জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন তিনি। পরে আইন, লোকপ্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দেশি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ২০০৬ সালে সচিব হিসেবে অবসরে যাওয়া রিয়াজুল হক কিছুকাল বার কাউন্সিলের ‘লিগ্যাল অ্যাডুকেশন অ্যান্ড টেইনিং ইনস্টিটিউটেরর নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এর পর কয়েক বছর ধরে মানবাধিকার কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে তার মুখোমুখি হন নিউজবাংলাদেশের স্টাফ রিপোর্টার সোহাগ শাকিল। কথা বলেন মানবাধিকারসহ নানা বিষয়ে।
নিউজবাংলাদেশ: মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের চলমান সংকটের সমাধান কিভাবে হবে? বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কি করণীয় বলে আপনি মনে করেন?
কাজী রিয়াজুল হক: বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যু একটা বিরাট সংকট। এটা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্য যেমন সমস্যা তেমনি আমাদের জন্যও সমস্যা। এর সমাধানের উপায় আমি মনে করি, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড চাপ রাখেতে হবে মিয়ানমার সরকারের ওপরে। একই সঙ্গে চাপ রাখেতে হবে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর ওপর, যাতে তারা মিয়ানমার সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করতে পারে। এটার জন্য আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটা মিশন তৈরি করতে পারে। সেই মিশনটা মিয়ানমারে যাবে, মিয়ানমারে গিয়ে কথাগুলো বলবে, তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করবে তাদের কথাগুলো বলবে বোঝানোর চেষ্টা করবে যে এটা মিয়ানমারের সমস্যা মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে। মিয়ানমারকেই তাদের স্বীকৃতি দিতে হবে।
মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের মানবিক অধিকার এবং সুযোগ সুবিধাগুলো দিতে হবে। কারণ মিয়ানমারের লোক হিসেবে তাদের এসব ভোগ করার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। আর আমাদের দেশের জন্য নতুন কোনো লোককে নেয়া বা আমরা যদি এখন বর্ডার খুলে দিই যে নতুন লোকগুলো আসবে এই লোকগুলো আসার ফলে আমাদের দেশে যে লোকগুলো বর্তমান আছে আমাদের এখানে আনডকুমেন্টরি প্রায় পাঁচলাখ রোহিঙ্গা আছে। আর ডকুমেন্টরি প্রায় ৩০/৩৫ হাজার রোহিঙ্গা আছে। তো এদেরসহ আমাদের ওই অঞ্চলে যারা বাংলাদেশি আছে তাদের প্রত্যেকেরই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে। তাদের খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থানসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হবে। এ কারেণে আমি যেটা মনে করি, যারা অলরেডি আমাদের দেশে ঢুকে পড়েছে কোনো না কোনোভাবে তাদের প্রতি যতটুকু সম্ভব আমাদের মানবাধিকার প্রদর্শন করতে হবে এবং তাদের সঙ্গে দ্রুত সংযোগ যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে, যেন তাদের আমরা দ্রুত পাঠিয়ে দিতে পারি। মিয়ানমার সরকারকে যেন আমরা বাধ্য করতে পারি, যেন তাদের দ্রুত ফেরত নেয়।
নিউজবাংলাদেশ: অং সান সূচির ভূমিকাকে কীভাবে দেখছেন?
কাজী রিয়াজুল হক: সত্য কথা বলতে কি আমরা হতাশ হয়েছি অং সান সূচির প্রতি আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। সাউথ এশিয়ার মধ্যে উজ্জ্বল শান্তিকামী মানুষ হিসেবে তার একটা অবস্থান ছিল। কিন্তু এবারের এ ঘটনায় যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে মিয়ানমারের এ রোহিঙ্গাদের ওপরে, সেক্ষেত্রে তার নীরবতা আমাদের প্রচণ্ডভাবে হতাশ করেছে। আমার জানি না এর পেছনে কারণ কি। আমরা আশা করব, অন্তত তার যে সুনাম তিনি এতোদিন ধরে অর্জন করেছে সেটা বজায় রাখবেন, মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে যেহেতু তিনি নিজেও মানবাধিকারের ভিকটিম ছিলেন। তাই একজন ভিকটিম হিসেবে তিনিই ভালো বুঝতে পারবেন যে আসলে সমস্যাটা কি। তাকে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে হবে, তাকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। তিনি এখন কেউ না এটা বলে পার পেতে পারেন না। তো সে জন্য তার এই নীরবতা বা দুর্বলতা বা মিয়ানমারে যেভাবে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে এই লঙ্ঘনের দায় থেকে তিনি নিজেকে মুক্ত করতে পারেন বলে আমার মনে হয় না। আমরা আশা করি, অং সান সূচি সাহসী ভূমিকা পালন করবেন কোনো ভয়ে ভীত না হয়ে, মানবাধিকার কর্মী হিসেবে এদের পাশে এসে দাড়াক। তাহলে মিয়ানমারের এই সমস্যার সমাধান দ্রুততার সঙ্গে হবে, যেহেতু তিনি এখন সরকারে আছেন।
নিউজবাংলাদেশ: আপনি দায়িত্ব নেয়ার পর এখন পর্যন্ত মানবাধিকার পরিস্থিতির কি চিত্র পেয়েছেন?
কাজী রিয়াজুল হক: আমরা দায়িত্ব নেয়ার পরে মানবাধিকার পরিস্থিতির বেশ কিছু বড় বড় ঘটনা ঘটেছে। যেমন আমাদের আসার আগেই হলি আর্টিজানে বিদেশিসহ এতগুলো মানুষকে নির্মমভাবে জঙ্গিরা যে হত্যা করলো এটা মানবাধিকারের একটা চরম লঙ্ঘন। এটার সঙ্গে সঙ্গে এই জঙ্গিরা আরো কিছু ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেছে। শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে তারা ঢুকে পড়ছিল প্রায়, যেটা আমাদের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতার কারণে ঠেকানো গেছে। এটা একটা বিরাট দুর্ঘটনা হতে পারতো।
তারপর আমরা আসার পরে যে ঘটনাগুলো হলো বিশেষ করে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরে এবং গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপরে যে ঘটনাগুলো ঘটলো, এগুলো অনাকাঙ্খিত। এটা সরকারের ভাবমূর্তিকে প্রচণ্ডভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ অনেক আগে থেকেই একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দল এবং বঙ্গবন্ধুর গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগ যারা বিশ্বে প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত তারা ক্ষমতায় থাকতে এসব ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমি মনে করি, দুটো ঘটনার পেছনে কিছু স্বার্থন্বেষী মহলের ভূমিকাটাই এখানে বড়। এ ঘটনাগুলো যে রাষ্ট্রীয় মদদে হয়েছে এটা আমি বলব না। আমি যেটা বলব, ওই স্বার্থন্বেষী কিছু ব্যক্তির প্রভাব ওই স্থানীয় প্রশাসনের ওপরে পড়েছে, যার ফলে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন অনেকটা নীরব বা কারো কারো মতে তারা হামলাকারীদের সহায়তার ভূমিকা পালন করেছে। এটা তারা গর্হিত কাজ করেছে, এটা শুধু তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেনি সরকারি কর্মচারী হিসেবে তাদের যে দায়িত্ব তা তো পালন করেইনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সঙ্গে তারা গুরুতর অপরাধও করেছে। তো সেই জন্যে তাদের বিরুদ্ধে শুধু বিভাগীয় শাস্তিই যথেষ্ট নয়, তাদের ফৌজদারি বিচারের আওতায় এনে আদালতের কাছে সোপর্দ করতে হবে এবং আদালত যেভাবে ভালো মনে করবে সেভাবে ব্যবস্থা নেবে।
নিউজবাংলাদেশ: হঠাৎ করে এসব সাম্প্রদায়িক হামলার কারণ কি?
কাজী রিয়াজুল হক: এটাতো খুব পরিষ্কারই বোঝা যাচ্ছে, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ঘটনা আপনি দেখেন এটা একটা পরিকল্পিত ঘটনা। যেটা হলি আর্টিজানে হলো যেটা শোলাকিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘটানোর চেষ্টা করেছে। একাত্তরের সেই পরাজিত শক্তি, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতা করেছে যারা এখনো আমাদের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারছে না, তারা এখনো বিভিন্ন জায়গায় গোপনে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে যাচ্ছে। এটা তাদেরই কাজ। বাংলাদেশ এখন একটা উন্নয়নের ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন একটা উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সামাজিক নিরাপত্তার বলয় সবকিছুর জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে সমাদৃত হয়েছে। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে এ উন্নয়ন কার্যক্রমকে ব্যাহত করা এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশ্বের দরবারে ক্ষুণ্ণ করার একটা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সাম্প্রদায়িক এসব হামলা ঘটেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে যারা বিশ্বাস করে না যারা মৌলবাদে বিশ্বাস করে তাদের একটা অংশ এই কাজাট করেছে বলে আমি মনে করি।
নিউজবাংলাদেশ: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে বছরের শুরুতে আপনি উদ্যোগ প্রকাশ করেছিলেন। এখন কি অবস্থা দেখছেন?
কাজী রিয়াজুল হক: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা অতিসম্প্রতি দেখা যায়নি। তবে ইতিপূর্বে ঘটা এসব ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে যদি কারো মৃত্যু ঘটে সে দায়িত্ব কিন্তু বাহিনীকে নিতে হবে। সেটা কিন্তু ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবে না। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন কাউকে নিয়ে যায় তখন সে তাদের সম্পত্তি হয়ে যায়। তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাদের প্রটেকশনের দায়িত্ব কিন্তু তাদের। কারণ প্রত্যেকটা মানুষের মানবিক অধিকার পাবার অধিকার রয়েছে। তার সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, তার মানবিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে তার সম্মানের ক্ষতি করা হচ্ছে এবং তার জীবন পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। ইতিপূর্বে এমন ঘটেছে। এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো বেশি সজাগ হতে হবে। তাদের চিন্তা করতে হবে যে জণগণের পয়সায় তাদের বেতন দেয়া হয়। জনগণের একটা আশ্রয়ের স্থল হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের কাছে জনগণের যে প্রত্যাশা সেটা থেকে তারা যদি বঞ্চিত হয় তাতে শুধু তারাই আহত হয় না সারা বিশ্বের মানুষ আহত হয়। অবশ্যই এ বিষয়ে তাদের সতর্ক হতে হবে। এ রকম আগামীতে ঘটুক আমরা চাই না। আর যদি ঘটে যারা এর সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা সরকারকে নিতে হবে সে যেই হোক না কেন।
নিউজবাংলাদেশ: মানবাধিকার কর্মীরা কি এখন দেশে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে?
কাজী রিয়াজুল হক: বর্তমানে মানবাধিকার কর্মীরা তুলনামূলকভাবে অনেকটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে বলে আমি মনে করি। তেমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি যে মানবাধিকার কর্মীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে ধামকি দেয়া হচ্ছে। বিক্ষিপ্তভাবে হয়তো দুয়েক ঘটনার অভিযোগ এসেছে যা অতি নগণ্য। প্রতিদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মানবাধিকার কর্মীরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে তুলে ধরছে। আমার তো মনে হচ্ছে না কোনো সমস্যা হচ্ছে বা তাদের চাপিয়ে রাখা হচ্ছে। তারা তো তাদের কাজ করে যাচ্ছে। মনে তো হয় না...সরকারের পক্ষ থেকে নজরদারি হয়তো কিছুটা থাকতে পারে কিন্তু কড়াকড়ি ঠিক এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে না।
নিউজবাংলাদেশ: সংবিধানে মানবাধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া স্বত্ত্বেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো প্রতিনিয়তই ঘটছে কেন?
কাজী রিয়াজুল হক: হ্যা আমাদের সংবিধানের মূল বিষয়গুলো যদি আপনি দেখেন, সেখানে আমাদের মানবাধিকারে কথা বলা হয়েছে। মানবাধিকার মানে মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার। বর্তমানে কিছু কিছু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে এটা ঠিক। যেমন এই যে, সরকারের ১০ টাকা কেজি চাল দেয়া হচ্ছে। খবরের কাগজ খুললে দেখা যাচ্ছে, এটি নিয়ে দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে। রাষ্ট্র বা সরকার যে ভালো উদ্যোগগুলো নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বা কর্মচারীদের কারণে সেই উদ্যোগটা সফল হচ্ছে না। এতে মানুষ তার অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সাংবিধানিক প্রতিশ্রতিগুলো পালনের জন্য সরকার চেষ্টা করছে কিন্তু সেই চেষ্টাটা সম্পূর্ণভাবে সফল হচ্ছে না একশ্রেণীর মানুষের জন্য। এদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিউজবাংলাদেশ: সম্প্রতি নারী নিগ্রহের ঘটনাগুলো বেড়েই চলেছে কেন? এ ঘটনাগুলো কমিয়ে আনার উপায় কি?
কাজী রিয়াজুল হক: হ্যা আজকাল আমরা নারী নিগ্রহের বেশ কিছু ঘটনা দেখতে পাচ্ছি। নারী এবং শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। সরকার কিন্তু এ জন্য অনেকগুলো আইন করেছে। অনেক প্রচেষ্টার পরেও আমরা এগুলো বন্ধ করতে পারছি না। আমি মনে করি, এর পেছনে দুটো কারণ আছে। আমাদের আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুর্বলতা এবং অস্বচ্ছতা। ঠিক তেমনিভাবে আমাদের সমাজের মানুষেরও এ ব্যপারে আরো বেশি সচেতন হওয়া উচিৎ। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে যে এগুলো চলবে না। সবাই এগিয়ে আসলে দুটো লাভ- একটা হলো সরকারের ওপর একটা চাপ থাকে, আর একটা হলো শক্তিশালী হয়। সমাজের দরিদ্র মানুষদের অসহায় মানুষদের মূল ধারায় নিয়ে এনে তাদের শক্তিশালী করতে হবে। তাদর কণ্ঠকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। এগুলোর মাধ্যমে আমি মনে করি যে এগুলো কমে আসবে। একটা মানুষ তার স্ত্রীকে মারছে কেউ তার কাজের লোককে মারছে। এদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। সামাজিক আন্দোলনটা আমার মনে হয় আমাদের দেশে এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক আন্দোলন এবং সরকারি প্রচেষ্টা দুটো একত্রিত হয়ে এবং মিডিয়া, মানবাধিকার সংগঠন, এনজিওসহ সবাইকে এ ব্যাপারে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে হবে বলে আমি মনে করি।
নিউজবাংলাদেশ: মেয়েদের সর্বনিম্ন বিয়ের বয়স ১৮ তবে বিশেষ ক্ষেত্রে তা শিথিলের সুযোগ রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৬ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। আইনটি পাস হলে কি তা বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে?
কাজী রিয়াজুল হক: এ আইনের মাধমে বাল্যবিবাহ কমিয়ে আনার যে গতিটা ছিল তা কমে আসতে পারে। কারণ এখানে বিশেষ বিবেচনার যে বিষয়টি আছে এটার অপব্যবহার হতে পারে। সরকারের যতই সদিচ্ছা থাকুক এ বিশেষ বিবেচনা রাখার বিষয়ে এক শ্রেণির অসৎ মানুষ এর অপব্যবহার করতে পারে। মেয়েরা ঘরের বাইরে আসুক পড়াশুনা করুক নিজের পায়ে দাড়াক এ বিষয়গুলো যারা মেনে নিতে পারছে না তারা এ আইনটির অপপ্রয়োগ করার চেষ্টা করবে, সেখানে আমাদের আশঙ্কা। এ জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে, বিশেষ বিবেচনার বিষয়টি মনে হয় রিভিজিট করা দরকার।
নিউজবাংলাদেশ: বর্তমানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে কিভাবে মূল্যায়িত করবেন?
কাজী রিয়াজুল হক: তূলনামূলকভাবে অনেক বেটার পজিশনে আছি বলে আমাদের কাছে মনে হয়। আমরা প্রতিদিনই তো অনেক ধরনের অভিযোগ পাই। তবে আমরা কলমে কাগজে লিখতে পারছি না এ রকম কোনো অভিযোগ তো আমরা পাই না।
নিউজবাংলাদেশ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন