নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন। নির্বাচনকালে শেখ হাসিনার সরকারই সহায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে। এটাই আমাদের সংবিধানের নিয়ম। বিএনপির সঙ্গে সংলাপ-সমঝোতা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপিই সংলাপের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের মুখে সংলাপ-সমঝোতার কথা বেমানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে উন্নয়ন চলছে তার ধারাবাহিকতার জন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের জনগণ আবারও নৌকাকে বিজয়ী করবে বলে মনে করেন তিনি। ২০১৮ সাল আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জের বছর উল্লেখ করে দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকা, টানা তৃতীয় মেয়াদে দলকে ক্ষমতায় আনতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া এবং সরকারের উন্নয়নগুলো জনগণের মধ্যে তুলে ধরার আহ্বান জানান কাদের। নতুন বছরের শুরুতেই সাংগঠনিক সফরে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এসব সফরে সমাবেশ, বর্ধিত সভা, উঠান বৈঠক, পথসভায় দেশের জন্য আওয়ামী লীগের অবদান, বিপরীতে বিএনপির ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা হবে। মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করে, মর্যাদা বাড়ায়; বিপরীতে বিএনপি নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যস্ত থাকে, দেশকে ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে উপস্থাপন করে। আমরা জনগণের সামনে তুলনামূলক সেই চিত্রগুলোই তুলে ধরব। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি মনোযোগ দেন তৃণমূলকে গোছানোর কাজে। জেলা-উপজেলায় কর্মিসভা ও দ্বন্দ্ব মেটাতে ব্যস্ত সময় কাটান তিনি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের জন্য তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন— রফিকুল ইসলাম রনি
২০১৭ সাল সাংগঠনিকভাবে কেমন কাটল?
বিদায়ী বছরটা আমরা সাংগঠনিকভাবে অনেক গুছিয়ে উঠেছি। অনেক জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল না, সেগুলো সম্পন্ন করেছি। আবার জেলা-উপজেলায় দলের ভিতরে ছোটখাটো অনেক সমস্যা ছিল সেগুলো সমাধান করেছি। এমপি-নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে কিংবা জেলা সফরে গিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। গত এক বছরে কমপক্ষে ৫০টি জেলায় সাংগঠনিক সফর করেছি। মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও তাঁতী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বের করে আনা হয়েছে। আরও ভালো করতে পারতাম কিন্তু ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা আসায় আমরা সেখানে (কক্সবাজারে) ব্যস্ত ছিলাম দুই মাসের বেশি সময়। আমি নিজেসহ দলের নেতারা নেত্রীর নির্দেশে সেখানে অবস্থান করে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড়ধসের সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। অন্যদিকে হাওর ও উত্তরাঞ্চলে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে ছিলাম আমরা। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ সারা দেশের পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অধিকাংশ স্থানে আমরা জয়লাভ করেছি। দেশব্যাপী সদস্য সংগ্রহ অভিযান ও নবায়ন কার্যক্রমে আমাদের ফোকাস হচ্ছে তরুণ এবং নারী ভোটাররা।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ কী?
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে শেখ হাসিনা সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের কার্যক্রম চলছে। এ সংকট সমাধানে সরকারের উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দেশের এবং প্রধানমন্ত্রীর সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব গণমাধ্যম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধি দিয়েছে, তার মানবিকতা ‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’রূপে স্বীকৃতি পেয়েছে। সারা বিশ্বে শরণার্থী তথা অভিবাসীরা নানান অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হন। অথচ মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়ে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। আমরা মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, তারা যেন তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়। আমরা আশা করি, মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করবে।
বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়, গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মাত্রা বেড়েছে। এ কোন্দল অব্যাহত থাকলে আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে— এ কথা পুরোপুরি সত্য নয়। বড় দলে কিছু সমস্যা থাকে। আছে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা। এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় একটি রাজনৈতিক দলের নাম আওয়ামী লীগ। এ দলের একটি আসনে প্রার্থী হতে কমপক্ষে ১২-১৫ জন যোগ্য নেতা আছে। তাদের নিজস্ব কর্মীবাহিনী ও সমর্থক রয়েছে। যে কারণে একে কোন্দল বলে কেউ কেউ প্রচার করে। আওয়ামী লীগে সবচেয়ে প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে নৌকা মার্কা এবং দলের সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেয়। প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতা থাকলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে সবাই একসঙ্গে কাজ করে। আমাদের পার্টি দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।
বিএনপি সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে— এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ কী বলবে?
বিএনপি জানে শেখ হাসিনা বা সরকারের অধীনে নয়, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তার পরও তারা ব্ল্যাকমেইলিং বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এখানে তারা কেন ভণিতা করে? ইচ্ছা করেই তারা ভণিতা করছে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই হবে। যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, স্বাধীন হয় সে ব্যাপারে সহায়তা করবে শুধু নির্বাচনকালীন সরকার। কোনো মেজর কাজ করবে না ওই সময়। নির্বাচনসংক্রান্ত সবকিছু থাকবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সরকারের অধীনে কোনো কিছু থাকবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনও থাকবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সরকার শুধু রুটিনমাফিক কাজ করবে। বিএনপি একসময় বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার বলে সহায়ক সরকার। তারা কার কাছে এ দাবি জানায়? তারা ইসিকে বলে সহায়ক সরকারের কথা। ইসি এখানে কী করবে? পরে আবার বলে, ইসি নাকি সরকারকে বোঝাবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন।
তার মানে সমঝোতার বা আলোচনার পথও খোলা নেই?
আমরা সবসময়ই সহনশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু বিএনপি নেতাদের মধ্যে ‘সৌজন্যবোধ’ নেই। আমরা এত কিছুর পরও খালেদা জিয়াকে বেগম জিয়া বলি। আর ওনারা বলেন হাসিনা হাসিনা। এটা আমাদের কষ্ট লাগে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী ছুটে গেছেন ওনাকে সান্ত্বনা দিতে। কিন্তু উনি দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। উনি এখন সংলাপের কথা বলেন। সংলাপের দরজা তো ওই দিনই বন্ধ করে দিয়েছেন নিজের দরজা বন্ধ করে। কিন্তু পক্ষান্তরে তারা সংলাপের কথা বলে। এটা বেমানান।
বিএনপি নেতারা বলছেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হলে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না— এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ কী বলবে?
আদালতের বিচারে যদি খালেদা জিয়া নির্দোষ প্রমাণিত হন তাহলে তিনি ছাড়া পাবেন। আর যদি দোষী হন তবে এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। ছাড়া পেলেও আদালতের ব্যাপার, দোষী হলেও আদালতের ব্যাপার। আদালত ছাড় দিলেও দিতে পারে, সাজাও দিতে পারে। আওয়ামী লীগের চাওয়ার সঙ্গে আদালতের রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন। সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করছে না। ছাত্রলীগের বহু নেতা-কর্মী জেলে, খুনের মামলায় এমপি জেলে, মন্ত্রীর ছেলে জেলে, মন্ত্রীরা আদালতে হাজিরা দেন। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে।
২০১৮ সালের শেষের দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এ ছাড়া কয়েকটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আছে— এগুলো নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ মনে করছেন কি?
নির্বাচন মানেই চ্যালেঞ্জ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ সবসময় গ্রহণ করি। জাতীয় নির্বাচন একটি রাজনৈতিক দলের পরীক্ষা। এর জন্য নানা গ্রাউন্ডওয়ার্ক করতে হয়। আমরা সেগুলো শুরু করেছি। জানুয়ারিতেই সাংগঠনিক সফর শুরু হচ্ছে। সাংগঠনিক কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা প্রচার জোরদার করব, যা চলবে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত। গত দুই মেয়াদে দেশের মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছিল আমরা তার সিংহভাগই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, বাস র্যাপিড ট্রানজিট, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পদ্মা রেললিংক, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললিংকসহ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। দেশের মানুষ উন্নয়ন চায়, উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও রাখতে চায়। সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের জোয়ার উঠেছে। ডিসেম্বর বিজয়ের মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের আরেকটি বিজয় আসবে। দেশের মানুষ স্বাধীনতার পক্ষশক্তিকেই পুনরায় ক্ষমতায় বসাবে। যারা দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায় তাদের কখনই ক্ষমতায় বসাবে না। বাংলাদেশের মানুষ আর বিএনপির দুঃশাসন, খুন, লুটপাটের বিভীষিকায় ফিরে যাবে না।
আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন কেমন হবে?
আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি— কারা মাঠে কাজ করছেন, কার জনপ্রিয়তা কতটা। বিরোধী দলগুলোরও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। যিনি নির্বাচনের মাঠে জনগণের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন খুব নিকটবর্তী। জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তাই হবে।
আপনার দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর তিন মাস পার হতে চলেছে— যদি নিজের কাজের মূল্যায়ন করতেন...
আমি কীভাবে নিজের কাজের মূল্যায়ন করব? মূল্যায়ন করবে দেশের জনগণ। মূল্যায়ন করবেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। মূল্যায়ন করবেন যিনি আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা। তবে আমি একটা কথা বলতে পারি, আমার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দলের জন্য কাজ করেছি। নিয়মিত পার্টি অফিসে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সময় দেওয়া এবং দলকে সংগঠিত করতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ছুটে চলেছি। দলের ভিতরে ছোটখাটো অনেক সমস্যা ছিল সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছি। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আওয়ামী লীগ এখন ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী।
সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নতুন বছরে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আপনার কোনো নির্দেশ বা আহ্বান আছে?
দুটি কারণে আগামী দিনগুলো আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক. হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি। এ দুটি সালকেই আমরা ক্ষমতায় থেকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে চাই। এজন্য প্রয়োজন জনগণের ম্যান্ডেট। এজন্য মানুষের ভালোবাসা প্রয়োজন। সে কারণে প্রতিটি স্তরের নেতা-কর্মীর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে— আপনারা ভোটারদের কাছে যান, সরকারের উন্নয়নগুলো তুলে ধরুন। নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করুন। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনার সরকার মানেই দেশের উন্নয়ন। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে এবং উন্নয়নের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। দলকে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আনতে দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, যখনই আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থেকেছে তখনই বিজয় এসেছে। অতীতের মতো এবারও ঐক্যবদ্ধ থেকে হ্যাটট্রিক বিজয় আনতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। দেশে উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। দলের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে বলব, আপাতত মনোনয়ন নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবেন না। এখন সুসংগঠিতভাবে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করুন। আমাদের প্রতীক হচ্ছে নৌকা আর নেত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা।
আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রচারণার কৌশল ও ধরনগুলো যদি বলতেন...
বছরের প্রথম থেকেই আমরা দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর করব। ইতিমধ্যে দলীয় সভানেত্রী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের দায়িত্ব বণ্টন করেছেন। যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব আগে থেকেই বণ্টন করা হয়েছে। মোট কথা, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় নামব। এসব সফরে সমাবেশ, বর্ধিত সভা, উঠান বৈঠক, পথসভায় দেশের জন্য আওয়ামী লীগের অবদান, বিপরীতে বিএনপির ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা হবে। মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করে, মর্যাদা বাড়ায়; বিপরীতে বিএনপি নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যস্ত থাকে, দেশকে ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে উপস্থাপন করে। আমরা জনগণের সামনে তুলনামূলক সেই চিত্রগুলোই তুলে ধরব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এ দেশের অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। দেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এ সরকারের আমলে জনগণের আয় ও জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। বিপরীতে বিএনপির সময় ছিল হাহাকার। বিদ্যুৎ আর সার চাইতে গিয়ে সাধারণ মানুষ এবং কৃষককে গুলি খেয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে। জঙ্গিবাদ আর সন্ত্রাসে জনজীবন ছিল অস্থির, আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল দেশ। সহিংসতা, অরাজকতা ও নাশকতা করে জনগণের জীবন করে তুলেছিল অস্থির। তাই আমি মনে করি, এ দেশের মানুষ আর কখন বিএনপিকে ভোট দেবে না। আওয়ামী লীগেরও ভুলত্রুটি থাকতে পারে কিন্তু দেশের উন্নয়নে আমরা কাজ করি সেটা প্রমাণিত। আর এ কারণেই আগামী নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে।
বিডি প্রতিদিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন