গাজায় ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের তথ্যানুসারে, ১০ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েল অন্তত ২৮২ বার যুদ্ধবিরতি ভেঙেছে- আকাশপথ ও স্থল হামলা, গোলাবর্ষণ এবং সরাসরি গুলিবর্ষণের মাধ্যমে। এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ২৪২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬২২ জন আহত হয়েছেন।
গাজা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল ৮৮ বার সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে, ১২ বার আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়েছে, ১২৪ বার বোমা বর্ষণ করেছে, এবং ৫২ বার ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে। এছাড়া ২৩ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এইসব হামলার পাশাপাশি ইসরায়েল গাজার ওপর মানবিক সহায়তা অবরোধ ও অবকাঠামো ধ্বংস অব্যাহত রেখেছে।
যুদ্ধবিরতির শর্তাবলি: গত ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনার অধীনে এই যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়। এই প্রস্তাবে কোনো ফিলিস্তিনি প্রতিনিধির অংশগ্রহণ ছিল না। পরিকল্পনার প্রথম ধাপে বলা হয়: ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষের সব ধরনের আক্রমণ বন্ধ করতে হবে;
ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ গাজায় সবধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে;গাজায় বন্দী থাকা সব ইসরায়েলিকে মুক্ত করতে হবে, জীবিত বা মৃত যেই হোক না কেন; ইসরায়েলের কারাগারে আটক থাকা প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে হবে এবং ইসরায়েলি বাহিনীকে ‘ইয়েলো লাইন’ পর্যন্ত পিছু হটতে হবে।
১৩ অক্টোবর মিশর, কাতার ও তুরকির মধ্যস্থতায় প্রায় ৩০টি দেশের প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সইয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তবে ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিল, যা এই চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির পরের ৩১ দিনের মধ্যে ২৫ দিনই ইসরায়েল গাজায় হামলা চালিয়েছে। অর্থাৎ, মাত্র ছয় দিন গাজায় কোনো সহিংসতা বা প্রাণহানি ঘটেনি। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে যাচ্ছে যে ‘যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর আছে’।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ২৪২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ ও ২৯ অক্টোবর ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন। এই দুই দিনে ১৫৪ জন প্রাণ হারান।