ড. মং জার্নির জন্ম ১৯৬১ সালে, মান্দেলেতে। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন-মেডিসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৮ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস, অক্সফোর্ড, হার্ভার্ডে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। ৩০ বছর ধরে মিয়ানমারের মানবাধিকারের প্রবক্তা হওয়ার কারণে তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর কুয়ালালামপুরের পুলম্যান হোটেলে এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলো: আমাদের জানামতে আপনিই একমাত্র বর্মি বৌদ্ধ বিশেষজ্ঞ, যিনি রোহিঙ্গা নিধনের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে সোচ্চার। আপনি কেন এবং কীভাবে এর সঙ্গে যুক্ত হলেন?
মং জার্নি: ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইনের ক্ষমতা দখলের এক বছর পর মান্দেলেতে আমার জন্ম। আমার পরিবারের তিন প্রজন্ম সামরিক বাহিনীতে। আমার মায়ের চাচা সু চির বাবা অং সানের বন্ধু সহপাঠী এবং রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পেগু হলের ‘পরবর্তী দরজার প্রতিবেশী’ ছিলেন। আমার প্রয়াত দাদা লে. কর্নেল আন্ত কিউ ১৯৬১ সালে আরাকানের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত মাইউ জেলায় মোতায়েন করা অল বার্মা ফোর্সেস ইন আরাকানের জ্যেষ্ঠ উপ-অধিনায়ক ছিলেন। তখন কিন্তু রোহিঙ্গারা বার্মার সামরিক প্রধান জেনারেল নে উইন এবং বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী উ নু-র দ্বারা সমর্থিত সরকারি তালিকাভুক্ত জাতিগত সংখ্যালঘু ছিল।
প্রথম আলো: ২০১২ সালে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের গোলটেবিলে পাশাপাশি বসে আপনি ও সু চি অংশ নিয়েছিলেন। তখন তিনি কী বলেছিলেন?
মং জার্নি: ওই আলোচনায় সু চি রোহিঙ্গা সম্পর্কে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। কিন্তু ওই আলোচনা শেষে সেখানে উপস্থিত আমার একজন বর্মি সহকর্মীর সঙ্গে সু চির কথা হয়। মি. কো অং-কে সু চি বলেছেন, তিনি আমার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত যে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়া উচিত। কিন্তু জাতিগত সংখ্যালঘুর স্বীকৃতি তাদের প্রাপ্য নয়।
প্রথম আলো: কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে তিনি কি কখনোই কিছু বলেননি?
মং জার্নি: না, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার দিনগুলোতেও তিনি বক্তব্য দেননি। যদিও তিনি উত্তর রাখাইন পরিদর্শন করেছেন। ১৯৮৯ সালে এনএলডির পক্ষে প্রচারণা চালাতে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। রোহিঙ্গারা রাখাইনে এনএলডির কার্যালয় খুলেছেন।
প্রথম আলো: রোহিঙ্গা ব্যতিরেকে অন্যান্য মুসলমানের প্রতি তাঁর কোনো স্বতন্ত্র অবস্থান আছে কি না?
মং জার্নি: ২০১৫ সালে তিনি নিশ্চিত করেন যে সংসদে যাতে কোনো মুসলমান না আসে। তবে বার্মার গোড়ার দিকে মানবাধিকার আন্দোলনে বর্তমানের মতো মুসলমানবিদ্বেষী বর্ণবাদ চোখে পড়েনি। গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলোতে তাঁর উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেকেই মুসলমান ছিলেন। এমনকি সাবেক মুসলমান নৌ কমান্ডার ক্যাপ্টেন বা থ অং সান সু চিকে সমর্থন দিয়ে হত্যার শিকার হন। এই মুসলমান সামরিক অফিসার একজন লেখক ছিলেন। তিনি আকা মং থ কা ছদ্মনামে লিখতেন। সামরিক বাহিনী তাঁকে নির্যাতন করে হত্যা করেছিল।
সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ যাতে চাপা পড়ে, সে কারণে সামরিক বাহিনী বর্মিদের উগ্রবাদী করেছে।
প্রথম আলো: ১৯৪৮ সালে রোহিঙ্গারা বার্মার নাগরিকত্ব আইনে কী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল?
মং জার্নি: ১৯৪৮ সালের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গা বা সংখ্যালঘু মুসলমান কোনো পরিভাষায় ব্যবহার করা হয়নি। আরাকানে বসবাসরত সব বাসিন্দার একটিমাত্র ‘আধিবাসী’ ক্যাটাগরিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল। সবার পরিচয় ছিল আরাকানি।
প্রথম আলো: এটা কি ঠিক যে আপনি বর্মি সামরিক বাহিনীর পক্ষে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে অংশ নিয়েছিলেন?
মং জার্নি: আমি নিজের উদ্যোগে ২০০৫-০৮ সালে বর্মি সামরিক বাহিনী এবং একাধিক পশ্চিমা সরকার, আইএলওসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ট্র্যাক-টু কূটনীতির সূচনা করেছিলাম। ২০০৫ ও ২০০৬ সালে আমি বার্মায় ফিরে তৎকালীন লে. জে. মিয়ন্ত স-এর সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। তবে ২০০৮ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস আঘাত হানার পর সামরিক বাহিনী যখন দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে বাধা দেয়, তখন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করি।
প্রথম আলো: বর্তমানের তিন শীর্ষ বর্মি জেনারেলের অন্যতম জেনারেল মিয়া তুন উ-এর সঙ্গে আপনার ২০০৫ সালের একটি আলোকচিত্র আমাদের হাতে আছে। তখন তাঁদের কেমন মনোভাব দেখেছেন?
মং জার্নি: যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে আমার দেশে ফেরার উদ্দেশ্য ছিল পাশ্চাত্যের সঙ্গে বার্মার পররাষ্ট্র সম্পর্ক স্বাভাবিককরণে ভূমিকা রাখা। আপনি যে বর্তমান শীর্ষ জেনারেলের কথা বলছেন, তখন তিনি ছিলেন একজন লে. কর্নেল। জেনারেল মিয়ন্ত এবং আমার মধ্যে তিনি লিয়াজোঁ রক্ষা করতেন। আমি শীর্ষ বর্মি জেনারেলদের সঙ্গে ২০০৪-২০০৮ সাল পর্যন্ত সম্পৃক্ত ছিলাম। তখন রোহিঙ্গাদের নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ দেখিনি। ওই সময়ে রোহিঙ্গারা এতটা নির্যাতানের শিকার, তা আমিও জানতাম না। তাই এ নিয়ে কথাও হয়নি।
প্রথম আলো: বর্মি সামরিক বাহিনীর মূল আপত্তিটা কোথায়?
মং জার্নি: বর্মি জেনারেলরা রোহিঙ্গা ইস্যুকে তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক পটভূমি থেকে মূল্যায়ন করে থাকে। তাঁরা ভুলভাবে মনে করে থাকে, পশ্চিম বার্মায় কখনো মুসলমান উপস্থিতি ছিল না। তাই রোহিঙ্গারা বার্মার কেউ নয়, বরং রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি বার্মার জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি একটি হুমকি।
প্রথম আলো: মূল কারণ হিসেবে যদি তিনটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করতে বলি, তাহলে কী বলবেন?
মং জার্নি: নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি তাদের নেতিবাচক মনোভাবের দুটি কারণ বলতে চাই। প্রথমত, পাকিস্তান ও বর্মি আর্মির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। পাকিস্তান আর্মি অব্যাহতভাবে শয়ে শয়ে বর্মি সামরিক গোয়েন্দাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, জেনারেলগণ কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখা এবং ক্ষমতা নিরঙ্কুশকরণে বিশ্বাসী। তাঁরা নীতিগত ও বাস্তবে কোনো ধরনের অঞ্চলগত বিচ্ছিন্নতার বিরোধী। আর ১৯৭১ সাল থেকে বার্মা-বাংলাদেশ সম্পর্ক আসলে কখনোই সত্যিকার অর্থে ভালো ছিল না।
প্রথম আলো: রোহিঙ্গারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৪২-৪৫) জাপানিদের সমর্থন এবং সাতচল্লিশের ভারত ভাগকালে পাকিস্তানের সঙ্গে যেতে চেয়েছিল। অনেকের মতে, এভাবে তারা ইতিহাসের ভুল দিকে ছিল, সে কারণেও বর্মিরা ক্ষুব্ধ? এসব সত্যি?
মং জার্নি: এটা অসত্য যে রোহিঙ্গারা জাপানিদের পক্ষ নিয়েছিল। তারা ব্রিটিশদের প্রতি অনুগত ছিল। বরং রাখাইন বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরাই ফ্যাসিস্ট জাপানি দখলদারি শক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ১৯৪৮ সালে বার্মার স্বাধীনতার প্রাক্কালে ব্রিটিশ আর্মিতে থাকা একজন রোহিঙ্গা কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি উপদল পূর্ব পাকিস্তানে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গা এই বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে বর্মি সামরিক বাহিনীর পাশে ছিল। সে কারণে বর্মি সামরিক বাহিনী স্বাধীনতার পরে একটি শান্তিপূর্ণ সংখ্যালঘু হিসেবে তাদের মর্যাদা স্বীকার করে নিয়েছিল। রোহিঙ্গাদের প্রতি এই স্বীকৃতি কিন্তু বার্মাজুড়ে বিস্তৃত বাদবাকি ১৬টি বিভিন্ন মুসলমান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী থেকে ভিন্ন। তাই ঢাকা ট্রিবিউনে বার্মায় নিযুক্ত একজন বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি যেমনটা বলেছেন, তারা একটি জাতিগত গোষ্ঠীর স্বীকৃতি পেলে তারা স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা চাইবে, এটা একটা ভুল ধারণা। কারণ, বার্মায় বহু জাতিগত গ্রুপ রয়েছে, যারা সরকারিভাবে স্বীকৃত। কিন্তু এর মধ্যে অল্পসংখ্যকই জাতিগত অঞ্চলের মর্যাদা চাইছে।
প্রথম আলো: বর্মি আমজনতাও রোহিঙ্গাবিদ্বেষী, ধারণাটি কতটা সত্যি?
মং জার্নি: ১৯৮৮ সালের বর্মি মানুষ আর আজকের মানুষ এক নয়। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ যাতে চাপা পড়ে, সে কারণে সামরিক বাহিনী বর্মিদের উগ্রবাদী করেছে। বর্মি সেনাবাহিনী শান্তি চায় না। কারণ, শান্তি সামরিক বাহিনীর পক্ষে যায় না। বন্দুক ও সহিংসতা তাদের পছন্দ। সংস্কার যেটুকু শুরু হয়েছিল, তা শেষ। পাঁচ বছর আগেও মানুষ সংবিধানের পরিবর্তন চেয়েছিল। সেনারা যাতে ব্যারাকে ফিরে যায়, আমরা অধিকতর সাম্য ও সমতার নীতির বাস্তবায়ন আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন আমরা ‘কালা’ হত্যা করতে চাই। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা এখন দেশের প্রতিরক্ষায় নেমেছি।
প্রথম আলো: বিবিসিতে প্রচারিত হওয়া তথ্যমতে, এটা কি ঠিক যে অং সান রোহিঙ্গা হত্যা করেছিলেন? যুক্তরাষ্ট্রের গণহত্যা গবেষক গ্রেগরি স্ট্যান্টন বলেছেন, পিতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন সু চি? সু চিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
মং জার্নি: এটা ঠিক যে মান্দেলেতে অং সানের হাতে একজন নিহত হওয়ার একটা ঘটনা ঘটেছিল। নিহত ব্যক্তি আমার এক প্রতিবেশীর বাবা ছিলেন। কিন্তু তিনি রোহিঙ্গা নন। অং সান জাপানি ঔপনিবেশিক আমলে আরাকানে এসেছিলেন। তখন তিনি ওই ইন্দো-বার্মিজ সরকারি কর্মকর্তাকে জাতীয়তাবাদী বাহিনীর ওপর গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে গুলি করে হত্যা করেছিলেন।
অং সানের সুনীতি থেকে অবশ্যই সরে এসেছেন সু চি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দেখতে ছুটে গেছেন। সু চি বিপন্ন মানুষের পাশে যাননি। শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৬ কোটি মানুষ খেতে পারলে আরও ৫ লাখ খেতে পারবে। বিপন্ন ব্যক্তিদের দেখে তাঁর মধ্যে আমরা একটা পরিবর্তন দেখলাম। সব রাজনীতিকই একটা হিসাব-নিকাশ করেন। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাঁরা তাঁদের বিবেক বা হৃদয় সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলবেন। তাই সু চির থেকে শেখ হাসিনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনা মিথ্যা বলেননি। অন্যদিকে সু চি বিবিসিকে বলেছিলেন, তারা আমাদের নয়, তাই কেন তাদের সুরক্ষা দেব? তিনি নিজেকে এক হৃদয়হীনায় পরিণত করেছেন।
প্রথম আলো: প্রভাবশালী স্বাধীন পশ্চিমা গণমাধ্যম কেন সরকারি সুরে জাতিগত নির্মূলকরণ (এথনিক ক্লিনজিং) ব্যবহারের প্রবণতা দেখাচ্ছে?
মং জার্নি: সার্ব যুদ্ধাপরাধী মিলোসেভিচ শাস্তি এড়াতে কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন। তিনি জানতেন, এটি আন্তর্জাতিক আইন সমর্থন করে না। অনেক সাংবাদিক জেনে বা না জেনেও এই পরিভাষা ব্যবহার করছেন। কিন্তু জাতিসংঘ সুচিন্তিতভাবে নীতি হিসেবে নিয়েই গণহত্যাকে গণহত্যা বলছে না। এটা অসততা। তাঁরা রাজনীতির খেলা খেলছেন। তাঁরা জানেন, গণহত্যা শব্দ উচ্চারণ করামাত্রই জাতিসংঘের জন্য মিয়ানমারের বিচার করা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়বে। ১৯৭৮ সালে ব্যাপকভিত্তিক নির্যাতন করে গণহত্যার প্রথম বছরটি শুরু হয়। এর ১২ বছর আগে ১৯৬৬ সালে গণহত্যার নীলনকশা তৈরি করা হয়। সেই বছরে সামরিক বাহিনী উত্তর আরাকানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃত্রিমভাবে বৌদ্ধ জনসংখ্যা বাড়িয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়। আর এটাই কালক্রমে গণহত্যার পটভূমি তৈরি করে। তাই আমি ১৯৬৬-কে জেনোসাইডের জেনেসিস বলি।
প্রথম আলো: বাংলাদেশের কী পরিভাষা ব্যবহার করা উচিত?
মং জার্নি: ১৯৭৮ সালে যখন প্রথম উদ্বাস্তু স্রোত বয়েছিল, সেই থেকে গত ৩৯ বছরে আমরা দেখি, গড়ে প্রতি এক দশকে বাংলাদেশে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা চলে আসছে। আপনাদের দুটি বিশেষ করণীয়। প্রথমত, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের উচিত, সর্বদা রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করবে। দ্বিতীয়ত, তারা বলবে, রোহিঙ্গা বার্মার সরকারিভাবে স্বীকৃত একটি জাতিগত সম্প্রদায়।
প্রথম আলো: আরসার শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে আপনার মন্তব্য?
মং জার্নি: আমার তা জানা নেই। তবে বর্মি নির্যাতন শুরুর পরে যখন মুজাহিদিন নামের একদল বিচ্ছিন্নতাবাদী পথে গেল, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া রোহিঙ্গা যুবকেরা তা রুখে দাঁড়াল। তারা বুঝল, তাদের ভবিষ্যৎ রেঙ্গুন সরকারের সঙ্গে জড়িত। তাই রোহিঙ্গারা বর্মি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাত মিলিয়েছিল। এমনকি পরে এই তরুণেরা মুজাহিদিন ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে অস্ত্র সমর্পণেও দূতিয়ালি করেছিল। সে জন্য বর্মি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গাদের বীরত্বসূচক খেতাব দিয়েছিল। আমার কাছে তার নথিপত্র ও আলোকচিত্র রয়েছে।
প্রথম আলো: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একজন মন্ত্রী ঘুরে গেলেন। আপনি আশাবাদী?
মং জার্নি: তিনি এই সংকট মোকাবিলায় সু চির নিয়োগ করা তিন বেসামরিক কূটনীতিকের একজন। তাঁদের সারা জীবন কেটেছে আন্তর্জাতিক ফোরামে সামরিক বাহিনীর পক্ষে নির্লজ্জ দালালি করে। তাঁরা প্রত্যেকে ধূর্ত এবং মুসলমানবিদ্বেষী বর্ণবাদী। তাঁদের কারও হৃদয়ে এক তোলা পরিমাণ নীতিবোধ কিংবা মানবিক অনুভূতি নেই। প্রত্যাবাসনের যে প্রস্তাব তা কৌশলগত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর আড়াল করা এবং শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করা এর লক্ষ্য। মনে রাখতে হবে, তাঁদের চূড়ান্ত কৌশলগত লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জাতিসত্তা, তার ইতিহাস, পরিচিতি ও আইনগত অবস্থান ধ্বংস করা। আপনাদের মনে যদি এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ দানা বাঁধে, তাহলে গত ২৫ বছরের জাতিসংঘের নথিগুলো, মানবাধিকারের নথিপত্র এবং ১৯৭৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রেস ক্লিপিংগুলো পাঠ করুন। রোহিঙ্গারা কিন্তু বাড়ি ফিরতে চায় না।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
মং জার্নি: ধন্যবাদ।
প্রথমআলো
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন