আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলের জন্যই সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। কারণ দুটি দলের আমলনামা খুব একটা ভালো নয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি দুই দল অংশগ্রহণ করে তাহলে যে কাজটি প্রথমে করতে হবে তা হলো কাদের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করবে দলগুলো, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে।
তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের হতে হবে প্রতিশ্রুতিবান, সৎ, নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। মানুষের কল্যাণই যাদের আগ্রহ, আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে, রিলিফের টাকা যারা খান তাদের নির্বাচিত করলে হবে না। কারণ তারা জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারবেন না। জনগণ এমন রাজনীতিবিদদের তাদের প্রতিনিধি হিসেবেও দেখতে চান না। আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলেই ভালো রাজনীতিবিদ আছেন। ভালো মানুষ আছেন। সৎ ও যোগ্য লোক রয়েছেন, যারা কল্যাণকামী। মানুষের জন্য যারা কাজ করেন। যোগ্য লোকদের তুলে আনতে হবে কেন্দ্রীয় পর্যায়েÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী সিরাজ।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, সুষ্ঠুই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করাই নয়, নির্বাচনের পরও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া কি হবে। ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারেও দুই দলকে একমত হতে হবে। ক্ষমতায় যেই যাক, তাদের নিশ্চিত করতে হবে দেশের শান্তি-শৃক্সক্ষলা। যারা তাদের ভোট দেয়নি, তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগবে না, ঘরবাড়িতে থাকতে পারবে কিনা তার নিশ্চয়তা থাকা দরকার। দুই দলই যদি কালো টাকা, মন্দ লোক, পেশীশক্তি, অরাজনৈতিক ব্যক্তি, সিভিল-ব্রæক্র্যাটদের নিয়ে, বসন্তের কোকিলদের নিয়ে নির্বাচন করে তাহলে ওই রকম নির্বাচন করে লাভ কী? একসেট খারাপ লোককে বাদ দিয়ে যদি আরেকসেট খারাপ লোককে আপনি সংসদে আনলেন তাহলে তো গণতন্ত্র, সুশাসন ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত হবে না। তারা তো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে রাজনীতি এখন দ্বিদলীয় হয়ে গেছে। প্রধান দলই সাধারণ জনগণের কথা বলে, কিন্তু তাদের স্বার্থক প্রতিনিধিত্ব করেন না। তারা প্রতিনিধিত্ব করেন এ সমাজের উপরতলার লোকজনের। মূলত একদলীয় ব্যাপার হয়ে গেছে। যে দলই ক্ষমতায় যায় তারা একই শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করে। একই শ্রেণির দুই ভাগ। দুই দলের মধ্যে একদল একভাগের স্বার্থরক্ষা করে, অন্যটি আরেকভাগের স্বার্থরক্ষা করে। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল সমাজের ৯৫ ভাগ মানুষেরই প্রতিনিধিত্ব করে না।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জনগণের স্বার্থবিরোধী লোকদের বাদ দিতে হবে। জনগণের যে কথা তারা বলছে, জনকল্যাণের যে কথা তারা বলছে, সুশাসনের যে কথা তারা বলছে তা প্রতিষ্ঠার জন্য পরিবর্তন দরকার। একেবারে যান্ত্রিকভাবে পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। খারাপ লোকগুলো হটিয়ে ভালো লোকগুলো সামনে আনাই হচ্ছে বড় দুই দলের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের প্রতিষ্ঠিত করাই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ। ভালো লোকদের হাতে দল ও সংসদের নেতৃত্ব তুলে দেওয়াই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ যদি তারা গ্রহণ করতে পারেন তাহলে নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ হবে, পেশীশক্তি বন্ধ হবে। বোমাবাজি, ভোটকেন্দ্র দখল, জালভোট বন্ধ হবে। তাহলেই কেবল একটি ভালো সংসদ গঠিত হবে, একটি ভালো সরকার গঠিত হবে। দেশের গণতন্ত্র, সুশাসন, জনগণ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ আশা করতে পারি।
বাংলাদেশে তো বহু রাজনৈতিক দল রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে বাদ দিয়ে বাকি একশ দলকে নিয়ে নির্বাচন করলেও কি সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে? হবে না। তাই প্রধান দুই দলকে অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। আর দুই দলকে নির্বাচনে থাকার জন্য উভয়কেই একটা সমঝোতায় আসতে হবে। কথাবার্তা-আলাপআলোচনা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি সমঝোতা না হয়, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যে যদি কোনো সমঝোতা না হয় আমার ধারণা, আশঙ্কা করিÑ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও মারামারি, জ্বালাওপোড়াও, খুনোখুনি হবে। রাজনীতি সহিংস পথ ধরবে। আর এই আশঙ্কা যদি সত্যিই হয় তাহলে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা এ ব্যাপারে আমি শঙ্কিত। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন যদি সৎভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টাও করে, সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগও করতে চায় তারপরও একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে না।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন