বহুল আলোচিত প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশ যা আশা করেছিল প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের হতাশ হতে হয়েছে। আশা ছিল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে আর হত্যাকা- ঘটবে না, এ রকম একটা কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা, জেন্টেলমেন এগ্রিমেন্ট হোক। ভারত-নেপাল, ভারত-ভুটান সীমান্তে যেখানে মানুষ হত্যার মতো কোনো ঘটে না। অথচ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে এত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, একেবারে হিমালয়ের উচ্চতায় উঠে গেছে! কিন্তু সীমান্তে দু-চারদিন পরপর মানুষ মারা যায়। এ ব্যাপারেও কিছু হলো না দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ।
তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতা ব্যানার্জী কিভাবে, কতরকম চাতুরিপূর্ণ কথাবার্তা বলছেন যে, পানির দরকার নেই, বিদ্যুৎ দরকার। এবং কোথা থেকে কোন নদী এসে নতুন নতুন নদী থেকে পানি নিয়ে আসো, নতুন নতুন নদীর সমীক্ষার কথা এখন তিনি বলছেন। তিস্তা চুক্তি তো বাংলাদেশের মানুষের বহুল প্রতাশা ছিল। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত যখন বন্যা হয়, তখন বন্যার স্রোত তারা ধরে রাখতে পারলে তো আমাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু বন্যা তো ধরে রাখতে পারছে না। অথচ আমাদের যখন পানির প্রয়োজন পড়ে তখন তারা পানি দেয় না। এসব ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর হতাশা বাংলাদেশের।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন ভারত সফরে গেছেন তখন ওই দেশের একটা প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ফয়সালা করবেন, এমনটি করা দরকার ছিল না। মোদি সাহেবেরই দরকার ছিল মমতা ব্যানার্জীকে নিয়ন্ত্রণ করেৃ. মানুষ যা কিছু করে। তাকে ডাকা হলো, ওখানে গিয়ে তিনি বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া ইলিশ মাছ খেলেন। তারপর যে কথাবার্তাগুলো বললেন তা একেবারে অর্থহীন। তিস্তার ব্যাপারে যেন আর আলাপ-আলোচনা না হয় সেই পথটাকে বন্ধ করার জন্যই হতে পারে তার এসব কথাবার্তা।
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, তিস্তার চুক্তি না হওয়ার ব্যাপারে মমতাকে আমি দায়ী করতে যাব না। কেননা রাষ্ট্র টু রাষ্ট্র যখন আলোচনা হচ্ছে, সেখানে মোদি সাহেবেরই এ দায়িত্ব গ্রহণ করা উচিত ছিল। মোদির উচিত ছিল মমতার সঙ্গে কথাবার্তা বলে আগে থেকে সব ঠিক করে রাখা। বন্ধুত্বপূর্ণ দুটির দেশের মধ্যে আদান-প্রদান হবে না, শুধু নিতেই হবে? দেওয়ার বেলায় চারপাশে ঘোরানো অনর্থক। এটাকে এক ধরনের ভ-ামী, প্রতারণা।
তিনি বলেন, দুই সরকারের শাসনামলেই (নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা) তিস্তা চুক্তির বিষয়ে যে আশা দেখিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, আমার মনে হয়, এখানে আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ যখন মমতা ব্যানার্জী এদিক সেদিক করে, এই নদী ওই নদী থেকে পানি বা বিদ্যুৎ দেবেন এমন সব কথাবার্তা যখন বললেন তার প্রতিউত্তরে মোদির কোনো বক্তব্য ছিল না। এসব কথা যে সঠিক নয়, এ সম্পর্কে কোনো বক্তব্য নেই তার। এসব কোনোরকমে বুঝ দেওয়া, খুশি করার মতো একটা ভাব।
তিনি আরও বলেন, তিস্তা চুক্তি সম্পাদন করার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। এখানে আন্তরিকতার অভাব আছে কিনা জানি না। কারণ মমতা ব্যানার্জী পশ্চিমবঙ্গে তার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার জন্য বা স্থায়ী করার জন্য যা যা করা দরকার, তাই তিনি করবেন। এ ক্ষেত্রে মোদির বিরোধীতা করার প্রয়োজন হলে সেটাও করবেন। তাকে শক্তভাবে ধরলে অন্য পথ ছিল। অন্য পথ মানে কানেক্টিভিটি। নদীর দুই পাশে যে শুধু যে মুসলমানই বাস করে না, হিন্দুরাও বসবাস করে। গরিব মানুষদের এ জন্য পানি প্রয়োজন। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিস্ট্রান সেখানে কিছু রয়েছে। এদের জন্যই পানিটা দরকার। এক্ষেত্রে যদি তাদের এমন শক্ত মানসিকতা থাকে যে, তিস্তার পানি দেব না কিছুতেই তাহলে এদের বন্ধু বলে চিহ্নিত করা সঠিক হবে? মমতা ব্যানার্জী পশ্চিমবঙ্গে তার ক্ষমতাকে স্থায়ী করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, যা বলা প্রয়োজন ওই কথাগুলোই তিনি বলছেন। আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ককে আরও সুন্দর করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ তার কথাবার্তার মধ্যে নেই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, আমাদের সরকার যে সব সুযোগ-সুবিধাগুলো ইতোমধ্যেই ভারতকে দিয়েছে তা তুলে নিলেই হয়। তাহলেই তো তারা টের পায় ব্যাপারটা কতটা জটিল। তাদের সাতটি রাজ্যে যে একরকম বিনা ভাড়ায় জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করছে, একটা জায়গা কোনো একটা ধাক্কা দিলে পশ্চিমবঙ্গ সহ সব ঠিক হয়ে যায়। এমন একটা বার্তা দেওয়া যে, তোমরা যদি আমাদের কিছু না দিতে পারো, আমাদের খেয়ে কাজ নেই আমরা কেন তোমাদের সুবিধা দেব, কী জন্য কোন স্বার্থে দেব? স্বার্থের ব্যপারটা তো শুধু একদিকের নয়। কূটনৈতিকভাবে আমাদের আরও শক্ত অবস্থান থাকা দরকার ছিল। কারণ এখানে আদান-প্রদান দেনা-পাওনার ব্যাপার। একপক্ষ শুধু দিয়েই যাবে, বিনিময়ে কোনো কিছু পাবে নাÑ এটাতো হতে পারে না। এটা কোথাও হয় না। আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন