আজ বা কাল হোক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া- দল, দেশের গণতন্ত্র ও রাজনীতির প্রয়োজনে আমাদের মতো কর্মীদের আবারও কাজ করার সুযোগ দিবেন, এমন বিশ্বাস আমাদের ছিল। যদিও এক এগারো পরবর্তী বিশেষ পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতায় অনাকাক্সিক্ষত কিছু ভূমিকা আমাদের ছিল। যা ছিল সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ও একদমই অনাকাক্সিক্ষত। এর চেয়ে বেশি বিশেষণ এক্ষেত্রে আমি ব্যবহার করব না। তবে দেরীতে হলেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিষয়টি বিবেচনা করেছেন। এবং তা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেনÑ দৈনিক আমাদের সময় ডটকমকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন।
তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত ছিলাম সত্য একদিন না একদিন বেরিয়ে আসবেই। বিগত ১০ বছরের নিষ্ক্রিয়তা ও অন্য কোনো প্রলোভনে পা না দিয়ে প্রমাণ করেছি এই দলের মধ্যে দিয়েই রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে চাই আমরা। দলকে ক্ষমতায় নেওয়াটাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, চাই এখানে একটা সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠিত হোক। বাংলাদেশ ভালো থাকুক। উন্নত জীবন পাক এদেশের আপামর জনসাধারণ।
এক প্রশ্নের জবাবে জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, এক এগারো সময় আমাদের একটা ভুল অবশ্যই ছিল।
সেই ভুলটি হলোÑ আমরা ভেবেছিলাম জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সরকার দুই নেত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কাজে হাত দিবে। এটাই ছিল আমাদের প্রাথমিক ধারণা। নিশ্চয়ই সবার স্মরণ আছে, তখনকার সংঘাতময় রাজনীতির পরে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিল, এই সংঘাতমুক্ত রাজনীতির জন্য সংস্কারের একটা দাবিও তখন ছিল। কিন্তু একটি বিশেষ মহল সংস্কারের জনপ্রিয় এই দাবিটিকে মাইনাস-টু থিউরিতে পরিণত করেছিল। ফলে যারা দুইনেত্রীসহ জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটা সংস্কারের মধ্যে দিয়ে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের কথা, সুস্থ রাজনীতির কথা চিন্তা করল সেই চিন্তার মধ্যেই লেভেল লাগিয়ে দেওয়া হলো মাইনস-টু থিউরি। তৎকালীন ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত একটি বিশেষ মহল এই কাজটি করল। বন্দুক ও গায়ের জোরে সংস্কারের এ ধরনের লেভেল এঁটে দেওয়া হলো।
তিনি বলেন, যে সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ সংস্কারের ইস্যুটিতে সমর্থন করেছিলেন, দুই নেত্রীসহ জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে তা বাস্তবায়ন হবে এই প্রত্যাশাই তাদের ছিল। একটি বিশেষ মহল এই সৎ আকাক্সক্ষাকে ভ-ুল করল। শুধু তাই নয়, দুই নেত্রীসহ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তারা প্রতারণা করল। শুরু করল বিরাজনীতিকীকরণ প্রক্রিয়া। লগি-বৈঠার সংঘাতের প্রেক্ষিতে ভোটের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তরের একটি স্থায়ী প্রক্রিয়া জাতি আশা করেছিল। যা এখনো আমরা অর্জন করতে পারিনি। ফলে ভোটের নামে এখন চলছে প্রহসন। রাজনৈতিক দলগুলোকে যুক্ত করে তা বাস্তবায়িত হবে জনগণ তাই ধরে নিয়েছিল। কিন্তু বিশেষ মহল তা নাকচ করে মাইনাস-টু ফরমুলা গায়ের জোরে, বন্দুকের জোরে চাপিয়ে দিয়েছিল। সৃষ্টি হয়েছিল দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি ও সন্দেহের।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি যে সংকটে আজকে তা কেবল বিএনপির সংকটই নয়, জাতীয় সংকটও বলা যায়।
কেননা একটি গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতির সঙ্গে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল যখন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে যুক্ত থাকে না তখন এটাকে সুস্থ এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলা যায় না। এই সংকট থেকে উত্তরণ করতে হলে বিএনপিকে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে আরও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার অংশ হিসেবেই তিনি আমাদের ডেকেছেন। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সংকট নিরসনের জন্য তার এই পদক্ষেপট কার্যকরি পদক্ষেপ হিসেবেই গণ্য হবে বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ছিলাম রাজনীতিতে, কেবল সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছি। দলের সব পরিকল্পনা আমার জানা নেই বা সব বিষয়ে এখনই আমি কিছু বলতে পারব না। তবে বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল যেকোনো গণবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে সরকার একের পর এক যে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে তার প্রতিবাদ হওয়া উচিত। আমরা তার প্রতিবাদ করছি। সরকার যদি গঠনমূলক হয় তাহলে সরকারও বিরোধীদল সমূহের কাছ থেকে গঠনমূলক সমালোচনা ও বিরোধীতা পাবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে যখন কার্যকর সংসদ থাকে না, তখন সকল সমস্যার সমাধান করার এবং বিতর্কের ফোরাম হিসেবে সংসদের বদলে রাজপথেও অন্যান্য প্রকল্পসমূহ থাকে। বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক দল হিসেবে কার্যকর সংসদের মধ্যে দিয়েই সব সমস্যার ফয়সালা করতে চায়। পৃথিবীর যেকোনো সভ্য দেশেও তাই হয়। সরকার ও বিরোধীদলের তর্ক-বিতর্ক, নীতিনির্ধারণের বিতর্কের জায়গাই হচ্ছে সংসদ। কিন্তু আমাদের দেশে ভোট আছে, ভোটার নেই! গণতন্ত্র আছে, জনগণ নেই। সংবিধান আছে, তার প্রয়োগ নেইÑ এ রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই আমরা চলছি। ফলে একটা কার্যকর সংসদ ও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করার সংগ্রাম যেমন চলবে, তেমনই জনগণের বিরুদ্ধে যায় এমন সব সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করার যে সাংগঠনিক কর্মসূচি দরকার সেখানেও বিএনপি মনোযোগ দিবে। সেই বিষয়গুলোকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন বলেই দলের ঐক্যকে এখন এতটা গুরুত্ব দিয়েছেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আলোচিত সাবেক এই বিএনপি দলীয় সাংসদ বলেন, সরকার এবং বিএনপি উভয়েরই সরকার পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সরকারে কি সমস্যা রয়েছে তা যেমন তারা বুঝে, বাইরের সমস্যা সম্পর্কেও তারা অবগত আছে। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতাদের মুখে সমঝোতার একটা ইঙ্গিত রয়েছে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার তৈরি করা যায় কি না গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে বিএনপি। সমঝোতার বিষয়ে দুই দলের মধ্যে কোনো যোগাযোগ হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই, জানার কথাও নয়। কারণ আমি দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কেউ নই। তবে সমঝোতার বিষয়ে দুই দলের মধ্যে কোনো যোগাযোগ হয়ে থাকলে তা গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্যই একটা শুভলক্ষণ। আমরা কেউ সরকারে থাকব, কেউ থাকব না এটাই তো স্বাভাবিক। আর সরকারে থাকলেই বিরোধীদলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ থাকবে না, বিরোধীদলের সঙ্গে কথা বলা যাবে না, শুধু নির্যাতন করে যাবে এটা তো গণতন্ত্রের ভাষা নয়। গণতন্ত্রের ভাষাই হচ্ছে বিরোধীদলকে ছায়া সরকারের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সরকারকেও বিরোধীদলকে ছায়া সরকারের গুরুত্ব দিয়ে তার সব কথা, সমালোচনা, অভিযোগ কান পেতে শুনতে হবে। আর ছায়া সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা।
বেগম খালেদা জিয়ার মামলা ও সাজা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, মামলা বা আদালতের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার কোনো সুযোগই নেই। কারণ তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর কোনো ভিত্তিই নেই। বিচারব্যবস্থা কোনোভাবেই বিচারব্যবস্থাকে কলুষিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না। হ্যাঁ, আমাদের দেশের রাজনৈতিক অসুস্থতার কারণে কখনো কখনো এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামেও মামলা ছিল, যে মামলাগুলো বাতিল করা হয়েছে। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধেও অনেকগুলো রয়েছে। আমরা যদি কখনো ক্ষমতায় যাই তাহলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মামলাগুলো যেভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে, সেভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোও প্রত্যাহার করা হবে।
আমাদের সময় ডট কম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন