একেএম এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। শরীয়তপুর জেলায় ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলের গণ্ডি পেরনোর আগেই জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শুধু ছাত্রলীগের সভাপতিই নয়, ছাত্র সংসদেরও নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৮৯ সালে নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (জাকসু)ভিপি।
১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন শামীম। দুই দফায় দায়িত্ব পালন করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্মকাণ্ডে ধারাবাহিক আস্থার স্বাক্ষর রেখে সর্বশেষ ২০তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি দায়িত্ব পান দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের। বর্তমানে তিনি রয়েছেন দলের চট্টগ্রাম বিভাগের সংগঠনের তত্ত্বাবধানে।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ধানমণ্ডিস্থ নিজ অফিসে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন এনামুল হক শামীম। তার সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন দ্য রিপোর্টের নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান।
দ্য রিপোর্ট : সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
এ.হ.শামীম : জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে উৎখাত করার জন্য সব সময় ষড়যন্ত্রকারীরা চক্রান্ত করে, ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণ তার সঙ্গে আছে। সেই জন্য সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত পরাজিত হয়, শেখ হাসিনা জয়ী হন। সর্বশেষ পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে বিশ্ব ব্যাংক। এ ছাড়া বাংলাদেশে কিছু লোক, বিশেষ করে একজনের কথা না বললেই নয়-তথাকথিত নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস, এর জন্য ষড়যন্ত্র করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে কানাডিয়ান আদালত প্রমাণ করেছে যে, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। আজকে সত্যেরই বিজয় হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সব সময় জনগণ থাকে, সেই জন্যই ষড়যন্ত্রকারীরা কখনই বিজয়ী হতে পারে না। শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্রকারীদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ক্ষেত্রে, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, ক্রিকেটসহ সবকিছুর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। আওয়ামী লীগকে এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন।
আগামী ২০১৯ সালে নির্বাচনে শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। পর পর তিনবার নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হ্যাটট্রিক করবেন তিনি; এটাই বাংলাদেশের মানুষ মনে করে। সেই লক্ষ্যে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি দল ও তৃণমূলকেও কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের শক্তি, শেখ হাসিনার শক্তি হচ্ছে সরকারের সফলতা। এসব সামনে নিয়ে এসে ২০১৯ সালে নির্বাচনী বৈতরণী আমাদেরকে পার করতে হবে।
দ্য রিপোর্ট : প্রায়ই তৃণমূলের (আওয়ামী লীগের) অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুনোখুনির খবর পাওয়া যায়, এটাকে কীভাবে রোধ করবেন?
এ.হ.শামীম : অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাঝেমধ্যে হয়। কিন্তু আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। দলে বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
দ্য রিপোর্ট : দেশে রাজনৈতিক সংকটের কথা বলছে বিএনপি-আপনি কি বলবেন?
এ.হ.শামীম : বিএনপি নিজেরাই সংকটে থাকে। তাদের বলা হয় ‘নালিশ পার্টি’। তাদের একটা না একটা নালিশ থাকেই। আসলে কোনো আন্দোলনই বিএনপি করতে পারেনি। তারা আজকে দেওলিয়ায় পরিণত হয়েছে। বিরোধীদল হিসেবেও তারা ব্যর্থ। মিটিং ডাকে, মিছিল ডাকে, হরতাল ডাকে; খালেদা জিয়ার ডাকে বিএনপির নেতাকর্মীরাই মাঠে নামে না। এই বিএনপি একটা হতাশার দলে পরিণত হয়েছে। এই জন্য বিএনপি কখন কি বলে এটা বুঝা মুশকিল। এতে আওয়ামী লীগের কিছু যায় আসে না।
দ্য রিপোর্ট : আগামী নির্বাচনে ১৪ দলের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোকে কীভাবে আস্থায় আনবেন?
এ.হ.শামীম : এটা তো আমাদের ব্যাপার না, নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। আমরা বলি, আগামী নির্বাচনে না আসলে বিএনপির অস্তিত্ব থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল বারবার যদি নির্বাচন বয়কট করে, তাহলে দল আর দল থাকে না। ’৭০ এর নির্বাচন আওয়ামী লীগ বয়কট করলে দেশ স্বাধীন হতো না। বঙ্গবন্ধুকে বিছিন্নতাবাদী নেতা বলত অনেকে। কিন্তু দেখেন, ’৭০ এর নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগ একক ম্যান্ডেট পেল, তখন বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা হয়ে গেছেন। ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, বাংলার মানুষের অধিকার চাই’-এটা (বঙ্গবন্ধু) কখন বলতে পেরেছেন, যখন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মানুষ তাকে ভোট দিয়েছে। এর আগে যদি এই ধরনের কথা বলতেন, তখন বলা হতো তিনি উচ্চাভিলাষী কথা বলছেন। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উচিত নির্বাচনমুখী হওয়া। বার বার নির্বাচন বয়কট করলে বিএনপির দেওলিয়াত্ব আরও প্রকটভাবে প্রকাশ পাবে।
দ্য রিপোর্ট : উন্নয়ন তো সরকারের রুটিনওয়ার্ক, তাহলে জনগণ কেন আওয়ামী লীগকে মনে রাখবে?
এ.হ.শামীম : বিএনপিও তো ক্ষমতায় ছিল, হাতিরঝিল তো করে নাই। তারা ক্ষমতায় থাকাকালে ক্রিকেটের উন্নয়ন হয়নি, বছরের ১ তারিখে ৩৮ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেনি। তাদের আমলে সারের দাম স্থিতিশীল থাকেনি, কৃষক গুলি খেয়েছে। বিএনপি রুটিন কাজ করেছে, লুটপাট দুর্নীতি করেছে। একস্ট্রা অর্ডিনারি কাজ করছেন, দেশের জন্য, শেখ হাসিনা। আজকে প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভসহ সকলে ক্ষেত্রেই সফলতা আছে। শেখ হাসিনা কাজ করেছেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাই মনে না রাখার কোনো কারণ নাই।
দ্য রিপোর্ট : দ্য রিপোর্টকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এ.হ.শামীম : আপনাকেও ধন্যবাদ।
দ্য রিপোর্ট
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন