সমাজ গবেষক, অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ আকবর আলি খানের জন্ম ১৯৪৪ সালে। কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ও পিএইচডি করেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা তাঁকে তাঁর অনুপস্থিতিতে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। বর্তমানে অধ্যাপনা করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ: ডিসকভারি অব বাংলাদেশ ও অ্যাসপেক্টস অব পিজ্যান্টবি হেভিয়ারইন বেঙ্গল দেশে-বিদেশে বহুল প্রশংসিত। পাঠকপ্রিয় বই পরার্থপর তার অর্থনীতি, আজবজবর–আজব অর্থনীতি, গ্রেশামসল সিনড্রোম অ্যান্ড বিয়ন্ড এবং ফ্রেন্ডলিফায়ার্স, হাম্পটি ডাম্পটি িডজ অর্ডার অ্যান্ড আদার এসেইজ । তিনি নতুন আলোকে জীবনানন্দের বনলতা সেন বইটির জন্য পুরস্কৃত হন। তাঁর সর্বশেষ গ্রন্থ অবাক বাংলাদেশ: বিচিত্র ছলনা জালে রাজনীতি । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক ওয়াসিফ
প্রথম আলো : ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আবির্ভাব কি অনিবার্য ঘটনা? এটাই কি হওয়ার কথা ছিল?
আকবর আলি খান : দেখুন, জাতিরাষ্ট্র বিষয়টি আধুনিক ধারণা। এ ধারণা প্রাচীনকালে ছিল না। আমরা যদি আশা করি প্রাচীনকালের লোকেরা আধুনিক রাষ্ট্রের কল্পনা করবে, সেটা ঠিক না। ১৮১৫-৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে জাতিরাষ্ট্র ছিল মাত্র ৩৮টি। ২০১৫ সালে তার সংখ্যা ২০৩। শুধু আমাদের দেশেই না, পৃথিবীর সবখানেই জাতিসত্তা পরে জন্ম নিয়েছে। কাজেই বাংলাদেশের উৎস প্রাচীন বা মধ্যযুগে খুঁজলে হবে না, বাংলাদেশের আদিসত্তার উৎস খুঁজতে হবে ঊনবিংশ থেকে বিংশ শতকে। সেখানেও দেখি বাংলাদেশ প্রথমে আবির্ভূত হয়নি। প্রথমে আবির্ভূত হয়েছিল পাকিস্তান ও ভারত। বাঙালিদের জন্য পরিচয়ের ভুল ঠিকানা ছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের আবির্ভাব ছিল এক আকস্মিক ঘটনা। ভারত উপমহাদেশে যত মুসলমান ছিল, তারা এক জাতি; হিন্দু যারা তারা আরেক জাতি—এমন ভাবনা থেকে এর সৃষ্টি। কার্যত মুসলমান বা হিন্দুদের সবাই এক ভাষা, এক জাতি, এক অঞ্চলের মানুষ ছিল না। আরব ছিল অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড, কিন্তু তারাও এখন ১৯টি রাষ্ট্রে বিভক্ত। একই ধর্ম, একই ভাষা ও ভূমি থাকা সত্ত্বেও আরবরা যেখানে এত বিভক্ত, সেখানে ভারতের মুসলমানদের একটাই দেশ হওয়ার কোনোই কারণ ছিল না। এ রাষ্ট্র ভাঙা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। সে জন্য আমি মনে করি, আধুনিক ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়া ছিল অনিবার্য।
প্রথম আলো : অনেকেই বলেন, পাকিস্তান না হলে বাংলাদেশ হতো না।
আকবর আলি খান : পাকিস্তান না হলে কেবিনেট মিশন পরিকল্পনামাফিক তিনটা রাষ্ট্র হতো। এই পরিকল্পনা ব্রিটিশ সরকার, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ—সবাই মেনে নিয়েছিল। তাহলে এক ভাগে থাকত যুক্তবাংলা ও আসাম, পশ্চিম পাকিস্তানের অঞ্চল হতো এক ভাগ, বাকি ভারত থাকত এক ভাগে। মুসলিম লীগ শেষ পর্যন্ত কেবিনেট মিশন প্ল্যানে রাজি ছিল কিন্তু কংগ্রেস মানেনি। কংগ্রেস অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী হয়, তারা এটার বিরোধিতা করে। ওই পরিকল্পনায় একটা ত্রুটি ছিল, আসামকে বাংলার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার বিপক্ষে ছিল অসমিয়া জাতীয়তাবাদীরা। তারা দিল্লিতে গিয়ে দেনদরবার করে। অসমিয়াদের চেষ্টা এবং সর্বভারতীয় চেতনা মিলে কংগ্রেস এটাকে প্রত্যাখ্যান করে। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বললেন, এটা মস্ত বড় ভুল হয়ে গেল। এই ভুলেরই খেসারত হলো পূর্ব পাকিস্তান। লাখ লাখ মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে গেল, বহু মানুষ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রাণ হারাল। তারপরও সমস্যার সমাধান হলো না। কাজেই পূর্ব পাকিস্তানের জন্ম হলো এক ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা। বাংলাদেশের আবির্ভাব সেই দুর্ঘটনারই সংশোধন।
প্রথম আলো : বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি বইয়ে আপনি লিখেছেন, আমাদের জাতিরাষ্ট্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ভাষা ও ধর্ম। বাংলা ভাষা ও বাঙালি মুসলমান পরিচয়ের উন্মেষ তো সুলতানি আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে। সেদিক থেকে বাঙালি, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের ধারণার উন্মেষ মধ্যযুগ থেকে।
আকবর আলি খান : আমি যে ব্যাখ্যা দিয়েছি, তা আমি দেশের রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যের আলোকে দিয়েছি। এবং লক্ষ করে দেখবেন, এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমি বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য উদ্ধৃত করেছি। তিনি দুই ধরনের বাঙালিতে বিশ্বাস করতেন: ‘আমাদের বাঙালি’ এবং ‘আমাদের নয় বাঙালি’। আমাদের বাঙালি অর্থাৎ পূর্ব বাংলার বাঙালিদের প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, আমরা মুসলমান এবং আমরা বাঙালি, মানে বাংলা ভাষাভাষী। এ থেকে স্পষ্ট দেখা যায়, জাতির পিতা স্বয়ং মনে করতেন আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদের দুটি উপাদান রয়েছে। একটি হলো ধর্ম, আরেকটি হলো ভাষা। কিন্তু ধর্মের প্রভাব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে অনেক কমে যায়। ভাষাচেতনার ভিত্তিতে মুক্তিসংগ্রামের পর তা আরও দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, দুর্বল হয়ে যাওয়া মানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া নয়। আমাদের বর্তমান জাতীয়তাবাদের প্রধান উপাদান ভাষা হলেও তার সঙ্গে ধর্মেরও কিছুটা ভূমিকা রয়ে গেছে।
দ্বিতীয়ত, বলা হয় বাংলা ভাষার আন্দোলন ১৯৫২ সালে হয়েছে। ভাষা আন্দোলন কমপক্ষে ৭০০ বছরের পুরোনো। বাংলা ভাষাকে প্রথমে মোকাবিলা করতে হয়েছে মৌলভিদের। তাঁরা বলতেন বাংলা ভাষা পৌত্তলিক ভাষা, এ ভাষায় ইসলাম সম্পর্কে বই লেখা নাজায়েজ। তখন শাহ মুহাম্মদ সগীর, সৈয়দ সুলতান এঁরা বললেন, বাংলা ভাষায় ইসলাম সম্পর্কে কিছু লিখলে যদি ইসলামের বা মুসলমানের কোনো উপকার হয়, তাহলে সেই গুনাহ আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেবেন। দ্বিতীয়ত, হিন্দু শাস্ত্রকারেরা চাইতেন না যে বাংলা ভাষায় হিন্দুধর্ম সম্পর্কে কিছু লেখা হোক। শুধু মুসলমান সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে রামায়ণ, মহাভারত বাংলায় লেখা সম্ভব হয়েছে। অন্য কোনো সময় এটা সম্ভব হয়নি। তারপর ফারসি ছিল রাষ্ট্রভাষা, তার বিরুদ্ধে বাংলাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। তারপর এল ইংরেজি ও উর্দু, সেগুলোর বিরুদ্ধেও বাংলাকে সংগ্রাম করে টিকতে হয়েছে। সুতরাং বাংলা ভাষাকে ৭০০ বছর ধরে পাঁচটা ভাষার আধিপত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই আন্দোলনের সবচেয়ে গৌরবময় মুহূর্ত হলো ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ভাষার প্রতি আবেগ ৭০০ বছরের সংগ্রামের ফল।
প্রথম আলো : কিন্তু বিজয়ী বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র কি এই দেশের অন্যান্য ভাষাভাষী জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সুবিচার করেছে?
আকবর আলি খান : প্রথমত, বাংলা ভাষাকে আমরা সত্যিকার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। দ্বিতীয়ত, আমি আশা করি অন্য ভাষাগুলো সুরক্ষা করা হবে। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত এটা পারা যায় না। ছোট ছোট জাতিগোষ্ঠী বড়র অন্তর্ভুক্ত হতে চেষ্টা করে। তবু আমি আশা করব, বাংলাদেশের সব ভাষাগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা হবে।
প্রথম আলো : আপনি লিখেছেন যে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের চেয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র অনেক টেকসই। ব্যাখ্যা করবেন কী?
আকবর আলি খান : এদিক থেকে দেখা যাক,বাংলাদেশ যদি না থাকে তাহলে কী হবে? হয় এটা ভারতের নয়তো পাকিস্তানের অংশ হবে। আমি মনে করি না ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের জনসংখ্যা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশে ১৫ কোটি মুসলমান আছে। ১৫ কোটি মুসলমান ভারতের নাগরিক হলে ভারতের রাজনীতি বদলে যাবে, বর্ণহিন্দুদের প্রভাব ক্ষুণ্ন হবে। ভারতের কোনো রাজনৈতিক দল এটা মানবে না। অন্যদিকে ১৬ কোটি বাঙালি ভারতের বাঙালিদের সঙ্গে যোগ হলে ২৩ কোটি বাংলাভাষী অপরাপর প্রদেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হবে, তাদের মধ্যে বিরাট প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। সুতরাং ভারতের পক্ষে কোনোভাবেই বাংলাদেশকে গ্রহণ করা সম্ভব না। আর ১৬ কোটি বাংলাদেশিকে বাদ দিয়ে তো বাংলাদেশকে গ্রহণ করা আরও অসম্ভব।
প্রথম আলো : তার মানে মুসলমান হিসেবে বাঙালি হিসেবে বাংলাদেশই এই ভূখণ্ডের অধিকাংশ জনগণের রাজনৈতিক ঠিকানা?
আকবর আলি খান : ঠিক তাই। আর পাকিস্তানে তো আমরা গিয়েই জেনেছি সেটা অসম্ভব। পাকিস্তান এখনো বাঙালিদের প্রতি বিরূপ। সুতরাং এই দিক থেকে বাংলাদেশ সুস্পষ্টভাবে স্থায়ী ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র। পক্ষান্তরে, ভারতে বিভিন্ন জাতির জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম রয়েছে, তাদের কেউ কেউ সফলও হতে পারে। পাকিস্তানেরও একই অবস্থা। সুতরাং ভারত ভাঙার আশঙ্কা আছে, পাকিস্তানও ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ ভাঙার কোনো আশঙ্কা নেই।
প্রথম আলো : অথচ স্বাধীনতার পরে অনেকেই বলেছিলেন এ রাষ্ট্র টিকবেই না। একজন মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক হিসেবে ৪৬ বছরের স্বাধীনতার অর্জনগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?
আকবর আলি খান : মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি নিজেও বিস্মিত। ১৯৭১ সালে আমরা যে পর্যায়ে ছিলাম, সে পর্যায়ে বসে আমরা এত দূর এগোব, তা কল্পনাও করতে পারিনি। আমি কল্পনা করতে পারিনি আমার গ্রামে বিদ্যুৎ যাবে। আমি কল্পনা করতে পারিনি আমার গ্রামে বিবিসি দেখতে পারব, সকালে চা খাওয়ার সময় প্রথম আলো পড়া সম্ভব হবে। এ রকম অনেক বিস্ময় ঘটেছে। তার চেয়েও বড় হলো, দারিদ্র্যের যে হ্রাস হয়েছে, তা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। আগে মানুষ যেভাবে খাওয়াদাওয়া করত, কাপড়চোপড় পরত, তা অনেক বদলে গেছে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অগ্রগতি হয়েছে, লেখাপড়া বেড়েছে—যদিও শিক্ষার মান কমে গেছে। গড় আয়ু প্রত্যাশা অনেক দূর বেড়েছে। মাথাপিছু আয় তিন গুণ বেড়েছে। আমরা উন্নতি করব, কিন্তু এত উন্নতি করব, তা ১৯৭১ সালে কল্পনাও করতে পারিনি।
প্রথম আলো : কিন্তুএতরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে কীভাবে এটা সম্ভব হলো? সেই রহস্যটা কী?
আকবর আলি খান : এটা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে বহু মতভেদ আছে। বিশ্বব্যাংকও বেকায়দায় আছে। একেক প্রকাশনায় একেক মূল্যায়ন করছে। আমার ধারণা, একটা দেশ যখন অতি নিম্নপর্যায়ে থাকে, তখন বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও কিছু ঘটনা যদি সঠিকভাবে ঘটে, তাহলে এগিয়ে যেতে পারে। আমাদের বেলায় কিছু সঠিক ঘটনা সঠিকভাবে ঘটেছে। যেমন আমাদের এক কোটি লোক বর্তমানে প্রবাসে কাজ করছে। পোশাকশিল্পের প্রসার বিরাট অর্জন। আমরা একাত্তরের চেয়ে তিন গুণ বেশি খাদ্য উৎপাদন করতে পারছি। বিভিন্ন সমস্যা সত্ত্বেও এ ধরনের বেশ কিছু অর্জন আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। পরের পর্যায়ে যখন আমাদের আরও অনেক উন্নতি করতে হবে, তখন প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল থাকলে কিন্তু আর উন্নতি করতে পারব না। আসলে উন্নতি প্রথম দিকে সুশাসনের ওপর নির্ভরশীল না। সুশাসন জরুরি হয়ে পড়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে। আগামী ১০-১২ বছরের মধ্যে যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারি তাহলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।
প্রথম আলো : গণতন্ত্র অর্থাৎ পারস্পরিক অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি ও শাসন ছাড়া কি সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব?
আকবর আলি খান : সম্ভব না। অনেকে বলেন, গণতন্ত্র ছাড়াও তো অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়। হয়েছে কোথাও কোথাও। আবার অমর্ত্য সেন দেখাচ্ছেন, গণতন্ত্র ছাড়া দেশে দুর্ভিক্ষও হয়। যেসব দেশে সুশাসন ছাড়া উন্নতি হয়েছে, তারাও কিন্তু এখন সংকটে পড়ে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার দিকে তাকান, দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে তাকান। সুতরাং সেটা টেকসই হয় না। টেকসই উন্নতি চাইলে অবশ্যই আমাদের গণতন্ত্র লাগবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা যদি সমস্যাগুলো না বোঝেন, তাহলে সমস্যা আরও গভীর হবে। শুধু ক্ষমতার কথা চিন্তা না করে তাঁদের দেশটাকে নিয়ে ভাবতে হবে।
প্রথম আলো : বাংলাদেশে আদর্শিক দ্বন্দ্ব দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে, জাতীয়তাবাদের স্বরূপ নিয়ে, ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে। এসব দ্বন্দ্ব নিয়ে িক এগোনো যাবে?
আকবর আলি খান : আদর্শিক দ্বন্দ্ব সমাধান করা কঠিন না। আমি মনে করি, বাংলাদেশে যে দ্বন্দ্ব চলছে তা দুটি স্বার্থগোষ্ঠীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব। এরা এক পক্ষ ক্ষমতায় থেকে বিরোধীদের বিনাশ করতে চায়। দুই দলকেই যদি এ থেকে নিরস্ত করা না যায়, তাহলে এই সংকট থেকে আমরা মুক্তি পাব না। যখন সমস্যা দেখা দেয়, তখন অনেকেই বলেন রাজনীতি দিয়ে কিছু হবে না। রাজনীতি ব্যর্থ হলে আরও বেশি রাজনীতি লাগবে, আরও বেশি মানুষকে রাজনীতিতে জড়িত হতে হবে। যাঁরা আছেন, শুধু তাঁদের ওপর ছেড়ে রাখলে আরও বিপদ হবে।
প্রথম আলো : বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মূল্যায়ন কত দূর হয়েছে? তাঁর রাষ্ট্র প্রকল্প কি বর্তমান নেতৃত্বের কাছে স্পষ্ট?
আকবর আলি খান : চৌ এন লাইকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল তিনি ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কে কী মনে করেন। প্রশ্নটা করা হয়েছিল ফরাসি বিপ্লবের ২০০ বছর উদ্যাপনের সময়। তিনি বলেছিলেন, ফরাসি বিপ্লবের মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি। বঙ্গবন্ধুর ওপর খুব বেশি গবেষণা হয়নি। আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু ফরাসি বিপ্লবের মতো বিরাট প্রতিষ্ঠান। তত বিরাট কাজ তিনি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি, দিনে দিনে সেটা আরও স্পষ্ট হবে। তবে তিনি ইতিহাসের বিরাট মহিরুহ হিসেবে থেকে যাবেন।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
আকবর আলি খান : ধন্যবাদ।
প্রথমআলো
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন