বাংলাদেশে গবেষণামূলক হিফজ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে চাই: সাআদ সুরাইল
28 May 2017, Sunday
সাআদ সুরাইল- ২০১২ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় ৭৩টি দেশের মাঝে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন তিনি। সাআদের পিতার নাম মাওলানা কারী আবদুল জলিল এবং মাতার নামরহিমা আক্তার জেসমিন। হেফজুল কুরআন সমাপ্ত করার পর বর্তমানে আলিশ ২য় বর্ষে পড়াশোনা করছেন সাআদ। ২০০০ সালে জন্মগ্রহণ করার সাআদ সুরাইল নারায়নগঞ্জস্থ রূপগঞ্জ তারাবোর কৃতী সন্তান। সাআদ সুরাইল মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার প্রাক্তন ছাত্র।
প্রিয়.কম: আপনি কেন হাফেজ হয়েছেন?
সাআদ সুরাইল: প্রথমত আমার বাবা-মার স্বপ্ন ছিল- তারা আমাকে কুরআনের হাফেজ বানাবেন। এছাড়া আমারও ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল যে, আমি হাফেজ হবো। সেই সাথে বাংলাদেশে গবেষণামূলক হেফজ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলবো। আমাদের দেশে সাধারণভাবে শুধু কুরআন মুখস্থ করা হয় কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে কুরআনের প্রতিটি বিষয়ে আলাদা আলাদা করে গবেষণা করা হবে। আমি হাফেজ হওয়ার আগেই এটা আমার স্বপ্ন ছিল।
প্রিয়.কম: আপনি একজন বাংলাদেশি হিসাবে এতো বড় একটি অর্জন করেছেন। এই ক্ষেত্রে আপনার অনুভূতিটা কী?
সাআদ সুরাইল: আসলে এই বিষয়টি আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে যতটা না ভালো লাগে, তার থেকে আরো ভালো লাগে যখন আমি ভাবি আমি দেশের জন্য কিছু করতে পেরেছি। আমার মাধ্যমে আমার দেশের নাম উজ্জ্বল হয়েছে। আমি যখন প্রথম হয়েছি, আমার নাম ঘোষণা করার পর আমার বাবার নাম ঘোষণা করেছেন তার পরই বলেছে আমি বাংলাদেশের সন্তান। আমার নাম ঘোষণা শুনে আমি যতটা না আনন্দ পেয়েছিলাম, তার থেকে অনেকগুণ বেশি আনন্দ পেয়েছি যখন বলেছে আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধি। আমি যখন সেই অনুষ্ঠানে পুরষ্কার গ্রহণ করি তখন আমি বাংলাদেশের পতাকাসহ গিয়ে পুরষ্কার গ্রহণ করেছি।
প্রিয়.কম: আপনার এই অর্জনের নেপথ্যে কার বা কাদের অবদান সব থেকে বেশি?
সাআদ সুরাইল: এই ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি অবদান হচ্ছে আমার বাবা-মার। আমাকে নিয়ে তাদের একটা অতিরিক্ত পরিশ্রম ছিল। সেই সাথে আমার উস্তাদরাও আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। অনেক রাত জেগে তারা আমার তেলাওয়াত শুনেছেন এবং অনুশীলন করিয়েছেন।
প্রিয়.কম: এই প্রতিযোগিতার কারণে আপনার অনেক হাফেজদের সাথে মেশার সুযোগ হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে আপনি কি বাহিরের হাফেজদের মধ্যে এমন কোনো গুণ পেয়েছেন যেই গুণগুলো বাংলাদেশি হাফেজদের মধ্যে নেই।
সাআদ সুরাইল: আমি দেখেছি বাহিরের হাফেজদের মনটা অনেক বেশি উদার। আমাদের দেশের হাফেজদের মানসিক উন্নয়ন হওয়াটা খুব বেশি প্রয়োজন।
সাআদের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন মক্কা শরিফের ইমাম আব্দুর রহমান সুদাইসি ও সৌদি সরকারের ধর্মমন্ত্রী সাঞের বিন আব্দুল আজিজ। ছবি: সংগৃহীত
প্রিয়.কম: ভবিষ্যতে আপনি কী হতে চান?
সাআদ সুরাইল: আমার ইচ্ছা আমি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করবো তারপর বাংলাদেশে একটা গবেষণামূলক হিফজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের হাফেজদের জন্য আরো ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো। এছাড়া বাংলাদেশে হাফেজদের মূল্যায়ন অনেক কম। সামাজিকভাবে ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের মূল্য বৃদ্ধি করার জন্য আমি কাজ করবো ইনশা আল্লাহ।
প্রিয়.কম: আপনি বাংলাদেশের জন্য এত সম্মান বয়ে এনেছেন অথচ সরকারিভাবে আপনার কোনো মূলায়ণ নেই। এটা আপনার কাছে কেমন লাগে? এই বিষয়ে আপনার অনুভূতিটা কী?
সাআদ সুরাইল: আমি সরকারকে বলতে চাই, আমরা দেশের জন্য অনেক কিছু করেছি এবং আমরা জানি আমাদের দেশের সরকার মুসলিমবান্ধব সরকার। সুতরাং আমাদের বিষয়গুলো সরকারের উচিত গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখা। আমরা দেশের জন্য ভালো কিছু করার পরও যখন সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য তেমন কিছু করা হয় না। এর দ্বারা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে এই বিষয়টায় আমি খুবই কষ্ট পাই।
প্রিয়.কম: কেউ যদি ভালো হাফেজ হতে চায় তাহলে তার কি কি করা প্রয়োজন?
সাআদ সুরাইল: বাংলাদেশে অনেক হাফেজই তৈরি হচ্ছে কিন্তু কয়জনের মাধ্যমে প্রকৃত খেদমত হচ্ছে সেটা দেখার বিষয়। ভালো হফেজ বলতে আমরা তাকেই বুঝবো যার মাধ্যমে কুরআনের বেশি খেদমত হচ্ছে। আমাদের সব সময় মাথায় থাকতো যে, আমাকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে। আর আমি তখনই অংশগ্রহণ করতে পারবো যখন বাংলাদেশের সবার তুলনায় আমার সব দিক ভালো হবে। তো এই বিষয়টা সবার মাথায় থাকলে আশা করা যায় সবাই ভালো করবে।
প্রিয়.কম: আপনি যখন ৭৩টা দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করে প্রথম হয়ে দেশে ফিরলেন এবং বিমানবন্দরে দেখলেন আপনাকে রিসিভ করার মতোও কেউ নেই, তখন কী মনে হয়েছে?
সাআদ সুরাইল: এটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। দেখুন, বাংলাদেশ থেকে কেউ বিশ্বের কোনো দেশে সামান্য সফলতা অর্জন করলে বাংলাদেশের সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের সংবর্ধনা জানায়, এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে কিন্তু আমরা হাফেজে কুরআনরা বিশ্বের এতগুলো দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশে পক্ষে প্রথম হই, দেশের নাম উজ্জ্বল করি অথচ আমাদেরকে কেউ কোনো সংবর্ধনা জানায় না। এটা আসলে খুবই দুঃখজনক একটি বিষয়।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
Government is a problem, not a solution. Government did not make Saad No 1. If government was involved , Saad would have been No. 20. and no prizes . Because of government Bangladesh is a poor country. Ask a government official how many file he handle per day. You will have your answer.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন