অধ্যাপক রেহমান সোবহান। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের অন্যতম সদস্য ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক। বিজয়ের ৪৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম আলোর সঙ্গে তিনি কথা বলেন অর্থনীতি, রাজনীতি, আগামী নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান
অধ্যাপক রেহমান সোবহান
প্রথম আলো: বিজয়ের ৪৬ বছর পর আপনার অনুভূতি জানতে চাইছি। যে স্বপ্ন নিয়ে আপনারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, সেই স্বপ্ন থেকে আমরা কত দূরে আছি?
রেহমান সোবহান: এই প্রশ্নের উত্তরে আমার সংক্ষিপ্ত জবাব হলো আমার প্রজন্মের মানুষের মধ্যে এই স্বপ্ন এখনো আছে—এটা অনস্বীকার্য। তবে নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন আমার প্রজন্মের স্বপ্নের চেয়ে একেবারেই আলাদা। আমার স্বপ্নের কথা যদি বলি তাহলে বলতে হয়, কিছু কিছু স্বপ্ন আংশিকভাবে পূরণ হয়েছে। সব স্বপ্ন পূরণ হওয়াটা বিরল ব্যাপার। আর তাই এই ৮৩ বছর বয়সে আমি এখনো স্বপ্ন দেখে যাই।
প্রথম আলো: মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল একটি মানবিক মর্যাদাশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। সেটি থেকে আমরা এখন কত দূরে আছি? কেন এই অবনতি?
রেহমান সোবহান: অনেক ক্ষেত্রে আমরা ভালো করেছি। হেনরি কিসিঞ্জার (সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) যে বলেছিলেন আমরা তলাবিহীন ঝুড়ি হব, সেই ভাবমূর্তি আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। কথিত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে আমাদের অর্থনীতি অধিকাংশ দেশের চেয়ে ভালো করেছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় আমাদের অসমতাও বেড়েছে। অন্যদিকে আমাদের সহিষ্ণুতা কমেছে। সে কারণে আমরা সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও বেশি সহিংস হয়ে পড়েছি। সুদৃঢ় আইনের শাসনসহ যে পূর্ণ গণতান্ত্রিক ও ন্যায্য সমাজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি আমাদের ছিল, সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার কারণেই এমনটা হচ্ছে।
প্রথম আলো: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রত্যয় ছিল গণতন্ত্র। আমরা এখনো সেই গণতন্ত্রকে শক্ত ভিত দিতে পারিনি কেন?
রেহমান সোবহান: স্বাধীনতাযুদ্ধের যেসব স্বপ্ন থেকে আমরা দূরে সরে এসেছি, এটি তার মধ্যে চোখে পড়ার মতো। অধিকাংশ উত্তর-ঔপনিবেশিক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের পূর্বশর্ত অধিকতর শক্তিশালী ছিল, দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশীদের তুলনায়। গণতন্ত্রের জন্য ২৪ বছরের সংগ্রাম করে আমরা স্বাধীন হয়েছি, যার নেতৃত্বে ছিলেন অনুপ্রেরণাদায়ী নেতারা। উত্তরাধিকারসূত্রে আমরা অনেকাংশে সমরূপ ও সমতাবাদী সমাজ পেয়েছিলাম। এখানে যেমন সামন্তীয় অভিজাত শ্রেণি থেকে আসা সুনির্দিষ্ট শাসক শ্রেণি ছিল না, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও দৃঢ়ভিত্তিসম্পন্ন পুঁজিবাদী শ্রেণিও ছিল না। নব্বই দশক থেকে আমরা শক্তিশালী দ্বিদলীয় ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে সক্ষম হই, যেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তুলনামূলক অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু দুঃখজনক যে দুই দলই এটা বোঝার তেমন চেষ্টা করেনি যে নির্বাচনে জেতা মানেই রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুযোগের ওপর একচেটিয়া আধিপত্য নয়। এর প্রতিক্রিয়ায় বিরোধীপক্ষ সংসদ বয়কট করেছে এবং রাস্তায় সহিংসতা করেছে। এতে আমাদের নির্বাচিত সংস্থাগুলো কার্যকর হয়নি। ফলে সরকারের জবাবদিহিও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর ফলে সংসদীয় গণতন্ত্র নির্বাচনী একনায়কতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়েছে।
প্রথম আলো: আগামী নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান পরস্পরবিরোধী। সমাধান কী?
রেহমান সোবহান: আগামী নির্বাচন নিয়ে আশাপ্রদ কিছু দেখছি না। এর কারণগুলো দৃশ্যমান, কিন্তু আমার পক্ষে তা বোঝা কঠিন। দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আট বছরের বেশি সময় ধরে বিরোধী দলের কার্যকর বিরোধিতা ছাড়াই ক্ষমতায় আছে। শক্তিশালী এক নেতা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সমস্যাগুলো ভালোভাবেই বোঝেন, আর কীভাবে তা সামাল দিতে হয়, তাও জানেন। এ ছাড়া বর্তমান নেতৃত্বের জমানায় অর্থনীতি ভালো করেছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান। আর নিজেদের সম্পদে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তও প্রশংসিত হয়েছে। এর বিপরীতে বিএনপি তিন বছর ধরে আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে আছে। দলটির অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে বা পালিয়ে আছেন। দলটির অধিকাংশ নেতা গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় আছেন। দলটিকে জনসভা করার অনুমতিও তেমন একটা দেওয়া হয়নি। সে কারণে তারা জনসমক্ষে তেমন একটা দৃশ্যমান নয়। এ ধরনের ভারসাম্যহীন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের এই আশঙ্কার কারণ নেই যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা জিততে পারবে না। ক্ষমতাসীন দলকে এগিয়ে গিয়ে বিএনপি ও তার মিত্রদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা উচিত। যতটা সম্ভব হয় তাদের উদ্বেগ আমলে নিতে হবে; তাদের উৎসাহ দিতেই এটা করতে হবে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিরোধী পক্ষের পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই ফলাফল নিয়ে যেন কেউ চ্যালেঞ্জ করতে না পারে, তাও নিশ্চিত করতে হবে। যে দলের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার ঐতিহ্য আছে, যারা সব সময় প্রতিযোগিতাপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসায় বিশ্বাসী, তাদের এমন নির্বাচনী বিজয় অর্জন করতে হবে, যার গ্রহণযোগ্যতা কেউ চ্যালেঞ্জ করতে না পারে।
প্রথম আলো: দুই প্রধান দলের মধ্যে মতৈক্য না হলে কী হবে? আমরা কি ২০১৪ সালের ধরনের আরেকটি নির্বাচন পেতে যাচ্ছি?
রেহমান সোবহান: আমি এটা কল্পনা করতে পারি না যে বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি। বর্তমানে তারা সাংগঠনিকভাবে ২০১৪ সালের চেয়েও দুর্বল, ফলে যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া তাদের উপায় নেই। আর নির্বাচনে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না এমন কিছুও ঘটে থাকে। তাই যে দলের গণভিত্তি আছে কিন্তু আন্দোলন করার ক্ষমতা নেই, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত।
প্রথম আলো: ১৯৯৫ সালে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে আপনিসহ পাঁচজন বিশিষ্ট নাগরিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। দুই দলের প্রধানদের সঙ্গে বসেছিলেন। এবারও সেই ধরনের কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না?
রেহমান সোবহান: কখনোই নয়। আজ রাজনৈতিক বিভাজন এত বড় হয়ে উঠেছে যে একই রকম জি-৫ (পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের উদ্যোগ) উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, তা চিন্তাও করা যায় না। সে রকম সাহসী বা সম্ভবত বোকা মানুষ পাওয়া যাবে না, যারা এত কিছুর পরও দলগুলোর অপমান ও ক্রোধ মাথা পেতে নেবে।
প্রথম আলো: বলা হয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু উন্নয়নের সঙ্গে সুশাসনের প্রশ্নটি জড়িত। সুশাসনের যে মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে, তাতে উন্নয়নের সুফল তো সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না।
রেহমান সোবহান: আমাদের কিছু চিত্তাকর্ষক অগ্রগতি আছে, দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে আমি যেমনটা বলেছি। সাধারণভাবে আমরা একমত যে প্রশাসনিক দক্ষতা, সহজে ব্যবসা করার সূচক, দুর্নীতির বিস্তার—এসব মানদণ্ডে আমাদের শাসনব্যবস্থা দুর্বল। আমরা যদি শাসনব্যবস্থায় যথেষ্ট উন্নতি ঘটাতে পারি বা দুর্নীতি হ্রাস ও উন্নয়নের অনুঘটকের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা দিতে পারি—যারা আমাদের উন্নয়নের শক্তি, তাহলে আমরা যে শুধু প্রবৃদ্ধির হার দুইয়ের ঘরে নিয়ে যেতে পারব তা নয়, বরং সেটার আরও ব্যাপক ও সমতাভিত্তিক বণ্টন নিশ্চিত করতে পারব।
প্রথম আলো: পাকিস্তান আমলেআপনি দুই অর্থনীতি তত্ত্ব দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু এখন যে অর্থনীতিতে প্রকট বৈষম্য রয়েছে, তার প্রতিকার কী?
রেহমান সোবহান: আমি আগে অন্য কোথাও লিখেছি যে বাংলাদেশ দুই অর্থনীতি থেকে দুই সমাজে রূপান্তরিত হয়েছে। এটা সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক, এমনকি এতে আমাদের অর্থনৈতিক অর্জনগুলোও বিপন্ন হতে পারে। আমাদের সৌভাগ্য, দেশে খুবই সক্ষম ও কঠোর পরিশ্রমী এক শ্রমিক শ্রেণি আছে। আছে কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী শ্রমিক—অর্থনৈতিক সফলতার পেছনে তারাও আমাদের ব্যবসায়ী নেতাদের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত এই শ্রেণির পেছনে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য খাতে যতটা বিনিয়োগ করা যায় তা নিশ্চিত করা, যাতে তারাও অভিজাত শ্রেণির মতো অগ্রগতির সুযোগ পায়। আমাদের এমন নীতি থাকা উচিত, যাতে করে শ্রমিকেরা, বিশেষ করে পোশাকশ্রমিকেরা তাদের শ্রমলব্ধ মুনাফার ভাগ পায়; অর্থাৎ তারা যেখানে কাজ করে, সেই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার হওয়া উচিত তাদের, কৃষকেরা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের মুনাফার ভাগ পায় এবং সমাজের কম সুবিধাপ্রাপ্ত অন্যান্য শ্রেণির মানুষেরাও যেন একই সুযোগ পায়।
প্রথম আলো: মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আছে বলে বলা হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নীতি–আদর্শ বিশেষ করে চার মূল নীতি কতটা রক্ষিত হয়েছে?
রেহমান সোবহান: আমি এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করব না যে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বাধীন সরকার সেই উত্তরাধিকারী, যদিও তারা একমাত্র উত্তরাধিকারী নয়। কিন্তু আমাদের এটা মনে রাখা দরকার যে জনগণের বিপুল অংশ ও রাজনৈতিক শক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। যে যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছে, সেই যুদ্ধের যথার্থ উত্তরাধিকারী হওয়াটা বংশপরম্পরার অধিক কিছু দাবি করে। উত্তরাধিকারী হতে গেলে তার কাজ ও মূল্যবোধে সেই প্রতিফলন থাকতে হবে। আমি একমত যে এই জমানা বহুদিন ঝুলে থাকা যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করেছে, আগের সরকারগুলো তা পারেনি। তারা ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণের চেষ্টা করেছে। তা সত্ত্বেও এই সরকার মৌলবাদী শক্তিগুলোর সঙ্গে সুবিধাবাধী আপস করেছে। সংখ্যালঘুরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং তাদের সম্পত্তির ওপর হামলা হচ্ছে। আমরা বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়েছি। ফলে আমাদের নীতি প্রণয়নে বিদেশিদের প্রভাব কমেছে। তবে গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে আমাদের রেকর্ড খুব ভালো নয়। অন্যদিকে আমাদের মূল আদর্শ অর্থাৎ সমাজতন্ত্র, যেটা এখন সামাজিক ন্যায্যতা; এর অস্তিত্ব কার্যত নেই।
প্রথম আলো: আপনারা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই জাতিকে বৃদ্ধিবৃত্তিক নির্দেশনা দিত। এমনকি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে। এখন পারছে না কেন?
রেহমান সোবহান: বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দুঃখজনকভাবে দলীয় প্রভাবের খপ্পরে পড়েছে। বিগত কয়েকটি সরকারের আমলে একাডেমিক উৎকর্ষ নয়, রাজনৈতিক পরিচয়ই অগ্রগতির নিয়ামক হয়ে উঠেছে। ছাত্র কর্মীরা একসময় আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রামে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করলেও এখন তাদের জীবনে নীতির ভূমিকা কম। বস্তুগত প্রাপ্তিই এখন তাদের আরাধ্য। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও সহিংসতার মধ্য দিয়ে তা আরও তীব্র হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশাগত উন্নতির জন্য একাডেমিক উৎকর্ষকে প্রাধান্য দেওয়া। ছাত্রদের পড়াশোনায় বেশি মনোযোগী করতে তাদের নানা প্রণোদনা দিতে হবে—পেশিবহুল মানুষেরা যেন তাদের ভীতসন্ত্রস্ত করতে না পারে। আমাদের লক্ষ্য হবে ছাত্রদের তৎপরতা দলীয় প্রভাবমুক্ত করা, রাজনৈতিক প্রভাব নয়।
প্রথম আলো: এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
রেহমান সোবহান: আজ বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো এ রকম:
উন্নয়নের যে গতিশীল অনুঘটক আছে, তার পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো।
বিশ্বায়নের সুযোগগুলো পুরোপুরি কাজে লাগানো, বিশেষত এশিয়ায় উদীয়মান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে আমাদের নৈকট্য কাজে লাগাতে হবে। এশিয়া একুশ শতকের অর্থনৈতিক বিশ্বের কেন্দ্র হতে চলেছে।
চ্যালেঞ্জগুলো কার্যকরভাবে সামাল দিতে আমাদের কার্যকর গণতন্ত্র দরকার, যেখানে রাজনৈতিক শক্তি ও অর্থের জায়গায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও মতামত গুরুত্ব দেওয়া হবে।
অর্থনৈতিক সুযোগ আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে। আমাদের সামাজিক সম্পর্কে আরও সহিষ্ণুতা আনতে হবে। আর সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়িত করে তাদের পূর্ণাঙ্গ নাগরিকে রূপান্তরিত করতে হবে।
রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নারীদের শক্তি ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। কর্মক্ষেত্রে অংশীদারির মাধ্যমে নারীদের ব্যষ্টিক থেকে সামষ্টিক অর্থনীতিতে আসতে উৎসাহিত করতে হবে। আইন ও সমাজ যেখানে নারীদের সমান নাগরিক হিসেবে শ্রদ্ধা ও সুরক্ষা উভয়ই দেবে।
আইনের শাসনে বিশ্বাস স্থাপনে আমাদের আবারও দৃঢ় হতে হবে, যেখানে আইন সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হবে; আইন সেখানে অন্যায্যভাবে দলীয় ও ক্রয়যোগ্য হাতিয়ার হবে না।
প্রথম আলো: বাংলাদেশের ওপর নতুন সমস্যা চেপে বসেছে—রোহিঙ্গা শরণার্থী। উত্তরণের উপায় কী?
রেহমান সোবহান: রোহিঙ্গা সংকটে আন্তর্জাতিক মহল যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাতে এ কথা স্বীকার করতে হবে যে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ছে এবং বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে দেখেছি নিউইয়র্ক টাইমস এক দিন পরপর রোহিঙ্গাদের নিয়ে উপসম্পাদকীয় ছেপেছে। কিন্তু সমস্যা হলো মিয়ানমারের প্রতিবেশী চীন মিয়ানমারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছে। অন্যদিকে ভারত সতর্ক পা ফেলছে। মিয়ানমারে দুটি দেশেরই প্রচুর বিনিয়োগ আছে। তারপরও চীন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ঢাকা সফর করেছেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছেন। আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। রোহিঙ্গা সংকটে আমাদের অর্থনীতিতে যে চাপ পড়ছে সেটি হয়তো সামাল দেওয়া যাবে। আমাদের অর্থনীতি খুব ছোট নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপদের শঙ্কাই বেশি। অতএব মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে হবে, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
রেহমান সোবহান : আপনাকেও ধন্যবাদ।
প্রথমআলো
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন