ড. রেজা কিবরিয়া, আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে। উপমহাদেশের রাজনৈতিক ঐতিহ্য অনুযায়ী সন্তানের রাজনীতিতে বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে থাকেন। কিন্ত রেজা কিবরিয়াএখানে স্পষ্ট ব্যতিক্রম। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে তিনি কখনো সম্পৃক্ত ছিলেন না। তার সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা গণফোরামের মাধ্যমেই্। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীর পুত্র হয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে গণফোরাম তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়ে আলোচনা তৈরি করেন। প্রশ্নবিদ্ধ ওই নির্বাচনে তিনি হেরে যান।ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের মহাসচিব হয়ে আরেকবার ওঠে আসেন আলোচনায়। ড. রেজা কিবরিয়ার রাজনৈতিক ভাবনা জানতে পূর্বপশ্চিম সম্প্রতি তার মুখোমুখি হয়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আরিফুল ইসলাম।
পূর্বপশ্চিম: গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হওয়া অভিনন্দন। আপনি তো রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না, এর মধ্যে এসেই দায়িত্ব পেলেন, নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন? ড. রেজা কিবরিয়া: খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি, আমি রাজনীতিতে ছিলাম না, কিন্তু আমার আব্বার ২০০০ সনের নির্বাচনে যুক্ত ছিলাম। এলাকায় মানে হবিগঞ্জ- ১ এলাকায় অনেক কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আমাদের নেতাদের মধ্যে, তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে খুব সাড়া পাচ্ছি। আর এখানে তো সবাইকে খুশি করা যায় না। চেষ্টা করছি সবাইকে খুশি করতে। যারা খুশি নন, তারাও অচিরেই খুশি হবেন বলে আশা করছি। দলের নতুন এই অবস্থা দেখে সবাই খুশি হবেন। এবং সংগঠনকে চাঙ্গা করতে সবাই এক হয়ে কাজ শুরু করবেন।
পূর্বপশ্চিম: দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেয়ায় মোকাব্বির খানকে নিয়ে তো গণফোরামে বিতর্ক আছে, তবুও উনাকে দলের সভাপতি পরিষদের নেতা করা হয়েছে। মোকাব্বির খানের মত সুলতান মনসুরও শপথ নেয়ায় বহিষ্কার হয়েছিলেন। উনাকে নিয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি? ড. রেজা কিবরিয়া: উনাকে দল থেকে একটা শোকজ দেয়া হয়েছিল। উনি সেটার জবাব দিয়েছেন, সেই উত্তরে সভাপতিমন্ডলি সন্তুষ্ট হয়েছেন। বিষয়টা নিষ্পত্তি হওয়ায় তাকে দলে আবার ফেরানো হয়েছে। সুলতান মনসুরের বিষয়টা ভিন্ন। মোকাব্বির খান আগে থেকেই দলের সভাপতি পরিষদে ছিলেন। উনাকে (সুলতান মনসুর) আগের কমিটি বহিস্কার করেছিল। এখন উনি যদি দলে আসতে চান, উনি আবেদন করতে পারেন। তাহলে আমরা বিষয়টি বিবেচনা করব। তবে আমরা এখনও এমন কোন আবেদন পাইনি।
পূর্বপশ্চিম: গণ ফোরামের বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা কেমন? কতগুলো জেলায় আপনাদের সক্রিয় কাজ আছে? ড. রেজা কিবরিয়া: সাংগঠনিক অবস্থা আরও শক্তিশালী করা দরকার। অনেক জায়গায় সংগঠন আছে, তবে সেভাবে কাজ হচ্ছে না। তারা সক্রিয় নন, সেভাবে। আমাকে মূলত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেগুলোকে সক্রিয় করে তুলতে। তরুণ প্রজন্মদেরকে দলে নিয়ে আসতে। যারা এবার প্রথম ভোটার হয়েও ভোট দিতে পারেন নি, তাদেরকে দলে নিয়ে আসতে চাই। কারণ এই প্রজন্ম বঞ্চিত হয়েছে। আর এরাই আমাদের দেশকে অনেক সমস্যা থেকে উদ্ধার করতে পারে। তাদের সক্রিয় রাজনীতিতে নিয়ে আসাটা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব।
পূর্বপশ্চিম: গণফোরাম তো দেশে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে, কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে তেমন সারা ফেলতে পারেনি। তবে আপনাদের দলের টিকিটে দুজন সাংসদ পেয়েছেন। এক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকা কতটুকু? ড. রেজা কিবরিয়া: এই প্রশ্নটা করবেন যখন আমরা দেশে সত্যিকার একটা নির্বাচন পাবো। তখন এটার উত্তর পাবেন। জনগণ আসলে কি চায়, সেই উত্তর পেতে আগে সুষ্ঠু নির্বাচন পেতে হবে। এবার এমন এক নির্বাচন হল, যেখানে আগের রাতেই ভোট হয়ে যায়। নিজের ভোটটাও কেউ পায়না। কিন্তু যখন দেশে আসল নির্বাচন আসবে, এবং সেটা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি, আশা করি আমরা সবাই সেটা দেখতে পারব। যখন একজন মানুষ একটা ভোট দেবে, সবাই নিজের ভোটটা দিতে পারবে তখন আপনারা প্রশ্ন করলে আমি জবাব দিতে পারব। তখন বলতে পারব আমরা কতটা সফল। আমরা জনগণের কতটা আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। মানুষ আমাদের উপর ভরসা করে আমাদের উপর দায়িত্ব দেবে কি না তখন বলতে পারব। এখানে অন্য কারো ভূমিকা কতটা আছে বা না আছে সেটাও তখন বলতে পারব।
পূর্বপশ্চিম: ভোট যদি আসল না হয়, আবার আপনারা যদি সংসদেও যান, তাহলে সেটা ভোটকে মেনে নেয়াই নয় কি? ড. রেজা কিবরিয়া: এটা একটা পরিস্থিতি। যেখানে আমার মনে হয় প্রথমে গেলে একটা ভুল বুঝাবুঝি হত। তবে এখন সেটা মানুষের কাছে পরিস্কার। মানুষ বুঝেছে এটা কোনমতেই বৈধ ছিল না। এটাতে অনেক খুত ছিল, সেটা আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনারও স্বীকার করেছেন। আমিতো শুধু আমার আসনের কথা বলতে পারি, উনিতো পুরো দেশের খবর জানেন। তিনি (নির্বাচন কমিশনার) যখন এই কথা বলছেন, তখন এটা প্রমানিত যে নির্বাচনে বড় ত্রুটি ছিল। আর এরপরেও ৫জন সাংসদ সংসদে যাওয়া না যাওয়ায় আসলে নির্বাচন মেনে নেয়া প্রমানিত হয় না। ৫জনই বলবো। সুলতান মনসুরের কথা বলবো না, কারণ যিনি ধানের শীষ মার্কা নিয়ে ভোট করলেন, সংসদে গেছেন, তারপর সরকারের কথায় কথা বলছেন। উনার কথা বলব না। তবে আমাদের ৫জন সদস্য সংসদে এটার প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেবেন। আশা রাখি তাদেরকে সংসদে কথা বলতে দেয়া হবে। আপনি দেখেছেন মোকাব্বির খান সংসদে গিয়েই দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া দরকার উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন।
পূর্বপশ্চিম: নির্বাচন না মেনেও শেষ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্ট সংসদে গেল, এটা কি পূর্বপরিকল্পিত ছিল? ড. রেজা কিবরিয়া: কয়েকজন এক্সিডেন্টলি নির্বাচিত হয়েছেন। সেখানে যতটা জালভোট দেয়ার কথা প্রশাসন ততটা দিতে পারেনি। কয়েকটা জায়গায় এমন হবে সেটা আমরা ভাবিনি। কিন্তু আমরা মনে করিনা এটার উপর বেশি ফোকাস করা দরকার। কয়েকজন সংসদে যাওয়াটা এত বড় বিষয় নয়। দেশে অনেক বেশি সমস্যা রয়েছে। যারা এটা নিয়ে বেশি কথা বলছে, তারা রাজনৈতিকভাবে আমাদের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিসয় নয়। বরং দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। দেশে আর্থিক বৈষম্যতা, ব্যাংকিং খাতে অরাজকতা, রাস্তায় বের হলে আপনি বলতে পারবেন না ঠিকমত ঘরে ফিরতে পারবেন কি না? বাক স্বাধীনতা নেই, ধর্ষণ মহামারি আকার নিয়েছে। দেশে কৃষকের মধ্যে হাহাকার, ধানের দাম পাচ্ছে না। সবজি রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে, পাটকল কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছে না। অথচ ঋণ খেলাপিদের টাকা মাফ করে দেয়া হচ্ছে। বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে, চাঁদাবাজি কমে নি। জনগণের আসল সমস্যাগুলো সামনে আসছে না। মানুষ ডিগ্রি পাচ্ছে, চাকরি পাচ্ছে না। এশিয়ার প্রথম ৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমাদের একটাও নেই। নেপালের ২ টা বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকায় আছে, তাদের তুলনায় আমাদের দেশের কমপক্ষে ২০ টা বিশ্ববিদ্যালয় ওই তালিকায় থাকা দরকার ছিল। কিন্তু খুব লজ্জার যে, আমাদের একটাও নেই। কিন্তু তারচেয়ে বড় হল, এটা নিয়ে আমাদের রাজনীতিবিদ বা বুদ্ধিজীবীরা খুব বেশি কথা বলছেন না। আমি ঢাবিতে শিক্ষকতা করেছি। আমার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে, কারণ এটার উপর ফোকাস করা উচিত। সাংবাদিকদেরও এটা নিয়ে কথা বলা উচিত। সংসদে যাওয়াটাই সবচেয়ে বড় সংকট নয়।
পূর্বপশ্চিম: দেশে এসব সংকট নিয়ে আপনারা রাজপথের চেয়ে সংসদকেই বেশি প্রয়োজন মনে করছেন? ড. রেজা কিবরিয়া: এটা কোন স্ট্যাট্রিজি ছিল না। আমি তো মাত্র কয়েকদিন হল দায়িত্ব নিয়েছি। যারা ছিলেন তারা বলতে পারবেন। আমরা রাজপথে নামিনি, আপনার জানেন রাজপথে গেলে কি করা হয়। রাজপথে গিয়ে অবস্থান নেয়া একটা গণতান্ত্রিক দেশে খুব একটা স্বাভাবিক বিষয়। গাদ্দাফি বা সাদ্দামের সময় আপনি রাজপথে নেমে খুব বেশি সুবিধা করতে পারতেন না। এখনকার পরিস্থিতও আসলে তেমনি। আমাদের সম্মেলনের জন্যে অনুমতি নিতে হয়েছে। সেই অনুমতি দেয়া হয় মাত্র ২-৩ দিন আগে। এত বড় আয়োজন আমরা ২ দিন আগেও জানিনা এটা অনুমতি পাব কিনা। এভাবে আমাদেরকে, সব বিরোধীদেরকে অপদস্থ করে তারা কি পাচ্ছে জানিনা। ফলে রাজনীতিতে রাজপথে এখন আর বেশি সুবিধা করা যাচ্ছে না। গণমাধ্যমেও সাংবাদিকেরা লিখতে পারছেন না। আপনি লিখবেন? আপনার বিরুদ্ধে সম্পাদক ব্যবস্থা নেবে। তিনি (সম্পাদক) কিছু না করলে তার বিরুদ্ধে সরকার একশন নেবে। প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে এমন বহু একশন নেয়া হচ্ছে। তিনি জেলায় জেলায় ঘুরে ঘুরে এখন হাজিরা দিতে থাকেন। সাংবাদিকতাই যখন মুক্ত নয়। তখন সাধারণ জনগণ কি করবে বলেন?
পূর্বপশ্চিম: এগুলো থেকে উত্তরণের উপায় কি সংসদে যাওয়া? ড. রেজা কিবরিয়া: আগেই বলেছি, এটা আসলে বড় নয় যে ৫জন সংসদে গিয়েছে। ৩০০ জনের সামনে দাড়িয়ে তারা কিই বা করতে পারবেন? দেশ পরিচালনার বিষয়ে উনারা ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে হয় না, সেই সুযোগ তারা পাবেন না। একটা বিষয় হল, যখন একটা সরকার দায়িত্ব নেয়, যে সরকারের নিজের উপর আত্মবিশ্বাস আছে, সেই আত্মবিশ্বাস কখন আসবে? যখন সে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে, তাদের ইচ্ছায় ক্ষমতায় এসেছি এটা মাথায় রাখব, তখন আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার কথা ভাববো। আমার যদি সন্দেহ থাকে যে কতভাগ মানুষ আমার সাথে আছে? ১০? ২০? নাকি আরও কম? তখন আমার আত্মবিশ্বাস থাকে না। এই সরকারের সেই সমর্থন নেই। এদেরকে সবাই স্যালুট দেয়, সবাই থাকে, আমরা মাননীয় বলি, কিন্তু তাদেরকে কি আমরা সত্যিই মানি? নাকি পেছনে গেলে গালি দিই? যাকে মানে না, তাকে মাননীয় বললেই সে মাননীয় হয় না। জনপ্রতিনিধি মানে জনপ্রতিনিধি, জনগণ তাদের ভাগ্য নির্ধারক, কিন্তু এই সরকারের সেই নির্ধারণ প্রয়োজন হয়নি। ফলে সরকার জনগণকে ভয় পায় না, বরং জনগণ সরকারকে ভয় পায়। এটা গণতান্ত্রিক দেশে এটা হয় না। নুসরাত ধর্ষণের পর থেকে প্রতিদিনই ৫-১০ টা করে ঘটনা ঘটছে। এবং সেটার সাথে সরকারের দলের লোকেরাই জরিত থাকছে। তারা ভয় পাচ্ছে না। যারা করছে তারা খবরে কাগজে যখন দেখে এটার কোন বিচার নেই, সরকার তাদের বাচিয়ে নিচ্ছে, তারা উৎসাহ পায়। কিন্তু সাধারণ জনগণ, বিরোধী দলের কর্মী, তারা ভয় পায়। আমার এলাকায় আমার পোস্টার লাগানোয় একজনকে রাত ৩ টায় তার বাচ্চাদের সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসব করে জনগণের মধ্যে ভয় জাগানো হচ্ছে।
পূর্বপশ্চিম: ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা কাদের সিদ্দিকি শপথের বিষয়ে বলেছেন জোট থেকে আশানুরূপ বক্তব্য না আসলে তিনি জোট থেকে বেরিয়ে যাবেন, সেক্ষেত্রে আপনারা কি ভাবছেন? ড. রেজা কিবরিয়া: এটা খুবই দুঃখজনক। তার সাহস সম্পর্কে দেশের মানুষের ভুল ধারণা থাকার কথা না। দেশের মানুষের জন্যে উনার ভালোবাসার টান আছে। উনি প্রতিবাদ করতে পারেন, তবে একজনের উপর দোষ চাপানো ঠিক না। তিনি সেটা বিবেচনা করবেন। আলোচনার মাধ্যমে সেটা সমাধান হবে। কিন্তু আরেকটা দলকে বা জোটের প্রধানকে এমন চিঠি দেয়া দেখে আমি বিস্মিত। আমরা এখনও আলাপ করিনি। আলোচনা করে তারপর বলব।
পূর্বপশ্চিম: আপনার বাবা আওয়ামী লীগের শীর্ষ একজন নেতা ছিলেন, সেই দল বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট দল গণফোরামে আসলেন, আপনিতো আওয়ামী লীগে ফিরতে পারতেন, সেটা কি কি কারণে করলেন না? ড. রেজা কিবরিয়া: আওয়ামী লীগে ফিরতে পারতাম। আমার আসলে রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা ছিল না। আব্বার হত্যার পর আমাদের আসনে উপনির্বাচন হয়েছিল, তখন আমি প্রার্থী হইনি। আমি প্রার্থী হলে মনে হয় না সেখানে আমি হেরে যেতাম। কারণ এলাকা বলেন, সারাদেশে বলেন, সবার সহানুভূতি ও ছিল। আমি তখন চাকরি করতাম, চাইলেই সাংসদ হতে পারতাম। কিন্তু আমি করিনি। আমার বাবা যে রাজনীতি করেছেন, তিনি নিরপেক্ষ সরকারের জন্যে আন্দোলন করেছেন। তখন আওয়ামী লীগ ২৩ বছর পর ক্ষমতায় আসলো। সেসময় বাবা প্রচুর বক্তব্য রেখেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও সেসময় ভোটের অধিকারের জন্যে আন্দোলন করেছেন। কিন্তু এই সরকারই সেটা ক্ষুন্ন করেছেন। আওয়ামী লীগ তার আসল নীতি থেকে সরে এসেছে। আমি ব্যাক্তিগতভাবে দলের চেয়ে দেশে বেশি বিশ্বাস করি। দেশের মানুষের উপর বিশ্বাস করি। আমি কিছু নীতিতে বিশ্বাস করি। সেগুলিতে আমি ঠিকই আছি। আমার মনে হয় আমার বাবা যে দলের জন্যে রক্ত দিয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন, যেসব আন্দোলন করেছেন সেই দলের এত সরে আসা, ভোটের রাজনীতি থেকে সরে আসা, এসব দেখলে তিনি খুব মন খারাপ করতেন। সেখানে গণফোরাম বেটার।
পূর্বপশ্চিম: দুই জোট থেকেই বিএনপি বেশ চাপে আছে। সেক্ষেত্রে ঐক্যফ্রন্ট ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা কতটুকু? ড. রেজা কিবরিয়া: ওই দলে কি হচ্ছে আমি বলতে পারিনা। তবে সেটা জোটে খুব প্রভাব ফেলবে না। দলে সমস্যা থাকতে পারে। আসলে সব দলেই সমস্যা আছে, আওয়ামী লীগসহ। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেকায়দায় আছে আওয়ামী লীগ। ভোট না দিতে পেরে আওয়ামী লীগাররাও এতে কষ্ট পেয়েছেন। দেশে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে, উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু ভোট দিতে দিচ্ছে না সরকার। এতে করে দলের লোকেরাও ব্যথিত। আমার বাবা এই দলের জন্যে প্রাণ দিয়েছেন, তাদের সময় দলের একটা নীতি ছিল। বঙ্গবন্ধুর সময় এই দলের ক্ষমতায় যাওয়ার চেয়েও মানুষের অধিকার নিয়ে বেশি তাগাদা ছিল। তারা জনগণের উপর ভিত্তি করে সরকার করতে চেয়ছেন। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই ভোট ছাড়া নির্বাচন হচ্ছে।
পূর্বপশ্চিম: আপনারা তো সেক্যুলার রাজনীতি করেন, একটা সময় আপনারা বলেছিলেন বামদের সাথে ঐক্য করবেন, সেই ঐক্য সামনে হবার কোন সম্ভাবনা আছে কি? ড. রেজা কিবরিয়া: তাদের মধ্যে অনেক নীতিবান লোক আছেন। গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনের জন্যে আমরা তাদের সঙ্গেও কথা বলব সামনে। যারা গণতন্ত্র চান তারা এক হবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। সেজন্যে আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ করবো।
পূর্বপশ্চিম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন