চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন অফিউল হাসনাত রুহিন। পড়ালেখার শেষ করে ঢাকায় এসে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। কাজ শুরু করেন ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি স্টারে। এরপর ডেইলি অবজারভারে এবং সর্বশেষ কাজ করেন ডেইলি নিউএজ পত্রিকায়। কিছুদিন দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার পর তিনি পাড়ি জমান বিদেশে। প্রিন্ট সংবাদমাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করা রুহিন বুঝতে পারছিলেন প্রযুক্তির যুগে সব আসবে হাতের মুঠোয়, এমনকি দৈনিক পত্রিকাটিও। নতুন যুগের নবধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিয়ে পড়ার আগ্রহ জাগে তার। অনলাইন সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর পিএইচডি ডিগ্রি করতে ২০০৭ সালে ফিনল্যান্ডে যান তিনি।
কিন্তু কথায় আছে ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’, তাই সংবাদ লেখার অদম্য নেশা থেকে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নেয়া মানুষটি উত্তর ইউরোপে গিয়েও কলম চালানো থামাননি। তার হাত ধরেই হাঁটতে শুরু করে ফিনিশ ভাষী দেশের প্রথম ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি ফিনল্যান্ড’। পত্রিকাটির প্রিন্ট সংস্করণ প্রতিদিন প্রকাশিত হয় ফিনল্যান্ডে আর বিশ্বজুড়ে উপস্থিতির জানান দেয় এর অনলাইন সংস্করণটি।
মাটির টানে দেশে আসা এই সংবাদকর্মী এসেছিলেন চ্যানেল আই অনলাইন ঘুরে দেখতে। কথোপকথনের শুরুতে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ডেইলি ফিনল্যান্ডের পথচলা শুরুর একটি অনুষ্ঠানের কথা জানান রুহিন।
তিনি বলেন: তথ্য, সংবাদ বিশ্বাস করার আগে কোন মাধ্যমে তথ্য-সংবাদ আসছে সেটা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। আগে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। নতুন সংবাদমাধ্যমও বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। তবে সেটাকে কিছুদিন হলেও মানুষ দেখবে, সময় নিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। ২০০৭ সালে যখন ফিনল্যান্ডে যাই তখন সেখানে একটিমাত্র জাতীয় দৈনিক ছিলো,তাও ফিনিশ ভাষায়। একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক বের হতো, সেটাকেও ঠিক পত্রিকা বলা যায় না। সেখানে আমি একজন বিদেশি হয়ে মূলধারার ইংরেজি দৈনিক চালুর উদ্যোগ নিলাম। আমি ফিনল্যান্ডের সর্বোচ্চ মহলের আস্থা পেলাম। ডেইলি ফিনল্যান্ডের যাত্রা শুরুর বিশেষ আয়োজনে যোগ দিয়েছিলেন ফিনিশ নিউজ নেটওয়ার্কের কর্তাব্যক্তিরা, দেশটির অর্থমন্ত্রী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী, লিডার অব দ্য অপজিশন, পরিবেশ মন্ত্রী। যখন একটি গণমাধ্যমের অনুষ্ঠানে এতজন সংসদ সদস্য, প্রেস কাউন্সিল প্রধানের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠানটির জন্য একধরণের স্বীকৃতি। পাশে পেলাম ইউরোপিয় ইউনিয়নকে, এখন ফিনিশ প্রধানমন্ত্রীও আমাদের ডাকেন।
ফিনল্যান্ডে কর্মব্যস্ততার মধ্যেও বাংলাদেশের খবরাখবরের জন্য দেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত চোখ রাখেন এই সংবাদকর্মী।
তবে দেশের গণমাধ্যম এবং ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা শত শত অনলাইনের সাংবাদিকতার নীতি, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় তার মনে।
দেশীয় গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে তিনি বলেন: দেশের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় নামকরা অনলাইন পোর্টালের সংবাদ পড়ি। সেসব পোর্টালেও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থাকে। তখন কয়েকটি সাইটে গিয়ে একই খবর পড়ি। তবে কোনভাবেই নামেমাত্র অনলাইন সংবাদমাধ্যমের খবর পড়ি না। যাদের পরিচিতি নাই, সুনির্দিষ্ট অফিস ঠিকানা নাই এরকম অনির্ভরযোগ্য কোন সাইটের সংবাদে ভরসা করি না। এসব পোর্টাল নামে সংবাদমাধ্যম হলেও এসবে শিক্ষিত এবং প্রকৃত সাংবাদিক নেই বললেই চলে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি একটি ঘটনার চিত্রধারণ করার অভিজ্ঞতা নেই শুধু বিয়ের ভিডিও করেছে, এরকম অনেকে টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাপার্সন হয়ে গেছে।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের সংকট-সম্ভাবনা
সামাজিক মাধ্যম ও অনলাইন সংবাদ একটি অন্যটির পরিপূরক বলে মনে করেন দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ভারসাম্য রাখা এই সাংবাদিক।
তিনি বলেন: এই সময়ে সামাজিক মাধ্যমকে অস্বীকার করার কিছু নেই। বিশ্বের নামকরা গণমাধ্যম ফেসবুক-টুইটার থেকে সংবাদ সংগ্রহ করেছে, করছে। এখন সংবাদমাধ্যম থেকে জনগণ সংবাদ পাবে এমন সনাতনী ধারণা বদলেছে। উল্টো জনগণ থেকে সংবাদ পাচ্ছে সংবাদমাধ্যম। তবে সামাজিক মাধ্যম থেকে সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা একটি বড় প্রশ্ন।
এজন্য অ্যাকাউন্ট, পেইজগুলো কারা চালাচ্ছে, কতটুকু নির্ভরযোগ্য, আইডি ভেরিফাইড কিনা এসব বিষয় দেখতে হবে। পাঠককেও এখন আগের চেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে। কারণ ফেক নিউজের ছড়াছড়ি এখন। তাই আস্থা অর্জন করা গণমাধ্যমের অনলাইন ছাড়া অখ্যাত কোন মাধ্যমের সংবাদে গুজব ছড়ানো-আতঙ্কিত,প্রতারিত হওয়া যাবে না।
সব মিলিয়ে সামাজিক মাধ্যম অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জন্য একরকম আশীর্বাদ বলেই মনে করেন তিনি। কারণ এখন সামাজিক মাধ্যম থেকে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে এবং প্রকাশিত সংবাদ আরও বেশি পাঠকের দৃষ্টির সামনে নিতে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করতে পারছে।
তবে বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে আরও বিশ্বাসযোগ্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দাঁড় করাতে অনলাইন নীতিমালা এবং নিয়ন্ত্রণ-জবাবদিহিতা নিশ্চিতে স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সরাসরি সাইটে গিয়ে কিংবা ফেসবুক ইন্সট্যান্ট আর্টিকেল হিসেবে চ্যানেল আই অনলাইনের সংবাদ পড়েন তিনি । চ্যানেল আই অনলাইন সম্পর্কে তিনি বলেন: অনেক প্রবাসী এবং পরিচিতজন ফেসবুকে চ্যানেল আই অনলাইনের সংবাদ শেয়ার দেয়। মাত্র ৩ বছর পরিপূর্ণতা পাওয়ার মতো যথেষ্ট না হলেও এই সাইটে যথেষ্ট পেশাদারিত্ব এবং বিশ্বাসযোগ্যতার ছাপ চোখে পড়ে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন