দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের জন্য কাজ করব
31 March 2017, Friday
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এডভোকেট জয়নুল আবেদীন। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
১৯৫৩ সালের ২৭ জুলাই বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন এডভোকেট জয়নুল আবেদীন। ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর থেকে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
ছাত্রজীবনেই অংশ নেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ছাত্রলীগ বিভক্ত হলে তিনি বাংলা ছাত্রলীগের (স্বাধীনতার পর বিভক্ত ছাত্রলীগের একাংশ) কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। পরবর্তীতে বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন। বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন।
জয়নুল আবেদীন এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে একবার করে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ২২ ও ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আবদুল মতিন খসরুকে হারিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এই নির্বাচনে কার্যনির্বাহী কমিটির মোট ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ ৮টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
নির্বাচনে এই বিজয়ের পর সোমবার (২৭ মার্চ) প্রথম কার্যদিবসে নবনির্বাচিত সভাপতি এডভোকেট জয়নুল আবেদীন সমসাময়িক রাজনীতি, আইন ও বিচার অঙ্গনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এডভোকেট জয়নুল আবেদীনের ব্যক্তিগত চেম্বারে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক-খাদেমুল ইসলাম।
দ্য রিপোর্ট : সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে এই ফলাফলকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
জয়নুল আবেদীন : জাতির জন্য এটা একটা ক্রান্তিকাল। যখন বিচার ব্যবস্থা জিম্মি, সাংবিধানিকভাবে বিচার ব্যবস্থা চলছে না। মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত। বিনাবিচারে ক্রসফায়ারের নামে মানুষকে গুলি করা হচ্ছে। এখন স্বাধীনতার মাস। আমরা যে কারণে স্বাধীনতা অর্জন করেছি সে ফল এখনো মানুষ পায় নাই। পাকিস্তানিরা আমাদের গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। আজকে আবার এই সরকারের আমলে মানুষকে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের উপরে মানুষের আশা-ভরসা অনেক। সেই কারণেই মানুষ মনে করে এখানে আইনজীবীদের যে ভোট এটা অত্যন্ত মূল্যবান ভোট। তার কারণ, এই ভোটাররা সারা বাংলাদেশের ভোটার। সারাদেশে যতোগুলো বার আছে সেই বারের প্রতিনিধিরা এখানে ভোট দেন। সেই ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি মনে করি, এই বিজয়ের মাধ্যমে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মানুষের যে আশা-আকাঙ্খা তাদের বিজয় হয়েছে। যে আশা-ভরসা নিয়ে আমাদেরকে ভোট দিয়েছেন সেই আশা-ভরসার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব।
দ্য রিপোর্ট : এই নির্বাচনে বিজয়ের পর আইনজীবীদের কল্যাণে কাজ করতে আপনাদের মূল লক্ষ্য কি?
জয়নুল আবেদীন : বার এবং বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্কের কিছু অভাব রয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বার ও বেঞ্চের মধ্যে সেই সুসম্পর্ক স্থাপন করা। আইনজীবীদের উন্নয়ন নিয়ে অনেক ক্ষোভ আছে। যেমন এখানে সাত হাজারের মতো সদস্য আছে। কিন্তু সে মোতাবেক এখানে উন্নয়ন কাজ হয়নি। সারা বাংলাদেশের আইনজীবীরা এখানে আসেন। কিন্তু তাদের একটিমাত্র তিনতলা ভবন, সেটাও নড়বড়ে। সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য আইনজীবীদের একটা বিশতলা ভবন নির্মাণ অতীব জরুরি। সেই কাজটি আশা করি আমরা করতে সক্ষম হব। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাঁকে বুঝাবার চেষ্টা করব, এই আদালতের আওতায় যে জায়গা সেখানে আইনজীবীদের জন্য স্বল্প একটু জায়গা আছে; এই জায়গার মধ্যে কিভাবে আইনজীবীদের জন্য একটি বিশতলা বা তারও বেশি বড় বিল্ডিং করা যায়। সেজন্য কাজ করব। আইনজীবীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো ও তারা যাতে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
দ্য রিপোর্ট : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে আপনারা কি পদক্ষেপ নেবেন?
জয়নুল আবেদীন : স্বাধীনতা তো পরের কথা, বিচার বিভাগ এখন একটি মহলের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। এটা তো আমাদের প্রধান বিচারপতি নিজেই বলেছেন। সেই জিম্মিদশা থেকে বিচার বিভাগকে উদ্ধার করার জন্য আমরা চেষ্টা করব।
দ্য রিপোর্ট : অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বার বার বলা হলেও সরকার পদক্ষেপ নেয়নি। এ বিষয়ে বার কি কোনো ভূমিকা রাখবে?
জয়নুল আবেদীন : (শৃঙ্খলাবিধি তৈরির কথা) বলা হচ্ছে, কিন্তু সেটা হচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্ট থেকে যেটা বলা হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করব। আমরা সচেষ্ট হব। অতীতে কে কি ভূমিকা রেখেছে জানি না। আমি যখন অতীতে সভাপতি ছিলাম নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছি। আমার দল দলের কাছে। দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের জন্য কাজ করব, বিচার বিভাগের জন্য কাজ করব।
দ্য রিপোর্ট : বিচারক নিয়োগে একটি আইন প্রণয়নে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্ব কি কোন পদক্ষেপ নেবে?
জয়নুল আবেদীন : উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে একটি আইন হওয়া দরকার। আইনের মাধ্যমে যোগ্য বিচারপতি নিয়োগ করা দরকার। এখানে বিচারপ্রার্থী মানুষ যাতে বিচার পায়, সেজন্য অত্যন্ত যোগ্য দক্ষ বিচারপতি নিয়োগ করা দরকার। সে বিষয়ে আমরা চেষ্টা করব, দাবি করব। অতীতেও আমি যখন সভাপতি ছিলাম বাস্তবভিত্তিক দাবি করেছিলাম, এবারও করব।
দ্য রিপোর্ট : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সুপ্রিম কোর্ট বারে সরকারপন্থিদের পরাজয়কে জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অভিহিত করেছেন, আপনিও কি তাই মনে করেন?
জয়নুল আবেদীন : আমিও তাই মনে করি। আইনজীবীরা তো বিশ কোটি মানুষের প্রতিনিধি। তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত দেশের সাধারণ মানুষের সম্পর্ক স্থাপিত হয়, যোগাযোগ হয়। আইনজীবীদের ভোট মানে হচ্ছে এই দেশের আপামর জনসাধারণের ইচ্ছার একটি প্রতিফলন।
দ্য রিপোর্ট : জাতীয় নির্বাচনের দুই বছরের কম সময় বাকি আছে। সেই নির্বাচনে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বার কি কোনো ভূমিকা রাখবে?
জয়নুল আবেদীন : আইনজীবীদের নিয়ে কিভাবে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো যায় সে ব্যাপারে আমরা বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব। গণতন্ত্রের সংগ্রামে এই বার অতীতেও ভূমিকা রেখেছে, ভবিষ্যতেও ভূমিকা রাখবে।
দ্য রিপোর্ট : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জয়নুল আবেদীন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
(দ্য রিপোর্ট
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন