সংবাদ পরিবেশনার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বিশ্বের গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া এসোসিয়েশন, ইনমা। ইনমার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, আর্ল জে. উইলকিনসন সম্প্রতি ঢাকায় আসলে সংবাদপত্রশিল্পসহ গণমাধ্যমের নানা চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কামাল আহমেদ
প্রথম আলো: প্রথমেই আমি যে বিষয়টা নিয়ে শুরু করতে চাই, তা হলো, আপনি ‘সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ’ নিয়ে কাজ করছেন। পৃথিবী বদলাচ্ছে, এবং এই পরিবর্তন খুব দ্রুত হচ্ছে। প্রযুক্তি ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের বিচারে সাংবাদিকতায় কী রকম পরিবর্তন হচ্ছে?
আর্ল জে. উইলকিনসন: আমি মনে করি, সাংবাদিকতা বিভিন্ন প্লাটফর্মের সঙ্গে, প্রযুক্তির ব্যাপ্তির সঙ্গে সমন্বয় করছে। আপনি জানেন, একটা সময় ছিল, যখন আপনি সাধারণ বর্ণনামূলক লেখা ইত্যাদি লিখতে পারতেন, কিন্তু এখন সেই লেখা টুইটারে ১৪০ বর্ণে, আই-প্যাডে আর কার্যকর নয়। এ ধরনের বহু প্লাটফর্মে সাদামাটা বর্ণনামূলক লেখা আর কাজ করছে না। কাজেই সাংবাদিকতায় শুধুমাত্র সংবাদ লেখার চেয়ে, ভিডিওচিত্র এবং ধারণকৃত শব্দের মাধ্যমে কীভাবে আমরা গল্পটা বলতে পারি, তা নিয়ে আমি ভাবছি। সাংবাদিকতায় এই পরিবর্তনটাই ঘটছে।
প্রথম আলো: আপনি আমাদেরকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, যেখানে ১৪০ এরও কম বর্ণে সংবাদ পরিবেশিত হবে, যা মূলত ব্রেকিং নিউজ, মূল গল্পের গভীরে যা প্রবেশ করবে না। এটাই কি সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ?
আর্ল জে. উইলকিনসন: না, আমি বলতে চাইছি, ওই বিষয়গুলো কেবল ইঙ্গিত বলেই আমি মনে করি। আপনি জানেন, এগুলো সাংবাদিকতায় এক বিশাল সংযোজক; কাজেই এই বিষয়গুলোয় ভয় পাওয়ার কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। এই বিষয়গুলো আমাদের গ্রহণ করা উচিত বলেই আমি মনে করি। দেখুন, দিনের শেষে আমাদের সংবাদ প্রতিষ্ঠান হিসাবেই থাকা উচিত, পাঠক যেখানে যাবেন আমাদেরও সেখানেই যাওয়া উচিত- এবং তাঁরা যদি টুইটারে গিয়ে ভিড় করেন, সেখানেই আমাদের থাকা উচিত, তাঁরা যদি ফেসবুকে গিয়ে জমেন, আমাদেরও সেখানে যাওয়া উচিত। আমরা হঠাৎ করেই বুঝতে পারছি, এই বিষয়গুলো কিঞ্চিত নেতিবাচক হয়ে উঠছে। কিন্তু দেখুন, সাংবাদিকতায় আরও জনবল প্রাপ্তি এবং মানুষকে এর সঙ্গে আরও গভীর থেকে গভীরে সংযুক্ত করতে প্রযুক্তি যতটা ইতিবাচক তাতে হয়তো কিছুটা সামঞ্জস্যের সংকট আছে । কাজেই আমি মানুষকে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কল্যাণে সৃষ্ট সুযোগের জন্য কৃতজ্ঞ এবং এর পেছনে ব্যয়ের পথ খুঁজতে চাই আমি।
প্রথম আলো: আপনি কি আসলে সংবাদ থেকে অর্থ উপার্জনের কথা বলছেন?
আর্ল জে. উইলকিনসন: হ্যাঁ।
প্রথম আলো: এটা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
আর্ল জে. উইলকিনসন: এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি প্রচলিত কথা রয়েছে। কেউ যা পড়বে না, তা না লেখাই ভালো; যে রচনার জন্য আপনি অর্থ পাবেন না, তা না লেখাই ভালো। দিনের শেষে আমি ভাবতে ভালোবাসি, পৃথিবীটা অর্থ ছাড়াই পরিচালিত হয়; কিন্তু দেখুন, সংবাদশিল্পে মুদ্রণের পেছনেই সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়। এ ব্যাপারে চিন্তা করে আমাদের একটি সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। মুদ্রণেই সীমাবদ্ধ থাকলে আমরা কীভাবে বিজ্ঞাপন কিংবা গ্রাহকের কাছ থেকে সরাসরি আয়ের পথ খুঁজে করব... গুণগত মান বাড়াতে আমরা অর্থায়ন করব কীভাবে, যা অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ? এখনই এর অনেক অনেক উদাহরণ মিলবে। পয়সা দিয়ে ওয়েবসাইটে ঢোকার সুযোগ(পেওয়াল), ক্লোজ গার্ডেন বা সমৃদ্ধ আধেয়সম্ভারে দেওয়াল সৃষ্টির বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবস্থা, একটি উদাহরণ। দুই বছর আগে, আমেরিকার সাবেক অলিম্পিয়ান ব্রুস জেনার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করলেন এবং নিজের নাম বদলে রাখলেন কেইটলিন জেনার। ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিন, যা খুব বেশি পরিচিত না, নিজেদের ডাটাবেইস থেকে গ্রাহকদের একটি ইমেইল বার্তা পাঠাল এবং এই সংবাদটি আগাম প্রাপ্তির জন্য তারা অর্থ চাইলো। সংবাদটি আগাম পড়ার জন্য হাজার হাজার অধিগমন বিক্রি করেছে তারা। আমি অবশ্য এ রকম উদাহরণ খুব বেশি শুনিনি। কাজেই আমার ধারণা, এ রকম না হলেও ভিন্ন ধরনের আরও অনেক মডেল আসছে। আমি ব্লেনটাল, পেইড প্রিভিউ, কানাডা ফ্রি প্রেসের আই-প্যাড অ্যাপের কথা বলতে পারি। পেওয়ালগুলো এখন বিশ্বজুড়েই ব্যবহার হচ্ছে। হ্যাঁ, এটা মন্দ, এবং হ্যাঁ, আমরা নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আসছি। আমি শুধু আশা করছি, তারা আরও দ্রুত আসুক।
প্রথম আলো: স্থানীয় সংস্করণ—একটা সময় ছিল যখন সংবাদপত্রগুলোর কয়েকটি সংস্করণ, আঞ্চলিক সংস্করণ হতো, কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে এসব সংস্করণ এখন মৃতপ্রায়। কিন্তু, বিশ্বে আমাদের এই অঞ্চলে দেখতে গেলে - সীমান্তের অপরপারে ভারতে বড় কয়েকটি সংবাদপত্রের অনেকগুলো সংস্করণ, আঞ্চলিক সংস্করণ হয়, এবং তারা ভালোও করছে। নতুন পরিবেশে মুদ্রণ সংবাদশিল্পে এই সংস্করণের চর্চ্চা টিকতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?
আর্ল জে. উইলকিনসন: এটা একটা জটিল প্রশ্ন, গত কয়েকদিনের মধ্যে এ ধরনের প্রশ্ন আমাকে শুনতে হয়নি। আমি আপনাকে কিছু ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতার কথা বলব, যার কারণে এ বিষয়টি ভিন্ন হতে চলেছে। আমার নিজের শহর, টেক্সাসের ডালাসে ডালাস মর্নিং নিউজ স্থানীয় সংবাদপত্র। মানুষ শহর থেকে উপশহর ও গ্রামাঞ্চলের দিকে ধাবিত হচ্ছে। মানুষ ডালাস শহর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে ডালাস মর্নিং নিউজ গত দশ বছরে একটা মজার গবেষণা করেছে। প্লানো, ফ্রিসকো এবং আর্লিংটনের মতো শহরতলীর মানুষদের কাছে তারা একটা খুব সাধারণ প্রশ্ন করেছে- আপনি কোন শহরে থাকেন? প্রত্যেকেই উত্তর দিয়েছে ডালাসে। কাজেই একদিকে আপনাকে এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যেখানে মূল শহরের সঙ্গে সংযোগজনিত পরিচিতির ব্যাপারে মানুষ অসচেতন হয়ে পড়ছে। আমার ধারণা, আঞ্চলিক সংস্করণগুলোর দিন ফুরিয়ে এসেছে, কারণ কিছু বিষয় আবারও শহরকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। ভারতে এই চিত্র আবার ভিন্ন। বিশেষ করে হিন্দিভাষী এলাকাগুলোয়, কারণ ডিজিটাল যুগ এবং ইন্টারনেটের বহু আগে দৈনিক জাগরণ এবং দৈনিক ভাস্করের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর শত শত সংস্করণ বের হতে শুরু করে। প্রতিটা সংস্করণে আবার ভাষার ভিন্নতাও থাকত। ডালাসে, প্লানোর অধিবাসীরা যে ভাষায় কথা বলেন, ডালাস শহরের মানুষেরাও একই ভাষায় কথা বলেন। কাজেই টেক্সাসে ওই সংস্করণগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। ভারতের শহরগুলোয় ভাষার আঞ্চলিক ভিন্নতার কারণেই এই সংস্করণগুলো এখনো গুরুত্বপূর্ণ। শত শত ভাষায় শত শত সংস্করণের কথা আপনি কি ভাবতে পারেন? কী আশ্চর্যকর?
প্রথম আলো: তাহলে আঞ্চলিক সংস্করণ, স্থানীয় সংস্করণগুলোর ব্যাপারে এখনো আশা আছে?
আর্ল জে. উইলকিনসন: আমার তাই ধারণা। কিন্তু আবারও বলছি, প্রতিটা প্রতিষ্ঠানই আলাদা। কাজেই এ বিষয়ে সার্বজনীন কোনো উত্তর নেই।
প্রথম আলো: একবিংশ শতকের প্রজন্ম। অধিকাংশ ব্যবসার ক্ষেত্রেই এই প্রজন্ম এখন কাঙ্খিত লক্ষ্য।
আর্ল জে. উইলকিনসন: হ্যাঁ, নিশ্চিতভাবে।
প্রথম আলো: এবং সংবাদপত্রের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য।
আর্ল জে. উইলকিনসন: হ্যাঁ, তাঁরা প্রকাশক।
প্রথম আলো: হ্যাঁ, তাঁরা প্রকাশক। নিজেদের মতামত তাঁরা সারাক্ষণই প্রকাশ করছেন, সম্ভবত প্রতিটা মুহূর্তে। কাজেই সংবাদপত্র কীভাবে ওই ব্যক্তি, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মতামতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে?
আর্ল জে. উইলকিনসন: আপনি জানেন, আমি একটা প্রশ্ন পেয়েছি। আজ কেউ একজন প্রশ্ন করেছেন, আমরা কীভাবে একবিংশ শতকের প্রজন্মের সঙ্গে সংবাদপত্রের সংযোগ ঘটাতে পারি? আমি তাঁকে জবাবে বললাম, আপনি ভুল প্রশ্ন করেছেন। একবিংশ শতকের কারো সঙ্গে মুদ্রিত সংবাদপত্রের সঙ্গে সংযোগ ঘটানো জরুরি না। তারা ছাপানো পত্রিকা নিলে ভালো। কিন্তু, ডিজিটাল জগতটাই ব্র্যান্ডের জন্য শ্রেয়। দীর্ঘমেয়াদে আমার মনে হয়, আমি চাই আপনি আমার ব্র্যান্ডকে ভালোবাসুন। আমি চাই, আপনি যেভাবে মানুষকে ভালোবাসায় মগ্ন করেন, ব্র্যান্ডেও সেভাবেই মগ্ন হন। এই জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে আপনাকে আরও অগ্রসর হতে হবে। আপনাকে ‘ভাষার প্রতিযোগিতা’ করতে হবে। আপনাকে সঙ্গীতায়োজন করতে হবে, আপনাকে এমন একটি পথ খুঁজে পেতে হবে, যার কারণে তারা আপনার ব্র্যান্ডের সঙ্গে মানসিকভাবে সংযুক্ত হবে।
প্রথম আলো: এটা আসলে ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভর করে। ব্র্যান্ডকেই সংযুক্ত হতে হবে?
আর্ল জে. উইলকিনসন: হ্যাঁ। পুরোপুরি। এবং আমি মনে করি, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি দশ বছর সংবাদপত্র হিসেবে থাকি, তাদেরকে সংবাদপত্রের সঙ্গেই সংযুক্ত হতে হবে, আপনি যদি মোবাইলের ব্র্যান্ড হন তাহলে তারা আপনার সঙ্গেই যাবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্র্যান্ড কোম্পানির ডিএনএ যা, তার সঙ্গেই গ্রাহককে যুক্ত করতে হবে। আমার ক্ষেত্রে সত্যটা খুব সহজ, আমি মনে করি, সবারই সত্যের পক্ষে দাঁড়ান উচিত। আমি মনে করি, আমাদের জানতে হবে, আপনি নগরের বাসিন্দা, না কৃষি-সংস্কৃতির, না গ্রামাঞ্চলের, আপনি কি মধ্য-বামপন্থী, নাকি মধ্য-ডানপন্থী? নিজের ব্র্যান্ডের ব্যাপারে সত্য বলতে হবে, তাহলেই আপনার ব্র্যান্ডের মতাদর্শের সঙ্গে একবিংশ শতকের প্রজন্মের সংযোগ ঘটাতে পারবেন।
প্রথম আলো: যখন টেলিভিশন আসল বা রেডিওর রাজত্ব চলছে, তখন সংবাদপত্র নিজের সীমার বাইরে যায়নি। কিন্তু যখন ডিজিটাল হতে শুরু করল সংবাদপত্রগুলো তখন ভিডিও কন্টেন্ট প্রকাশ করে টেলিভিশনের স্থান দখলের প্রচেষ্টা শুরু করল। এই বিষয়টি টেলিভিশন মাধ্যমে কী প্রভাব ফেলতে চলেছে?
আর্ল জে. উইলকিনসন: আমার ধারণা, টেলিভিশন সবসময়ই টিকে থাকবে। এ ক্ষেত্রে যা হচ্ছে, তা হলো, আমরা যেহেতু তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করছি, ভিডিও ধারণের এবং প্রকাশের হাতিয়ারগুলো ভালো থেকে আরও ভালো এবং সস্তা থেকে আরও সস্তা হচ্ছে, যেমনটা একবিংশ শতকের প্রজন্ম ও তাদের স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে হচ্ছে। তারাই এখন প্রকাশক। আর এরপরই আমরা বুঝতে পারছি যে, সংবাদপত্রও ভিডিওধারক এবং হঠাৎ করে টেলিভিশন চ্যানেল হয়ে উঠেছে!
প্রথম আলো: এমনকি প্রত্যেক নাগরিই ভিডিওধারক।
আর্ল জে. উইলকিনসন: হ্যাঁ। আপনি হয়তো একটা ধারণায় উপনীত হতে পারেন যে, আমার চিন্তার পরিসর ততটা বড় নয়, কিন্তু আমি দেখতে পারছি, দুটো হিমবাহ পরস্পরের সঙ্গে ধীরে ধীরে মুখোমুখি হচ্ছে। আপনার টেলিভিশন আছে, যা একমুখী; কিন্তু এখন অনলাইন ভিডিও তৈরি হচ্ছে, প্রতিটা সংবাদ প্রতিষ্ঠানই সংবাদের পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করছে। আপনি জানেন, কানাডার ফেয়ারফ্যাক্স মিডিয়ার ১৫টা চ্যানেল রয়েছে। সবগুলোই অনলাইন এবং সেগুলো ভালোও করছে। টেলিভিশন ভালো, কিন্তু তারা আরও ভালো করতে পারছে না। কিছু ক্ষেত্রে তো আমার এই স্মার্টফোন দিয়ে সিএনএনের মতো উচ্চমানের ভিডিও ধারণ করতে পারব। আমি মজা করলাম।টেলিভিশনে প্রথমে বড় বড় ব্র্যান্ড ছিল, তারপর এল ছোট ব্র্যান্ড, আর এখন অনলাইন ভিডিও আসার পর অতিক্ষুদ্র ব্র্যান্ডও দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আপনি ভাবতে পারেন, এখন স্কুলে পড়া ক্যাথলিক শিশুদেরও নেটওয়ার্ক রয়েছে। কী আশ্চর্য! কিন্তু এভাবেই অর্থনীতি কাজ করছে। এটা এখন সম্ভব। এবং এখন খুব কম খরচেই এসব কন্টেন্ট তৈরি করা যায় এবং আপনি তা উঁচু সিপিএম (প্রতি মিনিট/ হাজারে মূল্য) বিক্রিও করতে পারবেন। কারণ বিষয়টা যেমন নির্দিষ্ট, এর শ্রোতা-দর্শকও তেমন নির্দিষ্ট।
প্রথম আলো: আপনি বলছেন, সংবাদপত্র শিল্প বা সংবাদমাধ্যমে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে? আপনি কী ধরণের পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন?
আর্ল জে. উইলকিনসন: এটা অনেকটা এমন কল্পনা, যেখানে আপনি দেখছেন যে আপনার সন্তান যে নয় বছরের এক শিশু এবং ২৪ বছর পরে সে কেমন হবে। এই কল্পনা সত্যিই খুব কঠিন। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে শুধুমাত্র সংবাদ প্রতিষ্ঠান (নিউজ কোম্পানি) থাকবে। কোনো সংবাদপত্র নয়, ম্যাগাজিন নয়, টিভি চ্যানেল নয়, সবই হবে নিউজ কোম্পানি। টিভি চ্যানেলগুলো সে পথেই হাঁটছে, তাদের ওয়েবসাইট আছে। তাদের কেউ কেউ হয়তো মুদ্রণশিল্পে প্রত্যাবর্তন করতে পারে। কেন নয়? আমার মনে হয়, ছাপার সংবাদপত্রগুলো আরও বেশি করে ভিডিও সংশ্লিষ্ট হতে চলেছে। তারা আরও বেশি করে পড-কাস্টের দিকে ঝুঁকছে। আমার ধারণা, আপনি এফএম রেডিওর শেষ আর ডিজিটাল রেডিওর উত্থান দেখতে চলেছেন। কাজেই আবারও মূল প্রশ্ন- সাংবাদিকতার ভবিষ্যতের প্রশ্নেই ফিরে যেতে হচ্ছে আমাদের। এটা একটা বাস্তুসংস্থান, যা পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং আপনাকেও হয়তো গল্প বলার ভঙ্গিতে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে, তবে সাংবাদিকতার মূল বিষয়গুলো একই থেকে যাবে।
প্রথম আলো: আপনি বলতে চাইছেন, এটা আসলে একটা বহুমাত্রিক প্লাটফর্ম হতে চলেছে?
আর্ল জে. উইলকিনসন: অবশ্যই। আমি বুঝতে পারি না, কীভাবে কোনো একটা সংবাদমাধ্যম একমুখী কার্যক্রম নিয়ে ভবিষ্যতে টিকে থাকবে?
প্রথম আলো: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন বহু সংবাদ সংস্থার জন্য সংবাদ, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংবাদ তৈরি করছে, এর মধ্যে যেমন টিভি চ্যানেলগুলো রয়েছে, একইভাবে রয়েছে সংবাদ সংস্থা - ব্লুমবার্গ, রয়টার্সও। আপনি কি একে সৃজনশীল সাংবাদিকতার জন্য কোনো হুমকি বা বড় কোনো চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন?
আর্ল জে. উইলকিনসন: আমি আসলে জানি না। দেখেন, এটা একটা গভীর প্রশ্ন। আপনি কন্টেন্ট প্রস্তুতের পুরো বিষয়টার দিকে তাকান, এবং বলেন, এর কত শতাংশ বৈশ্বিক? যদি তা শতভাগ হয়, এবং এখানে একটা বৃত্ত থাকে, তাহলে সংবাদের তা কত শতাংশ। আমার সংবাদের কত শতাংশ - বিশেষ করে খেলাধুলার স্কোর আমাদের হিসাব করা? আমি বলতে চাইছি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা কি চাই না, সেগুলো যেভাবেই সম্ভব হয়ে যাক? একটা কম্পিউটার বা সফটওয়্যার যদি কাজটা আরও ভালো, বেশি করে কম সময়ে করে দিতে পারে, তাহলে কি আমরা তা করতে দেব না? বিষয়টা কোনোভাবেই নেতিবাচক বলে আমি মনে করি না। বরং আমি মনে করি, এটা ভালোই এবং আপনি জানেন, আমি কখনোই বার্তাকক্ষের উৎপাদনের ক্ষেত্রে পণ্য এবং মুল্যের বিষয়টা বিশ্লেষণ করিনি। এটা একটা ভালো প্রশ্ন। সব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই মানুষের কাজ বুঝে নিচ্ছে এবং পণ্যও এর অংশ। এটা অনেকটা উবারের প্রেক্ষাপটের মতো, যেখানে চালকহীন গাড়ি বনাম চালকওয়ালা গাড়ি, জিপিএস বনাম উবার, যেখানে আপনাকে কাঙ্খিত স্থানে নিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন। এটা কি খুব খারাপ যে, আমরা ওই চালকদের দূর করে দিচ্ছি? গ্রাহকদের জন্য তো নয়ই।
প্রথম আলো: কিন্তু শেষবধি মানুষের স্পর্শ তো রয়েই যাবে।
আর্ল জে. উইলকিনসন: অবশ্যই, মানুষের স্পর্শ রয়েই যাবে। তবে তা আরও বেশি মূল্যবান বিষয়ের ওপর আলোকপাত করবে, যেসব বিষয়ে বিচার-বিবেচনা প্রয়োজন, যেসব বিষয়ে মতামত প্রয়োজন, যেসব বিষয়ে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন