গণজাগরণ মঞ্চ কোনো রাজনৈতিক দল নয়; একটি সংগঠন মাত্র। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রয়ারি এ সংগঠনের যাত্রা শুরু। কতিপয় সচেতন-সংগ্রামী তরুণই গড়ে তোলেন গণমানুষের এ সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত মানুষ দলে দলে অংশ নেয় এ সংগঠনের আন্দোলন-মিছিল ও স্লোগানে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবিতে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় এ সংগঠনটি। শুধু তাই নয়; তনু হত্যার বিচারের দাবি ছাড়াও অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদে রাজপথ কাঁপিয়ে তুলেছে এ সংগঠনের অকুতোভয় কর্মীরা।
দীর্ঘ চার বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে এ সংগঠনের পথচলা। এ সংগঠনের বিভিন্ন দিক নিয়ে সংগঠনটির মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের সঙ্গে কথা বলেন পরিবর্তন ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক জিনাত জান কবীর। এই আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পরিবর্তনের পাঠকদের জন্য।
আপনারা যে গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেছেন এর উদ্দেশ্য কী? আন্দোলন নাকি বিপ্লব?
ইমরান এইচ সরকার : দুটোই বলতে হবে। কারণ এটার একটা ধারাবাহিক বিষয় ছিল যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে, মুক্তিযোদ্ধের একটা আকাঙ্ক্ষা, অসাম্প্রদায়িক একটা বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে। এটাতো আজকের লড়াই না। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেই লড়াইতে পরবর্তীতে একটা স্বাধীনতা আন্দোলন, স্বাধীনতা অর্জন, স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা, বাহাত্তরের সংবিধান, এবং সেই আদলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। সেই আদলে বাংলাদেশ বিনির্মাণ না হওয়ার কারণে ২০১৩ সালে মানুষকে রাস্তায় আসতে হয়েছে, তাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে হয়েছে, তাদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা বলতে হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলতে হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনের লড়াইটা অনেক পুরোনো, এটা একটা লড়াই এবং একটা আন্দোলন। সেই আন্দোলনের আরেকটা প্রতিফলন বা রূপ হচ্ছে শাহবাগের আন্দোলন বা গণজাগরণ মঞ্চ। সেই কারণে এটা একটা আন্দোলন।
আর এ কারণে এটা একটা বিপ্লব যে তরুণ প্রজন্ম যারা সচরাচর রাজপথে থাকে না, যারা সচরাচর আন্দোলন সংগ্রাম করে না, তরুণ প্রজন্ম যাদের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরে, তারা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে। দেশ যখন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চিন্তায় পরিচালিত হচ্ছিল তখন তারা বাংলাদেশকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য একটা বিদ্রোহ করেছে। পুরোনো যে আন্দোলন, পুরোনো যে ব্যবস্থা-সে কারণে কিন্তু বিচার করতে পারে নাই। মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বিনির্মাণ করতে পারে নাই বলে পুরোনো ব্যবস্থার সঙ্গে বিদ্রোহ করে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে। এবং আমরা কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়েই বলেছি, আঁতাতের যে রায় সেই রায় আমরা মানি না। পুরোনো বিচার ব্যবস্থায় জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে একটা সমঝোতা ব্যবস্থা করেছিল, সেইটার সাথে বিদ্রোহ করে তরুণরা রাজপথে নেমে এসেছে। বিদ্রোহ করেছে। পুরোনো যে সমঝোতা তা আমরা মানি না। আমরা ন্যায় বিচার চাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে এবং ন্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।
আপনি বলছেন এর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য আন্দোলন এবং বিপ্লব। তাহলে আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী আর বিপ্লবের আদর্শ কী?
ইমরান এইচ সরকার : ন্যায় বিচারের মাধ্যমে একটা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে সকল মানুষ সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে বাঁচবে। সকল শ্রেণির মানুষের সমান অধিকার থাকবে।
এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা একটা ন্যায়ের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চেয়েছিলাম, এ দেশের মানুষ পুরোনো রাজনীতির নেতৃত্বকে অনাস্থা জানিয়েছে। সুতরাং বিপ্লবের আদর্শটা হলো তরুণ প্রজন্ম একটা সুন্দর বাংলাদেশ নির্মাণ করবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে স্বাধীনতার পর ঝড় ওঠে। তারপর স্তিমিত হয়ে যায়- এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
ইমরান এইচ সরকার : স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর তখনই কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। যারা তৎকালীন শহীদ পরিবারের সদস্য, যারা নির্যাতিত, তারা রাস্তায় মিছিল করেন এবং তারা চান যেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়। সেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এবং সেই বিচার প্রক্রিয়া এক সময় গিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এক সময় বিচারের দাবিটা স্থবির হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এ দাবিতে আন্দোলন করে জনগণের সামনে নিয়ে আসে। আবারও আন্দোলনের সূচনা হয়। সেটা ১৯৯২ সালে। শহীদ জননীর আন্দোলনের পর সেটাও এক সময় স্তিমিত হয়ে যায়। সর্বোপরি আন্দোলন সংগ্রাম হলেও কিছু সময় আন্দোলন গতিশীল ছিল কিছু সময় স্তিমিত ছিল। বিচারের দাবির পর ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলেও বিচারটা জনগণ পাচ্ছিল না। আমরা না পাওয়ার প্রতিফলন দেখি ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার রায়ের মধ্য দিয়ে। কেননা সেই রায়টা পুরোপুরি একটা মীমাংসিত আপসের রায় ছিল। সেই রায়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে সর্বোচ্চ দণ্ড পাওয়ার কথা, সে বিচারের রায়ে তা প্রতিফলন ঘটেনি। সুতরাং সেই রায় আমি মনে করি স্তিমিত জায়গা থেকে তরুণ প্রজন্ম যখন দেখল বিচার কররার যে প্রয়াস সেটা ভুল পথে চলে যাচ্ছে, তখন তরুণ প্রজন্ম সেই বিচারের যে আন্দোলন তার হাল ধরে রাজপথে লক্ষ লক্ষ জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করে জনতার সামনে তুলে ধরে।
অনেকে মনে করেন গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের ফলে বিচার ব্যবস্থায় এর প্রভাব ফেলেছে। এ ব্যাপারে আপনি কী মনে করেন?
ইমরান এইচ সরকার : বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলেনি। তবে ন্যায় বিচারের জন্য যে জনমত দরকার সেটা কিন্তু এ আন্দোলন তৈরি করেছে। দেখিয়েছে যে যুদ্ধাপরাধ বিচারের পক্ষে এ দেশের বেশিরভাগ মানুষ রয়েছে। যুদ্ধাপরাধী যে গোষ্ঠী এবং তাদের দেশি-বিদেশি যে সমর্থক রয়েছেন তারা নানাভাবে অপপ্রচার করছিলেন যে যুদ্ধাপরাধের বিচার বেশির ভাগ জনগণ চায় না। শাহবাগের গণজাগরণের ফলে বিশ্বব্যাপী কোটি জনতা রাজপথে নেমে এলো, তখন আবারও এ দাবিটা প্রতিষ্ঠিত হলো যে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ চায় যে যুদ্ধাপরাধীরা যাতে তাদের উপযুক্ত শাস্তি পায়। সেই কারণে আইন সংস্কার করা সরকারের পক্ষে সহজ হলো। যে আইনে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল-সে আইন দুর্বল ছিল। রাষ্ট্রপক্ষের আপিল করার কোনো সুযোগ ছিল না। ত্রুটিযুক্ত পুরোনো আইন নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। অপরাধীরা আপিল করার সুযোগ পাবে আর যারা ভিকটিম তারা আপিলের সুযোগ পাচ্ছে না। এই ব্যাপারটা আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। সামগ্রিকভাবে গণজাগরণ মানেই হচ্ছে মানুষের জাগরণ। মানুষের জাগরণ প্রমাণ করেছে যে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে ন্যায়ভিত্তিক একটা বাংলাদেশ নির্মাণ করা বাংলাদেশের জনগণের দাবি, বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের দাবি। এ অন্দোলনের ফলে সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পেরেছে।
গণজাগরণ আন্দোলনের পেছনে অনেকের ভূমিকা ছিল। এখন অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
ইমরান এইচ সরকার : গণজাগরণ মানেইতো সবার জাগরণ। সেখানে সবার ভূমিকা আছে। ছিল বলে কথা নেই। সেই ভূমিকা দেখানোর জন্য প্রতিদিন রাস্তায় বের হওয়া কি সম্ভব? বাংলাদেশের মানুষে যে, ইতিহাস বিনির্মাণ করেছে, সেটা সারা দুনিয়াতে নেই। ১৭ দিন টানা একটা দাবিতে রাজপথে থাকা কোনো আন্দোলনের ইতিহাসের নেই। ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাস হচ্ছে ১০ দিনের। সেটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিপ্লব। সেটা টানা ১০ দিন ছিল তারপর কিন্তু তারা আর থাকতে পারেনি। ১৭ দিন রাজপথে থেকে মানুষ প্রমাণ করেছে, দেশে কোন ধরনের অন্যায়-অবিচার হচ্ছে, তখন মানুষকে ডাক দেওয়া হচ্ছে-তখন কিন্তু মানুষ আবার রাজপথে চলে আসছে। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী যখন সারাদেশে তৈরি হয়েছিল ভয়ানকভাবে তখন লাখো জনতা আবার রাজপথে এসেছে, তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করে, তার বিচারের দাবিতে আবারও যখন রাজপথে এলাম তখনও কিন্তু লাখো জনতা রাজপথে নেমে এসেছে। যখন সংকট তৈরি হচ্ছে তখনই জনগণ রাজপথে এসেছে। এবং তারা প্রমাণ করেছে তাদের ন্যায্য দাবিতে তারা কখনো আপস করে না। আমি মনে করি সেটা স্তিমিত হয়নি, মানুষ ঘরে ফিরে গেছে। কারণ তাদের দাবি অনেকাংশে পূরণ হয়েছে, যেগুলো পূরণ হয়নি সেগুলো নিয়ে কোনোভাবে সংকট তৈরি হলে কোনো অন্যায় আপস করলে প্রয়োজনে জনগণ আবারও রাস্তায় নেমে আসবে। তারা সেটা প্রমাণ করেছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যে আন্দোলন করেছেন তা কি সফলতা অর্জন করেছে বলে মনে করেন?
ইমরান এইচ সরকার : এটাতো শুধু দাবির বিষয় না, এটা মানুষের ভেতরে জাগরণ, ভেতরের পরিবর্তন সেটা আমরা বুঝতে পারি, অন্যায় অবিচার হলে বাংলাদেশের তরুণরা যারা কোনো দিন মিছিল করেনি, তারাও রাজপথে নেমে আসে। যখন ব্যাংক থেকে ৮০০ কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেল তখন তরুণরা রাস্তায় নেমে এসে প্রতিবাদ করল, তনুকে যখন ধর্ষণ করে হত্যা করল, স্কুলছাত্রী রিশাকে যখন হত্যা করা হলো, যখন শিশু রাজনকে হত্যা করা হয়, তখন তরুণরা রাস্তায় এসে রাস্তা কাঁপিয়ে দিচ্ছে। কোনো রাজনীতিবিদ কিংবা কোনো সংগঠনের দরকার পড়ে না, জনগণ নেমে আসে। গণজাগরণ মঞ্চের অর্জন হচ্ছে এ জায়গাটা। বাংলাদেশের তরুণরা প্রতিবাদ করতে শিখেছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে শিখেছে। এ অর্জনটা খাতা-কলমে কিংবা মাপকাঠিতে মাপা সম্ভব না। কিন্তু আমরা যদি খাতা-কলমে যাই ৬ দফা দাবি সেটা কতটুকু পূরণ করা সম্ভব হয়েছে, সেটা কিন্তু অনেকখানি সম্ভব হয়েছে। আমরা জানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত হচ্ছে, রায় কার্যকর হচ্ছে, জামায়াত নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া চলছে, তাদের আর্থিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ চলছে। আইন সংশোধনের যে দাবি ছিল সেসব কিন্তু পুরোপুরি পূরণ হয়ে গেছে। ৬ দফা দাবি অনেকখানি পূরণ হয়েছে। আবার আমাদের হতাশাও রয়েছে। একদিকে যেমন আমরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করছি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করছি আরেক দিকে আমরা দেখছি দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক তাণ্ডব, সারাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সাম্প্রদায়িকরণ। এটা কিন্তু আমাদের জন্য অপ্রাপ্তি। আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চেয়েছি, সেই বাংলাদেশ এখন সাম্প্রদায়িক হচ্ছে। তার মানে এটা আমাদের বিরাট বড় ব্যর্থতা। ২০১৩ সালের পর বাংলাদেশতো এমন হওয়ার কথা ছিল না। যেমন বাংলাদেশের হিন্দুদের এ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু তাদের প্রতিদিন যেতে হচ্ছে; সুতরাং এটা আমাদের একটা ব্যর্থতা ও হতাশা। কিন্তু আমরা অনেকখানি অর্জন করেছি। আমরা মনে করি আন্দোলনকে গতিশীল করতে পারলে নতুন করে আন্দোলনকে ঢেলে সাজাতে পারলে সেটাও হয়তো অর্জন করা সম্ভব।
সিলেবাসের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানের শিক্ষামন্ত্রী আপনার শ্বশুর। এ কারণে অনেকেই মনে করেন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আপনাকে আন্দোলন-সংগ্রামে আর দেখা যাচ্ছে না এবং ভবিষ্যতেও দেখা যাবে না-এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন।
ইমরান এইচ সরকার : সম্পর্কটা এখানে বড় ব্যাপার না, ব্যাপারটা হচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চ কখনো আন্দোলনে কারো সঙ্গে আপস করে না। গণজাগরণ মঞ্চ তার যে স্পিড সেই স্পিড নিয়ে সে কাজ করে যাচ্ছে। গণজাগরণ মঞ্চ মানে শুধুই একজন ইমরান এইচ সরকার না, আমার মতো হাজারো মানুষ আছে, লাখো মানুষ আছে, এখানে গণজারণ মঞ্চের আমিও একজন কর্মী। গণজাগরণ মঞ্চের সামগ্রিক বিষয়ে একটা ভাটা পড়েছে। মূলত শেষ তিন মাস যাবৎ আমাদের আন্দোলনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তারপরও আমাদের সাধারণ সভা হয়েছিল। সাধারণ সভা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, পুরনো আন্দোলনকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাবো। এখানকার নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সামগ্রিক দাবি-দাওয়া এবং সামগ্রিক ভাবে ৬ দফা দাবি গণজাগরণ মঞ্চের ২০১৩ সালের। তার বাইরে ১৪ সাল থেকে অন্যান্য দাবি যেমন সমাজের অন্যায়–অনাচারের বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়িয়েছি। এগুলোকেও আমাদের দাবির মধ্যে সংযুক্ত করতে চাই। নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর কারণে আমরা একটু সময় নিচ্ছিলাম। ৫ তারিখে আমাদের গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। সেখান থেকেই আমরা নতুন কর্মসূচি, নতুনভাবে ঘোষণা করব। সেখান থেকেই আন্দোলন গতিশীল হবে। কোনোভাবেই গণজাগরণ মঞ্চের চেতনার বিরুদ্ধে সরকার কিংবা অন্য কারো সিদ্ধান্ত নেয়, গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে যায় সেটাকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে গণজাগরণ মঞ্চ আপসহীন। যেভাবে আগেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে সরকারের পৃষ্ঠপোষক রয়েছে বলে অনেকে দাবি করেন এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
ইমরান এইচ সরকার : গণজাগরণ মঞ্চ সরকারের পক্ষে কাজ করে এটা সাধারণ জনগণ কোনোদিন মনে করেনি। কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী বিশেষ করে ইসলামী ছাত্রশিবির-জামায়াত ৫ ফেব্রয়ারি ২০১৩ সাল থেকেই মনে করে আসছে। যদিও গণজাগরণ মঞ্চ ৪ বছরে সরকারের কাছে সবচেয়ে নিপীড়িত গোষ্ঠী। ২০১৩ সালের পর এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আমরা বাধাপ্রাপ্ত হইনি। ২০১৩ সালে লাখো জনতা ছিল তখন সরকারের পক্ষে বাধা দেওয়া সম্ভব ছিল না। কৌশলগত কারণে সরকার বাধা দেয়নি। গণজাগরণ মঞ্চের কারণে না। কিন্তু যখন আমরা চট্টগ্রাম যেতে চেয়েছি, তখন থেকেই সরকার আমাদের বাধা দিয়েছে। সরকার এমন কোনো প্রক্রিয়ায় নেই যে বাধা দেয়নি। নানাভাবে কর্মীদের হয়রানি করা, মামলা দেওয়া, টিয়ারশেল ছুড়ে দেওয়া, গরমপানি নিক্ষেপ করা, কর্মীদের টর্চার করা, কোনোটাই সরকার বাদ দেয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়ায় ব্যক্তি আক্রোশ থেকে এ ধরনের অপপ্রচার শুরু থেকে চালাচ্ছে। আমি মনে করি ১৬ সালেও তনু হত্যার আন্দোলন করলাম তখন সরকার আমাদের গৃহবন্দী করেছে। কেননা আর কোনো সংগঠন রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে প্রতিবাদ করেনি। অনেক রাজনৈতিক দল আছে যাদের গরম পানি নিক্ষেপ করলে সারা জীবনেও রাস্তায় বের হবে না। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চ সেটা করেনি। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা যখন গুলশান হাই-কমিশনার অফিস ঘেরাও করতে গেছে তার আগের দিন পুলিশ বেধড়ক পিটিয়েছে। এর পরদিন আবারও গেছে। পুলিশ আবারও পিটিয়েছে। কর্মীদের তো আগের দিনের পিটুনি খেয়ে ঘরে থাকার কথা ছিল। কারণ তারাতো জানে পরদিন গেলে পুলিশ মারবে। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা তারপরও আন্দোলনে নেমেছে। সরকার যতবারই থামানোর চেষ্টা করেছে গণজাগরণ মঞ্চ তত আপসহীনভাবে আন্দোলন চালিয়েছে। তারা আরো রাস্তায় স্বোচ্চার হয়েছে। হামলা-মামলা উপেক্ষা করে তারা আন্দোলন করেছে। গণজাগরণ মঞ্চ গণমানুষের শক্তি। গণজাগরণ মঞ্চের সবাই কর্মী। তাদের একজন মুখপাত্র আছে। যে সবার কথা বলেন। সেও কিন্তু নেতা না। গণজাগরণ মঞ্চ একটা সংগঠন না হয়েও ৪ বছর ধরে মানুষকে নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন করছে। আমরা ৫০ জনও যখন মিছিল করেছি তখনো কিন্তু আমরা রাস্তা থেকে চলে যাইনি। রোদ-বৃষ্টি ঝড় উপেক্ষা করেই কিন্তু রাস্তায় চলেছি। গণজাগরণ মঞ্চ সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেই রাজপথে থাকবে।
তনু হত্যার বিচারে গণজাগরণ মঞ্চ সোচ্চার নয় বলে সাধারণ জনগণ মনে করে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
ইমরান এইচ সরকার : তনু হত্যার বিচারে গণজাগরণ মঞ্চের চেয়ে কে বেশি সোচ্চার হয়েছে? মাসের পর মাস প্রতিবাদ করেছি। তনু হত্যার পর যখন রিশাকে হত্যা করা হলো তখন আমরা প্রতিবাদ করেছি। নারী নিপীড়ন নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত প্রটেস্ট করেছি। তনু একটা সিমবোলিক নাম। যখন আমি রিশাকে নিয়ে প্রতিবাদ করছি তখন কি আমি তনুকে ভুলে গেছি। তনুর কথা আমি রিশার প্রতিবাদে বলছি না। ব্যাপারটা সামগ্রিক একটা প্রতিবাদ। যখন যাকে নিপীড়ন করা হচ্ছে, আক্রমণ করা হচ্ছে, যৌন নিপীড়ন হলে, শিক্ষার্থী হত্যার শিকার হলে আমরা সেটার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছি। যেখানে কেউ আন্দোলন করেছে না, সেখানে গণজাগরণ মঞ্চ আন্দোলন-প্রতিবাদ করছে। কেউ অন্যায়ের শিকার হলে গণজাগরণ মঞ্চ তার পাশে দাঁড়াচ্ছে। গণজাগরণ মঞ্চের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো কথা বলছে না, সে কারণে সাধারণ মানুষ গণজাগরণ মঞ্চের কাছে প্রত্যাশা করে। এ প্রত্যাশাকে আমরা অসম্মান করি না। আমরাও চাই মানুষ আমাদের কাছে প্রত্যাশা করুক। আমরা মানুষের পক্ষে কথা বলতে চাই। সীমাবদ্ধটাও মানুষকে বুঝতে হবে। একটা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের পক্ষে চাইলেও সব কিছু একসাথে পরিবর্তন করা সম্ভব না। পরিবর্তনটা ধীরে ধীরে হবে। সব জায়গায় গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে প্রটেস্ট করা হয়নি। আমরা বলেছি, যে যে জায়গায় আছেন সেখান থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আমরা কর্মসূচি দিয়েছি সারা দেশব্যাপী। আমরা তার জায়গা থেকে কাজ করতে বলেছি। সারাদেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সকলে দাঁড়িযেছে।
বিচার না হওয়ার পেছনে কী কারণ রয়েছে বলে মনে করেন?
ইমরান এইচ সরকার : আমাদের যারা শাসক, যারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত, তারা জনগণের যে দাবি, জনগণের যে চাওয়া এসব ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। রাজনৈতিক দলগুলো এগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না- সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে জনগণের কাছাকাছি যাওয়া যায় সেটা রাজনৈতিক দলগুলো মনে করেন না। শুধু সাধারণ জনগণের পক্ষে দাবি আদায় করা কঠিন। রাজনৈতিক দলগুলো যে চাপ তৈরি করতে পারেন সাধারণ জনগণের পক্ষে সেটা সম্ভব না। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তিগত বিষয়ের বাইরে বের হচ্ছে না। ক্ষমতায় থাকার জন্য এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যও তারা জনগণকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। সিভিল সোসাইটিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলো। সাধারণ জনগণকে একত্রিত হয়ে সোচ্চার হয়ে উঠতে হবে। তাহলে সকল অধিকার আদায় করা সম্ভব।
কথা উঠেছিল আপনার দাদা শান্তি কমিটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন- এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
ইমরান এইচ সরকার : আমার দাদা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। আমার দাদা যে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেটা ১৬ কিংবা ১৭ সালে সার্টিফিকেট নেওয়া না। ৭২ সালে জাতির জনক দেশে ফিরে যেসব শহীদ পরিবারকে লিখিত স্বীকৃতি দেন আমরা হলাম লিখিত শহীদ পরিবারের মধ্যে অন্যতম। প্রথম পর্যায়ে শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি দেওয়া পরিবার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছি তখন ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করতে চেয়েছে কেউ কেউ। তখন তারা ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে না পেরে পারিবারিকভাবে আক্রমণ করেছে। এক ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে।
অনেকেই মনে করেন গণজাগরণ মঞ্চ মিডিয়ার কল্যাণে ব্যাপকতা পেয়েছে, এ ব্যাপারে কী বলবেন?
ইমরান এইচ সরকার : ২০১৩ সালে যখন আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি তখন কিন্তু কোনো গণমাধ্যম ছিল না। যখন আমরা রাস্তা ব্লক করেছি তখনও কোনো গণমাধ্যম ছিল না। যখন রাস্তা ব্লক করে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে তখনই বিভিন্ন মিডিয়া গণজাগরণ মঞ্চের সামনে এসেছে। সুতরাং এটাও একটা অপপ্রচার। এ অপপ্রচারটা মৌলবাদীরা করে। ৫ কিংবা ৬ তারিখে তো লাইভ ব্রডকাস্ট করেনি। গণমাধ্যমের যে কর্মীরা তাদের নিজেদের দায়বদ্ধতার যে জায়গা সমাজের কাছে, সে কারণে দায়িত্বের বাইরেও অনেক গণমাধ্যম কর্মীও গণজাগরণ মঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছেন, স্লোগান দিয়েছেন, চেতনাকে ধারণ করেছেন। গণমাধ্যম সুনির্দিষ্টভাবে আলাদা করে কোনো ভূমিকা রেখেছে সেটা আমি বলব না।
আজকের ইমরান এইচ সরকার আর ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির আগের ইমরান এইচ সরকারের মধ্যে তফাৎ কতটুকু?
ইমরান এইচ সরকার : ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রয়ারির আগে ইমরান এইচ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ধারণ করতো কিন্তু সেটা সব মানুষ জানতো না। সাধারণ পেশাজীবী মানুষ ছিলাম। ঢাকা মেডিকেলে ডিউটি করতাম, আড্ডা দিতাম, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতাম। এখন যেমন সারাদেশের মানুষ চিনেছে, জেনেছে আবার আরেকদিকে দায়বদ্ধতাও অনেক বেড়েছে। আমি এখন আর সাধারণ জীবন-যাপন করতে পারি না। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। চেম্বার করবো, ডিউটি করবো সেটা পারছি না। এখন অনেক চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করতে হয়। স্বাভাবিক চলাফেরায়ও অনেক নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারছি না। আবার কথা বলার ক্ষেত্রেও অনেক চিন্তা ভাবনা করে বলতে হয়। একদিকে যেমন স্বাধীনতা হরণ হয়েছে আরেকদিকে দেশের মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। একজন চিকিৎসক হিসেবে অনেক কিছু করতে পারতাম কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের একজন কর্মী হিসেবে আমি অনেক গর্ববোধ করি। এগুলো যেমন সুখের কথা তেমনি আমার অনেক সহযোদ্ধাকে কিন্তু চোখের সামনে হারিয়েছি। যাদের সঙ্গে আমি স্লোগান দিয়েছি, তাদের লাশ বহন করতে হয়েছে। একে একে ২০ জনের লাশ বহন করাও সহজসাধ্য নয়।
নাদিয়া নন্দিতা ইসলামের সঙ্গে আপনার কীভাবে পরিচয় এবং পরিচয় থেকে কীভাবে পরিণয় ঘটে সে সম্পর্কে জানতে চাই।
ইমরান এইচ সরকার : গণজাগরণ মঞ্চের আগেই নাদিয়া নন্দিতার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। ঘনিষ্ট হয়েছে অনেক পরে। আমরা এক সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চে কাজ করেছি। কাজ করতে করতে আমাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এভাবেই সুসম্পর্ক তৈরি হলো। আমরা একে-অপরকে পছন্দ করতাম এবং করি। আমাদের মধ্যে এক ধরনের বোঝাপড়া ছিল। কিন্তু বিয়েটা পারিবারিকভাবে হয়েছে।
আপনাদের ব্যক্তিগত জীবনের কথা জানতে সাধারণ মানুষের অনেক কৌতূহল থাকে। সেই কৌতূহলের জায়গা গণমাধ্যম পূরণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু গণমাধ্যমকে এড়িয়ে কেন বিয়ে করলেন, সে ব্যপারে জানতে চাই?
ইমরান এইচ সরকার : আমরা এখনো অনুষ্ঠান করিনি। যখন অনুষ্ঠান করব তখন পরিকল্পনা ছিল সবাইকে আমরা জানাব। আমার সহযোদ্ধা, বন্ধু সবাইকে নিয়ে আমরা কাজ করি, সকলের প্রত্যাশা আছে বিয়ে করলে নিশ্চয়ই আমরা সবাইকে জানাব। তারপরও তো জেনেছে সবাই।
গণজাগরণ মঞ্চে যখন কাজ শুরু করেন তখন আপনি অবিবাহিত ছিলেন কিন্তু আপনি এখন বিবাহিত। এ পরিবর্তনের ফলে কী কাজের গতির পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন?
ইমরান এইচ সরকার : বিয়ের বাইরে আমরা কিন্তু সহযোদ্ধা। একই চেতনায় বিশ্বাস করি। দীর্ঘদিন যাবৎ একসঙ্গে আন্দোলন করি। পরিচয়টাও সেই সূত্র ধরেই। আমি মনে করি কাজের কোনো ভাটা পড়বে না। বরং সহযোগিতাই পাব। আগেতো সার্বক্ষণিক পাওয়া যেত না। সহযোদ্ধাকে এখন সারাক্ষণ পাওয়া যাবে। কাজের ক্ষেত্রে পরামর্শ পাচ্ছি, সেক্ষেত্রে আন্দোলনকে গতিশীল করার জন্য সুবিধা হবে।
৫ ফেব্রুয়ারি আপনার নতুন একটা আউটলাইন দেবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ আউটলাইন কী তা জনগণ জানতে চায়?
ইমরান এইচ সরকার : বেলা ২টা থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। সেখানে আলোচনার সভার মধ্যে সামগ্রিক সমস্যা তুলে আনা হবে। এ আন্দোলনকে গতিশীল করার জন্য আলোচনা এবং আলোচনা থেকে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। এবং গণমানুষের দাবিকে গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে কাজ করব।
পরিবর্তন ডটকমকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ইমরান এইচ সরকার : আপনাকেও ধন্যবাদ।
পরিবর্তন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন