কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন তরুণ রাজনৈতিক নেতা। ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ এর সভাপতি। তিনি ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার আশাবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের কাছ থেকে শিখেছেন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তাই ছোটবেলা থেকেই তিনি দেশপ্রেম এবং মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
শিক্ষাজীবন থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। মধুখালী সরকারি আইনুউদ্দিন কলেজে পড়াশোনাকালে কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। মানুষকে ভালোবেসে তাদের পাশে দাঁড়াতে রাজনীতিতে নাম লেখান।
২০০৮ সালে যুবদলের এক নেতার হাত ধরে ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হবার পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হন একাধিকবার। একাধিক মামলায় কারাবরণও করেছেন। তারপরও জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শকে ধারণ করে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে চান তিনি।
সম্প্রতি একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি-এর সাথে কথা হয় এই তরুণ রাজনীতিকের। সাক্ষাৎকারটি নেই ব্রেকিংনিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আহসান হাবীব সবুজ।
ব্রেকিংনিউজ: কেমন আছেন?
কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন: ভালো আছি তবে আরও ভালো থাকতাম যদি দেশে গণতন্ত্র থাকতো। গণতন্ত ছাড়া তো দেশের মানুষ ভালো নেই। তাই আমিও তেমন ভালো নেই।
ব্রেকিংনিউজ: দেশ আর মানুষকে বাঁচানোর থিমটি কেন বেছে নিলেন?
কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন: ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির কাউন্সিলে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’। এরপরে যখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে মহাদুর্যোগ নেমে আসে, তখন আমার কাছে মনে হচ্ছিল সারা দেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা তা অনুভব করেই হয়তো ম্যাডাম সেদিন তার বক্তব্যে এদের রক্ষার কথাই বলেছেন। এরপর ২০১০ সালে চট্টগ্রামে সমাবেশে ম্যাডাম আবারও ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ আন্দোলনের কথা বলেন। এর পরদিনই আমি এই আন্দোলনকে বুকে ধারণ করে, লালন করে ভাবতে থাকি এমন একটি সংগঠন দাঁড় করাবো। যে সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের দলের অনেক নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষ একত্রিত হয়ে দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। সেই আলোকেই আমি এ সংগঠনটি শুরু করি। বর্তমানে সংগঠনটির একাধিক জেলা কমিটি, চারটি মহানগর এবং প্রবাসে দুটি কমিটি রয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ: আপনার সংগঠনের রাজনৈতিক মতাদশ সম্পর্কে বলুন?
কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন: সংগঠনটা করেছি যাতে দেশে সাধারণ মানুষ সুখে থাকে তাদের দাবিগুলোর বাস্তবায়ন যাতে তারা দেখতে পায়, তারা যাতে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে; সে জন্য সংগঠনটা করা হয়েছে। তবে ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকলে মিলে দেশটাকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে হবে যেভাবে গড়তে চেয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আমার মূল স্বপ্নই দেশ এবং দেশের মানুষের সেবা করা। তবে সময়ই বলে দেবে রাজনীতিতে আমার অবস্থান কি হবে। মানুষের সেবা করাই আমার ব্রত।
ব্রেকিংনিউজ: কখন থেকে বিএনপির সাথে আপনার সম্পর্ক?
কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন: ১৯৯৯ সালে বিরোধী দলে ছিল বিএনপি। তখন ছোট হলেও রাজপথে থেকেই আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। কিন্তু ২০০১ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তখন উত্তাল যৌবনের মধ্য দিয়ে আমাদের সময় পার হয়েছে। তবে তখনো ক্ষমতা কী জিনিস বুঝতাম না। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে আমি আমার জন্মভূমি ফরিদপুর ত্যাগে বাধ্য হই। দীর্ঘ তিন থেকে চার বছর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কারণে গ্রামের বাড়ি যেতে পারিনি। ২০০৮ সালের পরই ঢাকায় এসে বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি।
ব্রেকিংনিউজ: বিএনপির সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে কখনো কি কোন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন?
কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন: বর্তমান অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৫ জুন যখন বিএনপি প্রথম হরতাল দেয়, সে সময় বাংলামটরে একটা গাড়ি পুড়ে যায়। এ ঘটনায় একটা মামলা হয়। সেদিন আমি ঢাকা মেডিকেলে রোগী দেখতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকেই আমাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপরে আমাকে সাড়ে তিন মাস কারাগারে থাকতে হয়।
বর্তমানে আমার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসির’ সময়ও কারাগারে থেকেছি আড়াই মাস। ২০১৭ সালে আমি দুই মাস কারাবন্দি ছিলাম। এভাবে বেশ কয়েকবার আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে কারাগারে থাকতে হয়েছে। এ ছাড়া আমাকে একাধিকবার রিমান্ডে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। হাতের আঙুল ভেঙে দিয়েছে, যার ব্যথা এখনো অনুভব করি।
ব্রেকিংনিউজ: দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কোন পথে ছুটছে?
কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন: বর্তমান অবৈধ সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আমাদের নেত্রী দেশমাতা সে গণতন্ত্রের জন্য কারাগারে যেতেও দ্বিধাবোধ করেননি। আশা করছি দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে দেশে আবার গণতন্ত্র ফিরে আসবে।
ব্রেকিংনিউজ: বলা হচ্ছে দেশে এখন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়নটা বলুন।
কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন: রাজনীতি এখন আর নীতিতে নেই। রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের দখলে নয়, অন্যদের দখলে। আমরা জানি, প্রশাসন দেশের কর্মচারী। কিন্তু আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রশাসন আওয়ামী লীগের কর্মচারী। বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে যারা কথা বলবেন, তাদের হয় গুম হতে হবে, না হয় কারাগারে বা মারা যেতে হবে।
আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আশাহত হই, যখন দেখি প্রেস ক্লাব, হাইকোর্টের মতো জায়গায় অস্ত্র উঁচিয়ে পেটুয়া বাহিনীর সদস্যরা বাবার বুক থেকে সন্তানকে ছিনিয়ে নিচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, রাজনীতিতে আমরা যারা আগামী প্রজন্ম, তারা অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি। আর এজন্য দায়ী বর্তমান শাসকরা। আমরা তো তাদের কাছ থেকে শিখব। কিন্তু আমরা তাদের কাছ থেকে কি শিখছি? তাদের কাছ থেকে আমরা এমন কিছু শিখছি, যা আমাদের সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
ব্রেকিংনিউজ: বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের পরিণতি কি হতে পারে বলে মনে করেন?
কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন: বিশ্বের যে কোনো দেশেই যখন একটি অগণতান্ত্রিক সরকার দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকে, সে সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস বা অহিংস একটি আন্দোলন হয়। যখন আন্দোলন হয়, তখন রক্তপাতও হয়। কিন্তু বিএনপি দেশের মানুষ এবং দেশের জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। কারাগারে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে বলেছিলেন, ‘আমার অবর্তমানে একটি ঢিলও যেন কোথাও না লাগে।’
আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। সরকার কিন্তু বারবারই চেষ্টা করছে বিএনপির পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার। দেশে এমন কিছু হোক, যাতে বিএনপি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি সম্মান রেখে কখনো সহিংস আন্দোলনে যাব না। তবে আমরা মনে করি দেশের ১৬ কোটি মানুষ বিএনপির পক্ষে। আগামীতে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করব।
ব্রেকিংনিউজ: আপনার সংগঠনের নাম স্লোগানের মত শোনায়। যদি দেশ ও মানুষ বাঁচার পথ পেয়ে যায়, তাহলে কি আপনার সংগঠন বিলুপ্ত হবে?
কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন: আমার সংগঠন কখনো বিলুপ্ত হবে না। কারণ দেশের বিপদ আসবেই। যতদিন পৃথিবী আছে বর্তমানের মত স্বৈর সরকার আসবেই- এটা ইতিহাস ঘাটলে পাবেন। তাই এ সংগঠন বিলুপ্ত হওয়ার কোর সম্ভাবনা নেই।
ব্রেকিংনিউজ: দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আপনার ম্যাসেজ কি?
কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন: দেশবাসীকে বুঝতে হবে দেশ কেমন আছে, মানুষ কেমন আছে। তাহলে তারা প্রকৃত স্বাধীনতাটা ফিরে পাবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে দেশবাসীকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি আশা করছি দেশবাসী আগামী নির্বাচনের আগেই দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন