভারতীয় এয়ার লাইনস ফ্লাইট আইসি’র ছিনতাই পেয়েছেন। তিনটি ঘটনাই তিনি খুবই ঠাণ্ডা মাথায় এবং কার্যকরভাবে মোকাবেলা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একটা বড় ধরনের সংকট মোকাবেলা করেছেন, তিনি ২০০৮ সালে ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলা মোকাবেলা করেছেন। মানুষ বলাবলি করছিল ভারত এবং পাকিস্তান যুদ্ধে লিপ্ত হবে কিন্ত না তিনি এটা আরও পরিপক্কভাবে মোকাবেলা করলেন। মোদি আসলে ভাগ্যবান। তিন মাত্র একটি গুরুতর সংকটে পড়েছিলেন। সেটা পুলাওয়ামা এবং ভাগ্য তার সাথে ছিল, তিনি বরং এটা থেকে উপকৃত হয়েছিলেন।
বাজপেয়ীর সাথে কাজ করার সময়, ৩৭০ ধারাকে বিলোপের বিষয়ে কখনো কিছু ভেবেছিলেন কি?
না। এ বিষয়ে কোন কথা হয় নি। পার্টি লেভেলে, হতে পারে তারা কথা বলতো। হতে পারে নাগপুরে কিংবা বিজেপিতে, কিন্তু সরকারের মধ্যে এ বিষয়ে কখনো কথা হয়নি। শুধু বাজপেয়ী না আমি প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রজেশ মিশ্রর সাথেও ঘনিষ্ঠ ছিলাম। যদি রাজনীতিবিদরা কিছু না বলতো অন্তত ব্রজেশ সেটা আমাকে বলতো— কিন্তু সেরকম কিছুই শোনা যায়নি।
যদি আমি খানিক আগে আলোচনা করা বিষয়ে ফিরে যাই, যেখানে আপনি বলছিলেন নেতৃত্বের অভাবের কথা, সেটা কিভাবে?
গত নির্বাচনে কাশ্মিরকে সবচেয়ে সংবেদনশীল প্রদেশ বিবেচনা করে সংসদে মাত্র ছয়টি আসন রাখা হয়েছে। আমি মনে করি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যখন শ্রীনগর গিয়েছিলেন, বিষয়টা বিশাল প্রভাব ফেলতে পারতো। যদি সেখানে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের মধ্যে সঠিক সমন্বয় ঘটতো তাহলে জম্মুর দুটি আসনেই কংগ্রেসের জেতার উচিত ছিল।
আপনি কি মনে করেন এটি অর্জন করতে পারতো?
এটি আবারও একটি নেতৃত্বের প্রশ্ন, কাশ্মির কী এবং কিভাবে প্রভাব ফেলে সে প্রশ্ন। যখন কংগ্রেস বিরোধী দলে ছিল, তরুন ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিক ও মিরওয়াইজ সোনিয়া গান্ধীর সাথে দেখা করতো এবং তিনিও তাদের অভ্যর্থনা জানাতেন। কিন্তু যখন কংগ্রেস ক্ষমতায় এলো তারা দেখা করা বন্ধ করে দিল। যখন তিনি একটা বিষয় দেখলেন- কেন? একই ভাবে কেন রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা নির্বাচনের সময় বা পরে কাশ্মির গেলেন না, যখন সেখানে অন্যায় হচ্ছে? চিদাম্বারাম বলছিলেন, তিনি যখন অফিস ছাড়ছিলেন তখন তিনি কাশ্মিরে নিরপেক্ষ মডিউলগুলো নিয়ে অনেক কাজ করেছিলেন। তিনি আরও বলছিলেন, “বলতেই হয় আমাদের ভাগ্য সহায় ছিল”। অমিত শাহেরও চিদাম্বরামের মত ভাগ্য প্রয়োজন।
আপনার কি মনে হয় কাশ্মিরিদের যোগ্য নেতৃত্ব বিজেপিকে ৩৭০ ধারা বাতিলকরণে কার্যকরভাবে বাধা দেবে নাকি এটা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের দেয়া উপসংহার?
আমি মনে করি এটা ওই দুটোরই সমন্বয়।
এবং আপনি কি মনে করেন পূর্ববতী সময়ে কাশ্মিরে উপযুক্ত নেতৃত্বে এটি আটকাতে পারতো?
হ্যাঁ, অবশ্যই। যদি মেহবুবা মুফতি সাহেবা এবং ড. ফারুক কাশ্মিরে রাজনৈতিকভাবে একসাথে কাজ করতেন— এমনকি এক পার্টিতে না হওয়া সত্ত্বেও— যদি তারা রাজনৈতিকভাবে এক থাকতেন এবং আমরাও কাশ্মিরের স্বার্থে এক থাকতাম, আমাদের পরিবার কিংবা আমাদের পার্টির স্বার্থের বাইরে গিয়ে। কাশ্মির অন্য রকম হতো।
রাজনৈতিক সংলাপের ক্ষেত্রে কাশ্মিরের বর্তমান অবস্থা কেমন?
সংলাপের আর কোন সুযোগ নেই। এমনকি সবচেয়ে অনুকূল সময়েও কথা বলাটা সহজ ছিল না। এখন কে যাবে কথা বলতে? আর কী-ইবা বলতে যাবেন?
কাশ্মিরের ভবিষ্যৎ কী?
সময়ই বলবে। তাছাড়া এখন সুপ্রিম কোট অন্য একটা উপায় হতে পরে।
দ্যা জবান
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন