বিএনপির অনাস্থার কোনো কারণ নেই
09 February 2017, Thursday
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিএনপির অনাস্থা প্রকাশের কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন নতুন সিইসি কে এম নুরুল হুদা। তিনি বিশ্বাস করেন দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা আসবে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় ৫ নম্বর সেক্টরে নিজ বাসায় ঢাকাটাইমসের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন নতুন সিইসি। কথায় বেশ গোছানো এই মানুষটি ফ্রেঞ্চকাট সফেদ দাড়িতে বেশ পরিপাটি এবং প্রাণবন্ত। তার চেহারায়ও ফুটে আছে সামনের দিনগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রাণশক্তির ছাপ।
বেলা সাড়ে ১১টায় তার বাসায় পৌঁছেই দেখা গেলো নতুন সিইসি ভীষণ ব্যস্ত। একসঙ্গে বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন তিনি। এই ব্যস্ততা শেষ হতে হতে বেলা দেড়টা। এরপর আবার সাক্ষাৎকার। এবার ঢাকাটাইমসের সঙ্গে।
কথা ছিল ১০টায় সময় দেবেন তিনি। কিন্তু যানজটের কারণে সময় মতো পৌঁছতে না পারা আর এর ফাঁকে অন্যরা সুযোগ পেয়ে যাওয়ায় তার কোনো দায় ছিল না। কিন্তু এই বিলম্বের দায়টা তিনি নিজের কাঁধেই নিলেন।
বললেন, ‘সরি। অনেক সময় বসিয়ে রেখেছি।’
- না স্যার, সমস্যা নেই। ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই আপনাকে যেতে হবে।
নতুন দায়িত্ব পেলেন। কেমন অনূভূতি?
অনূভূতি গ্রেট। তবে এই মুহূর্তে পুরোপুরি ব্যাখ্যা দেয়া যাবে না। কারণ এখনো দায়িত্ব নিইনি। শপথ নিতে হবে। কমিশনের সঙ্গে মিটিং করতে হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে হবে। যোগদানপত্র দিতে হবে। একমাত্র রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা আমরা নেব। তার কোনো ইন্সট্রাকশন থাকলে সেগুলো নেব। এরপর কাজ শুরু হবে। এরপর অনুভূতি প্রকাশ করবো।
এখন তো আপনার জীবন ব্যস্ত হয়ে যাবে...
না সেটি না। আমি তো ২০০৬ সালের পর ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। বাংলাদেশ মিউনিসিপাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে (বিএমডিএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলাম। সরকারি একটা কোম্পানি এটি। বিদেশি সাহায্যপ্রাপ্ত। সেখানে অনেক কাজ করেছি। সারাদেশে ১৮শ থেকে ১৯শ কোটি টাকার কাজ করেছি। এজন্য বিদেশি দাতা সংস্থা- বিশ্বব্যাংক, ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইউনিসেফ, ইউএনডিপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ মেইন্টেইন করতে হয়েছে। অনেক কাজ করেছি। অনেক ব্যস্ত ছিলাম। বসে থাকা হয়নি আমার।
কখনো কী মনে হয়েছে এমন দায়িত্বে পাবেন?
কখনো মনে হয়নি এমন দায়িত্বে আসবে। কখনো ভাবিওনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবো।
আপনি সিইসি মনোনীত হওয়ার আগে কেউ কী আপনাকে এমন দায়িত্বের আভাস দিয়েছিলেন?
না, কেউ এমন আভাস দেয়নি। তবে শেষ দিকে এসে আমার দুই একজন বন্ধুবান্ধব আমাকে বলেছিলেন আমার নাম হয়তো প্রস্তাব আকারে যেতে পারে। এর বেশি কিছু আমি জানতাম না।
আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব আপনার হাতেই। ভোটে সব দলকে পেতে তাদের আস্থা অর্জনের বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন?
এই মুহূর্তে এককভাবে পরিকল্পনা নেয়া যাবে না। কমিশনকে নিয়ে বসতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো জানতে হবে কী কী সমস্যা আছে। সে আলোকে কাজ করতে হবে।
বিএনপি আপনার বিষয়ে প্রশ্ন তুলছে…
এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ মনে করি না। আমি বিশ্বাস করি তারা নির্বাচনে আসবে। আর নির্বাচনে এলেই তাদের অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তারা নির্বাচনে এলে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে আসবে। ভালো পরিবেশ আসবে। আমি আশা করি তারা নির্বাচনে আসবে।
আপনার প্রতি তাদের আস্থা নেই বলছেন নেতারা
আমাদের প্রতি তাদের অনাস্থা হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি বা আমার কমিশন আমাদের সারাজীবনের সবকিছু তারা বিশ্লেষণ করলে কোনো ভুল ত্রুটি পাবে না, যাতে তাদের সংক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ আছে।
আপনার নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই বিএনপি নেতারা বলছেন আপনি ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে গঠিত জনতার মঞ্চে ছিলেন। এটা কতটা সত্য?
প্রশ্নই আসে না। আমি তখন কুমিল্লার ডিসি। আর জনতার মঞ্চ ঢাকা। তাহলে আমি কীভাবে জনতার মঞ্চে যাই।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
দেখুন এই মুহূর্তে কোনো পরিকল্পনা নেয়া যাবে না। এখন পর্যন্ত কমিশনেই বসতে পারিনি। তাহলে পরিকল্পনা নেব কীভাবে? দায়িত্ব নেয়ার পর পরিকল্পনার বিষয় আসবে। ভিশন-মিশন ঠিক করতেই ছয় মাস সময় লাগে। এটা তো বললেই হবে না। সময়সাপেক্ষ বিষয়।
একনজরে সিইসি নূরুল হুদা
জন্ম ১৯৪৮ সালে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়। ১১ ভাই বোন। তার অবস্থান তৃতীয়। বাবা ছিলেন শিক্ষক। এএসসি বগা মাধ্যমিক বিদ্যালয় আর এইচএসসি পটুয়াখালী সরকারি কলেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে। আবাসিক হল ফজলুল হক। ছাত্র সংসদে সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন ১৯৭২-৭৩ সালে।
মুক্তিযুদ্ধ করেছেন নয় নং সেক্টরের। উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে। স্ত্রী হুসনে আরা। এক ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে প্রকৌশলী কানাডা, মেজ মেয়ে বুয়েট থেকে পাস করে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করছেন। ছোট মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছেন কানাডায়। বিসিএসে ১৯৭৩ ব্যাচের (১০% কোটা) যোগদানের পর কুমিল্লা ও ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ছিলেন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয় যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। বিএনপির সময় প্রথমে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) পরে ২০০৬ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় হুদাকে।
পরে অবশ্য বাংলাদেশ মিউনিসিপাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে (বিএমডিএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জেমকন গ্রুপের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ), নর্থ ওয়েস্ট জোন কোম্পানির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন কে এম নুরুল হুদা।
নতুন নির্বাচন কমিশন শপথ নেবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি। অন্য চার কমিশনার হলেন: সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ চৌধুরী।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন